কলকাতা, 2 সেপ্টেম্বর : রাজ্যে শিল্পায়নের বার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ গতকাল পানাগড় শিল্পতালুকে "বেঙ্গল মিনস বিজনেস" (Bengal Means Business) শীর্ষক একটি অনুষ্ঠানে বেসরকারি বিনিয়োগে পলিফিল্ম কারখানার শিলান্যাস করেন তিনি ৷ সেখানে রাজ্যে একাধিক শিল্প বিনিয়োগের ঘোষণা করেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ এর তীব্র সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলের বামনেতা সুজন চক্রবর্তী ৷ কী বলছেন তিনি ?
রাজ্যে শিল্পায়নের প্রতিশ্রুতি
রাজ্যে শিল্প না হওয়ার ব্রত নিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ হবে কথার মানে কী ? 10 বছর ধরে তিনি মুখ্যমন্ত্রী ৷ এই সময়ে নতুন শিল্প কিছু হয়নি, বরং চালু শিল্প নষ্ট হয়েছে ৷ বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বানতলা লেদার কমপ্লেক্স নিয়ে গর্ব প্রকাশ করেছেন ৷ বামফ্রন্টের আমলে বানতলা লেদার কমপ্লেক্স তৈরির প্রচেষ্টার সময়ে আদাজল খেয়ে তার বিরোধিতা করেছে তৃণমূল কংগ্রেস ৷ সেই বানতলাকে দেখিয়ে শোকেস করে চলতে হচ্ছে তৃণমূল সরকারকে ৷ এই রাজ্য সরকার শিল্পের ক্ষেত্রে 1 ইঞ্চিও এগোতে পারেনি, ভবিষ্যতেও পারবে কি না সন্দেহ রয়েছে ৷ ওরা মানুষকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে রাখতে চায়, সেটাই আমরা দেখতে পাচ্ছি ৷
শুধু শিল্প নয় ৷ আরও কয়েকটি বিষয়ে তিনি রাজ্য সরকারের সমালোচনা করেছেন ৷
সিবিআই ও ইডির ভূমিকা
সিবিআই স্পেশ্যাল কোর্ট 5 জনকে সমন জারি করেছে ৷ বাকিদের তদন্ত চলছে, এখনও চার্জশিট পেশ করা হয়নি ৷ এর পরের দফায় হয়তো মুকুল রায়, শুভেন্দু অধিকারীর নাম রয়েছে ৷ মুকুল রায় মানে যিনি বিজেপির হয়ে জিতেছেন অথচ তৃণমূলের নেতা ৷ আর শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলের নেতা ছিলেন, এখন বিজেপির ৷ তৃণমূল থেকে বিজেপি আর বিজেপি থেকে তৃণমূল ৷ খালি চোখে মানুষ লুঠের টাকা নিতে দেখেছে, সেই টাকা গুনতেও দেখেছে ৷ এর পরেও সিবিআই আর ইডি কী গবেষণা করছে, তা জানি না ৷ অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়াটাই সিবিআই, ইডি, সরকারের দায়িত্ব ৷ রাজনীতির খেলায় অংশ নেওয়াটা এদের কাজ নয় ৷
বামফ্রন্ট আমলে তৈরি অন্ডাল বিমানবন্দর
অন্ডাল বিমানবন্দরকে আর্ন্তজাতিক রূপ দেওয়ার কথা বলছেন মুখ্যমন্ত্রী । আমরা সেটা চাইব ৷ পশ্চিমবঙ্গের অন্য 9 টি বিমানবন্দর চালুর দাবি জানিয়েছিলেন তিনি ৷ দুঃখ যে, তার কোনওটা চালু হয়নি । বামফ্রন্ট অন্ডাল বিমানবন্দরের জন্য কাজ করার সময়, তার বিরুদ্ধে চরম বিষোদগার করেছেন মুখ্য়মন্ত্রী ৷ অথচ বিমানবন্দরের একটি অংশ চালু হওয়ার মতো অবস্থায় রয়েছে ৷ আজ সেটা ভাঙিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে চলতে হচ্ছে ৷ মুখ্যমন্ত্রী যেগুলো করবেন বলেছিলেন, তার কোনওটাই করতে পারেননি ৷ অযথা কথা বলেন, প্লেয়িং টু দি গ্যালারি ৷
দেউচা-পাঁচামির কয়লাখনি
দেউরা-পাঁচামিতে কয়লাখনি রাজ্য সরকারকে দেওয়া হয়েছে ৷ রাজ্য সরকার এখান থেকে কয়লা উত্তোলন করবেন, ব্যবহার করবেন ৷ কিন্তু এটা 10 বছরের পুরনো খবর ৷ এই সময়ে রাজ্য সরকার কিছু করেনি ৷ বরং আমরা দাবি করেছিলাম, এটা বড় প্রকল্প, রাজ্যের জন্য জরুরি ৷ আমরা সবাই চাইছিলাম রাজ্যের এক্তিয়ারে আসুক ৷ তাহলে প্রয়োজনে সর্বদলীয় সভা করে সবাইকে জড়িয়ে রাজ্যের স্বার্থে এই প্রকল্পটা কার্যকরী করা যাবে ৷ রাজ্য সরকার তা করেনি ৷ দেউচা-পাঁচামির কাজ এগোচ্ছে কি না, তা কেউ জানে না ৷ প্রায় আড়াই-তিন বছর আগে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রীকে দেউচা-পাঁচামির উদ্বোধনের নিমন্ত্রণ জানাতে গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী ৷ সেই সময় রাজীবকুমারকে সিবিআই তাড়া করছিল ৷ আমার সন্দেহ এটা একটা রহস্য ৷
বিশ্বজিৎ দাসের তৃণমূল প্রত্যাবর্তন
উত্তর 24 পরগনার বাগদার বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাস তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরেছেন । বিজেপির টিকিটে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি তৃণমূল যোগ দিয়েছেন । যদিও তার এই দলবদলু চরিত্রের ইতিহাস 2016-তেও দেখা গিয়েছিল । দলবদল করার আগে বিধায়ক পদে ইস্তফা দিচ্ছেন না । এই দলত্যাগ নিয়ে আগেও সরব হয়েছি । গত বিধানসভায় সাড়ে 4 বছর ধরে এক বিধায়কের দলগত অবস্থান স্পষ্ট হয়নি । বারবার বলেও বিষয়টি শাসকদল এড়িয়ে গিয়েছে । যদি দলবদল করতেই হয়, তাহলে পদত্যাগ করার কথা কেন বলা হচ্ছে না । আদতে দল ভাঙানোর খেলা, যা দিল্লিতে দাদাভাই আর এ রাজ্যে দিদিভাই করে চলেছেন ৷