পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

Congress President Election: শশীর হাত ধরে কি কাটবে কংগ্রেসের আঁধার নিশি, গেহলত কতটা ভালো পাইলট? - candidates for congress president

দীর্ঘদিন বাদে নতুন সভাপতি পাচ্ছে কংগ্রেস । তা-ও আবার ভোটের মাধ্যমে ঠিক হতে পারে সভাপতির নাম । সোনিয়া-উত্তর জমানায় কংগ্রেসের ভার কার হাতে থাকবে তা নিয়ে দুটি নাম শোনা যাচ্ছে - অশোক গেহলত এবং শশী থারুর ।

Etv Bharat
শশীর হাত ধরে কি কাটবে কংগ্রেসের আধার নিশি, গেহলত কতটা ভালো পাইলট?

By

Published : Sep 20, 2022, 5:11 PM IST

Updated : Sep 20, 2022, 5:24 PM IST

নয়াদিল্লি, 20 সেপ্টেম্বর:নতুন সভাপতি পেতে চলেছে কংগ্রেস । গত লোকসভা নির্বাচনের পরাজয়ের পর থেকে অস্থায়ী সভাপতির নেতৃত্বে কংগ্রেস পরিচালিত হচ্ছে । কিন্ত এখন মোটের উপর নিশ্চিত নতুন সভাপতি আসতে চলেছেন। তাঁর অভিভাবকত্বেই 2024 সালের লোকসভা নির্বাচনে লড়বে শতাব্দী প্রাচীন দলটি । সেই পদে কে বসতে চলেছেন তা নিয়ে রয়েছে একাধিক চমক ।

শোনা যাচ্ছে রীতিমতো ভোটের লড়াইয়ে ঠিক হবে নতুন সভাপতির নাম । রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী অশোক গেহলতের সঙ্গে সম্মুখসমরে অবতীর্ণ হতে পারেন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শশী থারুর । শুধু তাই নয় আরও দরকারি খবর এই যে নির্বাচনে লড়ার ব্যাপারে নাকি শশীকে সম্মতি দিয়েছেন সোনিয়া গান্ধি । গত 20 বছর ধরে কংগ্রেসের ব্যাটন সোনিয়ার হাতে রয়েছে । এখন তিনি কার্যনির্বাহী সভাপতি । এর আগে পূর্ণ সময়ের সভাপতি হিসেবে ছিলেন দীর্ঘদিন । 2019 সালের লোকসভা নির্বাচনের বছর দু'য়েক আগে ছেলে রাহুলের হাতে দলের ভার ছেড়ে দেন । তবে নির্বাচনে পরাজয়ের দায় নিয়ে পদ ছেড়েছেন রাহুল । সাংসদ হিসেবেই দলের কাজ করছেন । তবে তাঁর নেতৃত্বেই 'ভারত জোড়ো যাত্রা' করছে কংগ্রেস । কিন্ত এর আগে একাধিকবার রাহুল জানিয়েছেন দলের রাশ নতুন করে হাতে নেওয়ার অভিপ্রায় নেই তাঁর । যদিও কংগ্রেসের রাহুল ব্রিগেড তাঁকেই সভাপতি হিসেবে চায় । এরকমই জটিল পরিস্থিতির মধ্যে দীর্ঘদিন বাদে ভোট হবে কংগ্রেসের মসনদের জন্য ।

