নয়াদিল্লি, 4 ফেব্রুয়ারি : কৃষকদের পাশে দাঁড়িয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছেন রিয়ানা, গ্রেটা থেকে শুরু করে কমলা হ্যারিসের ভাইঝি মীনা হ্যারিস । তবে কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে 'আন্তর্জাতিক হস্তক্ষেপ' মোটেও ভালোভাবে দেখছে না কেন্দ্র । বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র অনুরাগ শ্রীবাস্তব সেই নিয়ে এক বিবৃতিও জারি করেছেন । আর এই নিয়েই এবার কেন্দ্রকে একহাত নিলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন । সংসদে আজ তিনি বললেন, "কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে যে প্রতিক্রিয়া আসছে, তাতে আমরা স্পর্শকাতর হয়ে উঠছি । কিন্তু কে বলেছিলেন, আব কি বার ট্রাম্প সরকার? আর এখন আমরা বলছি অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ?"
এর আগে বিতর্কিত কৃষি আইনগুলি যখন সংসদে পাশ হয়, তখন তার বিরোধিতা করতে গিয়ে যেভাবে সাত জন সাংসদকে সাসপেন্ড হতে হয়েছিল, আজ সেই প্রসঙ্গও সংসদে তুলে ধরেন তিনি । রাজ্যসভায় বৃহস্পতিবার কৃষি আইন নিয়ে একযোগে সুর চড়ায় বিরোধী দলগুলি। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও'ব্রায়েন চাঁছাছোলা ভাষায় বলেন, ''সব ক্ষেত্রে দেশকে পরাজিত করেছে নরেন্দ্র মোদি সরকার । ঔদ্ধত্যের কারণে সংসদের মর্যাদা রক্ষায় ব্যর্থ কেন্দ্র । 2020 সালের 20 সেপ্টেম্বর কৃষকদের সমর্থনে দাঁড়ানো সাতজন সাংসদকে বরখাস্ত করা হয়েছিল...যে কৃষকরা মারা গিয়েছেন, তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে উঠে দাঁড়াচ্ছি ।''
কেন্দ্রকে তিনি উপদেশ দেন, "আগে দিল্লি সামলান, তারপর বাংলার কথা ভাববেন ।"
সংসদে কৃষক বিক্ষোভ নিয়ে কেন্দ্রকে একহাত নিলেন ডেরেক আরও পড়ুন : আব কি বার ট্রাম্প সরকার কে বলেছিলেন ?
সাধারণতন্ত্র দিবসে ট্র্যাক্টর ব়্যালির নামে যেভাবে রাজধানীর বুকে তাণ্ডব হয়েছিল, তার নিন্দায় সরব হয়েছিল প্রায় সকলেই । এমনকী সংযুক্ত কিষান মোর্চাতেও ফাটল ধরেছিল । একাধিক রাজনৈতিক দল, যারা বিগত দু'মাস ধরে কৃষকদের পাশে ছিল, তারাও সরে দাঁড়িয়েছিল । অনেকেই বলছেন, 26 জানুয়ারির ঘটনার পর কৃষক বিক্ষোভের ধার অনেকটাই কমে এসেছিল ।
গাজ়িপুর দিয়ে দিল্লি ঢোকার রাস্তায় কাঁটাতারের ব্যারিকেড একদিকে যখন কৃষক ঐক্যে ফাটল, বিগত দুই মাসের মধ্যে যখন সবথেকে দুর্বল জায়গায় দাঁড়িয়ে কৃষক আন্দোলন, তখন কৃষকদের দাবি-দাওয়াগুলিকে আরও নরম হাতে মোকাবিলা করার এবং বিরোধীদের কাছে নিজেদের ভাবমূর্তি স্পষ্ট করার সুবর্ণ সুযোগ ছিল কেন্দ্রের কাছে । কিন্তু 26 জানুয়ারির পর আরও কড়া হতে দেখা গেল কৃষকদের । বন্ধ করে দেওয়া হল আন্দোলনরত এলাকাগুলির ইন্টারনেট পরিষেবা । রাস্তায় ভেঙে পোতা হয় মোটা মোটা পেরেক । ব্যারিকেড করে দেওয়া হয় রাস্তা । গাজ়িপুর দিয়ে দিল্লি ঢোকার রাস্তা দেখে বোঝার উপায় নেই, সেটি ভারতের রাজধানীতে যাওয়ার রাস্তা নাকি ভারত-পাকিস্তান সীমান্ত ।
