নয়াদিল্লি, 4 মার্চ : ‘বাংলার আসল বাঘিনী’ তিনিই ৷ আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর সাফল্য বাঘিনীর গর্জনের মতোই হবে ৷ এনিয়ে অত্যন্ত আশাবাদী উদ্ধব ঠাকরের দল ৷ বৃহস্পতিবার দলের হয়ে টুইটারে ‘কলম’ ধরেন শিবসেনার মুখপাত্র সঞ্জয় রাউত ৷ সাফ জানিয়ে দেন, পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ও তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসের পাশেই রয়েছেন তাঁরা ৷ সঞ্জয়দের মতে, বাংলার এবারের ভোট কার্যত দিদি বনাম বাকিদের লড়াইয়ে পরিণত হয়েছে ৷ আর এই লড়াইয়ে মমতাই শেষ হাসি হাসবেন বলে মত শিবসেনা নেতৃত্বের ৷
শিবসেনার সঙ্গে বিজেপির সম্পর্ক আপাতত সাপে-নেউলে হলেও রসায়নটা কিন্তু বরাবরই এমন ছিল না ৷ বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ-র অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শরিক ছিল শিবসেনা ৷ সেই সম্পর্কের সুতো ছেঁড়ে 2019-এ ৷ মহারাষ্ট্র সরকারের গদি দখলে রাখতে গিয়ে কার্যত সম্মুখ সমরে নামে বিজেপি-শিবসেনা ৷ শেষমেশ তাতে জয় উদ্ধবের দলের ৷ আর তারপর থেকেই শুরু হয় কট্টর বিজেপি বিরোধিতা ৷ কংগ্রেসের হাত ধরে মহারাষ্ট্রের ক্ষমতা দখল করে শিবসেনা ৷
এই পরস্থিতিতে গোটা দেশে বিজেপি বিরোধিতার অন্য়তম মুখ মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়কে শিবসেনার সমর্থন জাতীয়স্তরে নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ ৷ কিন্তু বাংলার মাটিতে তার গুরুত্ব কী ? রাজ্য়ের বর্তমান প্রেক্ষাপট বলছে, লড়াই মূলত তৃণমূল বনাম বিজেপির হলেও ভোট কাটাকাটির অঙ্কে রয়েছে অসংখ্য সূক্ষ্ম হিসাব ৷ ইতিমধ্যেই বাম-কংগ্রেসের হাত ধরে মাঠে নেমেছে আব্বাস সিদ্দিকীর ইন্ডিয়ান সেকুলার ফ্রন্ট (আইএসএফ) ৷ রাজনীতি নিয়ে কাটাছেঁড়া করা যাঁদের কারবার, তাঁদের অনেকেই বলছেন, বিজেপির হিন্দু তাসের জবাব ইসলামি আবেগ দিয়ে দিল বিরোধী জোট ৷ এতে সংখ্যালঘু ভোটব্য়াঙ্কের হিসাবে বেশ খানিকটা রদবদল হবে বলেই মনে করা হচ্ছে ৷ আর তাতে মমতার মুসলিম ভোট কমবে কি না, কিংবা বামেদের হিন্দু ভোট বিজেপির দিকে যাবে কি না, এসব নিয়ে শুরু হয়েছে জোর জল্পনা ৷
এমতাবস্থায় বিজেপিবিরোধী একাধিক শক্তি পক্ষ বাছতে ব্য়স্ত ৷ ইতিমধ্যেই তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন জানিয়েছেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ার ৷ আর এবার আর এক মারাঠী শক্তিও সমর্থন জানাল মমতাকে ৷ তবে এই দুই দলের সমর্থন এ রাজ্য়ে আদৌ কতটা কাজে দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই পারে ৷ বাংলায় নাম কা ওয়াস্তে শিবসেনার সংগঠন থাকলেও ভোটের মঞ্চে তার উপস্থিতি নেই বললেই চলে ৷ অন্যদিকে, এ রাজ্যে এনসিপিরও কোনও প্রভাব নেই ৷ তাই খাতায় কলমে এমন সমর্থন বিজেপি বিরোধিতার সুর চড়ালেও তাতে ইভিএমের ফলে বিশেষ কিছু রদবদল হবে বলে মনে হয় না ৷
এদিকে, এরই মধ্যে কলকাতায় এসে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গে বৈঠক সেরে গিয়েছেন লালুপুত্র তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব ৷ সূত্রের খবর, এবারের নির্বাচনে পাঁচটি আসনে লড়তে পারে তাঁদের দল ৷ সেক্ষেত্রে মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়ের সঙ্গে আসন সমঝোতা করতে পারেন তেজস্বী ৷ মনে করা হচ্ছে, গত রবিবারের বৈঠকে মূল আলোচ্যও ছিল সেটাই ৷ তবে তেজস্বী নিজে এনিয়ে এখনও কোনও ঘোষণা করেননি ৷ তিনি যে বিজেপি বিরোধিতায় অবিচল থাকবেন, সেকথা স্পষ্ট করলেও লড়াইয়ের ময়দানে কার হাত ধরে এগোবেন, তা খোলসা করেননি ৷