আরও পড়ুন:করোনা অতিমারীর পর 24 ঘণ্টায় যাত্রী চলাচলে রেকর্ড মুম্বই বিমানবন্দরে

প্রধানমন্ত্রী থেকে বিজেপির মণ্ডলের নেতা সকলেই কংগ্রেসকে আক্রমণ করতে গান্ধি পরিবারকে বেছে নেন । তাঁরা বলেন, কংগ্রেস মানেই গান্ধি । বিভিন্ন সভা থেকে বিজেপির কোনও কোনও নেতা এও বলেছেন কংগ্রেসের শীর্ষনেতারা গণতন্ত্রের প্রতি আস্থাশীল হলে পাঁচ বছরের জন্য সভাপতি পদে এমন কাউকে বসান যাঁর পদবী গান্ধি নয় । এবার হয়ত হতে চলেছে সেরকমটাই । শশী থারুর এবং অশোক গেহলতের মধ্যে মিল খুব বেশি নেই । দু'জনেই কংগ্রেসের বড় নেতা এবং দু'জনেই আলাদা আলাদা করে গান্ধি পরিবারের ঘনিষ্ঠ - এই ধরনের সাধারণ কয়েকটি মিলের চেয়ে অমিলের সংখ্যাই বেশি । আর এই মিল এবং অমিলের মধ্যে খুঁজলেই পাওয়া যেতে পারে সবচেয়ে জরুরি প্রশ্নটির উত্তর । সভাপতি হিসেবে তাঁদের মধ্যে কে কতটা সফল হতে পারবেন, সেটারও আন্দাজ মিলতে পারে এই মিল এবং অমিলের মধ্যে লুকিয়ে থাকা সমীকরণের মধ্যে ।

আরও পড়ুন: গুজরাটের স্ট্যাচু অফ ইউনিটির থেকেও লম্বা রামের মূর্তি পাবে অযোধ্যা

লুটনিয়ান্স দিল্লিতে কান পাতালে শশী থারুরকে নিয়ে বেশ চমকে দেওয়ার মতো কয়েকটি গল্প শুনতে পাওয়া যায় । তার একটির ঘটনাস্থল নিউ ইর্য়কের একটি বিলাসবহুল হোটেল । কয়েকটি কাজে সে সময় সেখানে ছিলেন শশী । শোনা যায় তৎকালীন বাজপেয়ী মন্ত্রিসভার এক সদস্য শশীর সঙ্গে দেখা করেন । তাঁকে ওই হেভিওয়েট মন্ত্রী নাকি বলেছিলেন, "তোমার পদবী গান্ধি নয় । অতএব কংগ্রেসে তোমার তেমন কোনও সম্ভবনা নেই ।" কিন্তু সেই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন শশী । রাষ্ট্রসংঘে দীর্ঘদিন কাজ করার পর কংগ্রেসে যোগ দেন । সাংসদ হয়ে বিদেশ মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন । তবে মন্ত্রী থাকা এবং না থাকার গোটা পর্বটা জুড়ে বিতর্ক ছিল তাঁর নিত্য সঙ্গী । কংগ্রেস ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পরও বিতর্ক থারুর-সঙ্গ ত্যাগ করেনি । মন্ত্রী থাকাকালীন আইপিএলের দলের মালিকানা বা তৃতীয় স্ত্রী সুনন্দা পুস্করের মৃ্ত্যু- বারবার বিতর্ক বয়েছেন থারুর । বিরোধী আসনে বসে হিন্দু পাকিস্তান মন্তব্যের জন্য বিজেপির আক্রমণের মুখে পড়েছেন সেই কবে থেকে । জবাবও দিয়েছেন নিজের মতো করে ।

সামাজিক মাধ্যমে থারুর মানেই ব্রেকিং নিউজ । থারুর মানেই ভাইরাল । অতএব নেটপাড়ায় তাঁর অনুগামীর সংখ্যাও নেহাত কম নয় । কিন্তু প্রশ্ন এখানেই ৷ সামাজিক মাধ্যমে দারুণ জনপ্রিয় হলে কি ভোটের বাজারে কদর বাড়ে । উত্তর নেতিবাচক হওয়ার সম্ভবনাই বেশি । আর সেই দিক থেকে যায় বলা যায় যে হারিয়ে যাওয়া জনসংযোগ ফিরে পেতে রাহুলের নেতৃত্বে কংগ্রেস পথে নেমেছে সেটা থারুরের কতটা আছে? দেশের এক জনপ্রিয় সঞ্চালক একবার শশীকে খানিক কটাক্ষ করেই বলেছিলেন তাঁর ইংরাজি বুঝতে তো অভিধান লাগেই, হিন্দিও খুব সহজবোধ্য নয় । দেশের আপামর মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন আদৌও কতটা সম্ভব তাঁর পক্ষে সেটাই সবথেকে বড় প্রশ্ন । আর যদি গোড়াতেই গলদ থাকে তাহলে তাঁর হাত ধরে কংগ্রেস মহীরুহ হবে কোন যুক্তিতে ? এই প্রশ্নে অবশ্য থারুরকে হেলায় হারাবেন অশোক গেহলত ।