এরই মধ্যে আন্তর্জাতিক মহল থেকে সমর্থন আসতে শুরু করে কৃষকদের জন্য । পপ তারকা রিয়ানা কৃষক বিক্ষোভ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রতিবেদন তুলে ধরে টুইট করেন । প্রশ্ন তোলেন কেন আমরা এই বিষয়ে কথা বলছি না ! সরব হয়েছেন পরিবেশ আন্দোলনের পরিচিত মুখ গ্রেটা থুনবার্গ ৷ সদ্য নোবেলে শান্তি পুরস্কারে মনোনীত হওয়া গ্রেটা টুইটারে লেখেন, "আমরা ভারতের আন্দোলনরত কৃষকদের পাশে আছি ।"
রাস্তার উপর বসিয়ে দেওয়া হয়েছে মোটা মোটা পেরেক আরও পড়ুন : সংসদে নয়া কৃষি বিল আনুক কেন্দ্র, দাবি ডেরেক ও’ব্রায়েনের
কৃষকদের আওয়াজ পৌঁছে যায় হোয়াইট হাউজ়ের দোরগোড়া পর্যন্ত । আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিসের ভাইঝি মীনা হ্যারিস কৃষকদের পক্ষ নিয়ে সরব হয়েছেন । বিশিষ্ট ব্লগার অ্যাম্যান্ডা সেরনি থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মহলের অনেকেই পাশে দাঁড়িয়েছেন কৃষকদের ।
সারি সারি ব্যারিকেডে আটকে দেওয়া হয়েছে রাস্তা এদিকে ভারত সরকার যে কৃষকদের প্রতি নমনীয় সেই বার্তা দেওয়ার জন্যও উঠে পড়ে লেগেছে সাউথ ব্লক । বিদেশ মন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতি জারি করে বলা হয়, সোশাল মিডিয়ায় 'জনপ্রিয়তা' পাওয়ার জন্যই এই ধরনের টুইট করা হয়েছে । পাশাপাশি বিদেশমন্ত্রকের তরফে এও বলা হয়, তাঁদের মতো (রিয়ানা, গ্রেটা ও অন্যান্যরা) আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন মানুষরা যেন গোটা ঘটনা বুঝে ও সব তথ্য হাতে নিয়ে তবেই এই ধরনের মন্তব্য করেন ।
বিদেশি শক্তির বিরুদ্ধে ভারত যে এককাট্টা তা প্রমাণ করতে উঠে পড়ে লাগেন ভারতীয় তারকারাও । বলি তারকারা তো রয়েছেনই, এমনকী লতা মঙ্গেশকর, সচিন তেণ্ডুলকরের মতো তারকারাও টুইট করেন । সবার টুইটের শেষে দু'টি হ্যাশট্যাগ । ইন্ডিয়া টুগেদার (#IndiaTogether) এবং ইন্ডিয়া এগেইন্ট প্রোপাগান্ডা (#IndiaAgainstPropaganda) । আর এই হ্যাশট্যাগের সূচনা বলা যেতে পারে বিদেশমন্ত্রকের থেকে । রিয়ানাদের টুইটের পালটা দিতে গিয়ে যে বিবৃতি সাউথ ব্লক থেকে জারি করা হয়েছিল, তাতেও এই দু'টি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছিল । কোনও একজনের বিদেশি তারকার মুখ বন্ধ করাতে এই ধরনের হ্যাশট্যাগের ব্যবহার ভারতের ইতিহাসে বিরল ।
বিদেশমন্ত্রকের জারি করা বিবৃতির প্রতিলিপি, রয়েছে হ্যাশট্যাগও আরও পড়ুন : কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোয় বরখাস্ত করা হয়েছিল সাংসদদের, স্মরণ করালেন ডেরেক
এতদিন পর্যন্ত যাবতীয় বিক্ষোভ-আন্দোলন... সব ছিল কৃষক বনাম কেন্দ্র । 26 জানুয়ারির ঘটনার পর যেখানে কৃষকদের আন্দোলন দুর্বল হয়ে যাবে বলে অনেকে অনুমান করেছিলেন, তাঁদেরকে ভুল প্রমাণ করলেন কৃষকরা । এখন আন্দোলন আর কৃষক বনাম কেন্দ্র নয় । দেশের সীমানা পেরিয়ে তা পৌঁছে গিয়েছে আন্তর্জাতিক স্তরে । লড়াইটা যেন এখন হয়ে উঠেছে বিদেশি কলাকুশলী বনাম ভারতীয় কলাকুশলী ।