কয়েক দশক আগে থেকেই এই দেশে অটোমেশন তথা স্বয়ংক্রিয় মেশিনের ব্যবহার রয়েছে । মেশিনের দাপটে কীভাবে চাকরি চলে যাচ্ছে, তা দেখানো হয়েছিল প্রয়াত শ্রী বি আর চোপড়া পরিচালিত ‘নয়া দৌড়’ ছবিতে। প্রধান অভিনেতা পদ্মভূষণপ্রাপক শ্রী দিলীপ কুমার সেখানে ‘টাঙ্গাওয়ালা’-এর (টাঙ্গাচালক) ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন । এক গ্রামের ‘জমিদার’-এর পুত্র সেখানে টাঙ্গার পরিবর্তে একটি ‘বাস’ পরিষেবা চালু করে । সেই একটি বাস সেই গ্রামের সমস্ত ‘টাঙ্গাওয়ালা’-র জীবনযাত্রা ধ্বংস করে দেয় । তারপর, ছবির নায়ক, দিলীপ কুমার ছবিতে দেখান, কীভাবে মেশিন, গ্যাজেট এবং প্রযুক্তির সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য অদম্য লড়াকু মানসিকতা রাখতে হয় ।
এই চলতি প্যানডেমিকের জেরে, এখন ‘অটোমেশন’ কোভিড পূর্ববর্তী দিনগুলির থেকেও আরও দ্রুত কার্যকর হচ্ছে । যেমনটা আমরা সকলেই জানি, কোরোনা সংকটের জেরে বিশ্বজুড়ে অনেকেই তাদের চাকরি হারিয়ে ফেলেছেন । এর উপর অটোমেশনের ফলে চাকরির সংখ্যা আরও কমে গিয়েছে এবং আরও বেশি মানুষ কাজ হারিয়েছেন । তাছাড়াও দেখা গিয়েছে , অটোমোটিভ সেক্টরে রোবট ব্যবহারের বাড়বাড়ন্ত হয়েছে । এমনকী, রেস্তোরাঁগুলিও বেশি খরচ করে রোবট আনছে, মানুষ পরিচারকের জায়গায় যাতে শ্রমিকের সংখ্যা কমানো সম্ভব হয় । এমনকী কিছু কিছু স্কুলে তো রোবটদের শিক্ষক হিসাবে রেখে, বিষয় হিসাবে বিজ্ঞান এবং গণিত পড়ানো এবং পড়ুয়াদের টিউটোরিয়াল ক্লাস নেওয়ানোর পরিকল্পনা করছে।
একইভাবে, পরিষেবা জগত যেমন অর্থনৈতিক দালালি, অর্থনৈতিক গবেষণা, অর্থনৈতিক বাজার, বিমা সংস্থাগুলিও রোবট অর্থনৈতিক অ্যাডভাইসার্স প্রভৃতিতে বিনিয়োগ করছে । তাছাড়াও অটোমেশনে রোবট, চ্যাটবটের ব্যবহার হচ্ছে যেখানে গ্রাহকদের 24x7 উৎকর্ষতা এবং সময়মতো পরিষেবা প্রদান করা হচ্ছে। ব্লুমবার্গের কাছে যে চ্যাটবট রয়েছে, সেটি 24x7 কাজ করে গ্রাহকদের সমস্যা সমাধানের জন্য । অন্যান্য আরও নানা সংস্থাও এই অটোমেশনেই লগ্নি করার কথা ভাবছে ।
প্রাথমিকভাবে অটোমেশনের বৃদ্ধি মানব পুঁজির ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ ঝুঁকি হতে পারে । কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি ক্ষেত্রে এটি নতুন নতুন কাজের সুযোগ তৈরি করবে । মনে করে দেখুন, যখন কম্পিউটার দেশে প্রথম আসে, তখন কম্পিউটার এবং প্রযুক্তির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল থেকে শুরু করে ধর্মঘট, কী না হয়নি ! এখন আমরা দেখছি, সব জায়গাতেই কম্পিউটারের রাজত্ব । একইরকমভাবে যখন সেলফোন তথা স্মার্টফোন চালু হল, আবারও কিছু কিছু সংগঠন ঝুঁকির মুখে পড়েছিল । কিন্তু এখন দেশের প্রতিটি কোণায় মোবাইল ফোন ব্যবহৃত হয় ।
এবার বহু সংস্থা ভাবছে দৈনন্দিন ব্যবসায়িক প্রয়োজন মেটাতে মানব হস্তক্ষেপ কীভাবে কমিয়ে ফেলা যায় যাতে কোরোনা এবং অন্যান্য প্যানডেমিকের থেকে নিরাপত্তা মেলে । ওই একই সময়ে, আবার অটোমেশন নির্ভর ব্যবসায়িক মডেলগুলি, ব্যবসাক্ষেত্রে বড় বিকাশ তৈরি করতে পারে ।