আরও পড়ুন: শশীকে সভাপতি পদে লড়ার সম্মতি সোনিয়ার, খবর কংগ্রেস সূত্র

ভারতের রাজনীতিতে জাতি সমীকরণ বড় ভূমিকা পালন করে থাকে । হিন্দি বলয়ের রাজনীতিতে জাতিগত সমীকরণের প্রভাব অনেকটাই । তাই দেখা যায় কোনও নির্দিষ্ট জনজাতির প্রভাব যে এলাকায় বেশি সেখান থেকে রাজ্য সরকার বা দলের রাজ্য শাখার প্রধানদের বেছে নেওয়া হয় । কিন্ত এই দিক থেকে অশোক সবার থেকে আলাদা । মালি জাতির এই নেতা তাঁর সম্প্রদায়ের একমাত্র বিধায়ক । মানে 200 আসনের রাজস্থান বিধানসভায় এক গেহলত ছাড়া মালি জাতির অন্য কোনও প্রতিনিধি নেই । তবু নিজের ক্যারিশমায় তিনিই মুখ্যমন্ত্রী । রাজনৈতিক মহল মনে করে মধ্যপ্রদেশের মতো রাজস্থানেও সরকার ফেলার চেষ্টা করেছিল বিজেপি । কিন্তু কংগ্রেসের সরকার মরু রাজ্যে যে আজও আছে তার কারণ এক এবং একমাত্র গেহলত । বিজেপির ঝড় রুখেছেন নিজের দক্ষতায় । একসময় রাহুলের ম্যান ফ্রাইডে দিল্লি এসে দলের দায়িত্ব নেবেন বলে শোনা গিয়েছিল, কিন্তু কাজের কাজ হয়নি । ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে যাদু দেখিয়ে দিন কাটত তাঁর । শোনা যায় কংগ্রেসের নেতা হওয়ার পর ছোট রাহুল- প্রিয়াঙ্কাকেও ম্যাজিকে মোহিত করতেন গেহলত । এই গল্প সত্যি হোক আর না হোক জনমানসের উপর গেলহতের যে যাদু করার ক্ষমতা আছে তা একাধিকবার প্রমাণিত ।

আরও পড়ুন: পিছু ছাড়ছে না সুকেশ মামলা, বারবার জেরায় জর্জরিত জ্যাকলিন

দু'জনের মধ্যে তুলনার আরেকটা বড় দিক আছে । তা হল আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট । একদিকে চিনের আগ্রাসন অন্যদিকে পাকিস্তানের পদক্ষেপ তো আছেই পাশাপাশি রাশিয়া বা আমেরিকার সঙ্গে ভারতের কৌশলগত অবস্থান কী হওয়া উচিত তা নিয়ে তর্কের অন্ত নেই । এই দিক থেকে ব্যাখ্যা করলে আন্তর্জাতিক ইস্যুতে নিজেদের অবস্থান ঠিক করতে কংগ্রেস নি:সন্দেহে থারুরের উপরেই ভর করতে চাইবে । মানে এখানে অ্যাডভান্টেজ শশী থারুর ।

প্রসঙ্গ যে শুধু এই দুটো তা নয় । সভাপতি না থেকেও দলে প্রবলভাবে আছেন রাহুল । তাঁকে পদে দেখতে চান এমন মানুষের সংখ্যাও নেহাত কম নয় । তাহলে শেষমেশ কী করবেন রাজীব-তনয়? সভাপতি হবেন নাকি শেষমেশ ভোটপর্বই বলে দেবে কংগ্রেসের নতুন মুখ কে? উত্তর জানে শুধু সময় ।

Last Updated : Sep 20, 2022, 5:24 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details