কলকাতা, 19 ফেব্রুয়ারি: ভারত জোড়ো যাত্রা কর্মসূচি শেষ হতেই নতুন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে জাতীয় কংগ্রেস (Haat se Haat Jodo Campaign After Bharat Jodo Yatra)। গত 26 জানুয়ারি থেকে দেশজুড়ে 'হাত সে হাত জোড়ো' কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে কংগ্রেসের তরফে। পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেস তো বটেই, অন্য রাজ্যের কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা রাজ্য থেকে জেলাস্তর, জেলা থেকে একেবারে বুথস্তর পর্যন্ত 'হাত সে হাত জোড়ো' কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। আর সেই কর্মসূচিতে অন্যতম কাজ হল গান্ধি পরিবারের ইমেজ তথা অবদান সাধারণ গ্রাম বাংলার মানুষের কাছে তুলে ধরা।
দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধি পরিবারের ভূমিকা এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে ইন্দিরা গান্ধি, রাজীব গান্ধিদের নেতৃত্বে দেশ কীভাবে পরিচালিত হয়েছে, সেই বিষয়টি তুলে ধরতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি তাঁদের কীভাবে নৃশংস হত্যা করা হয়েছে, তা তুলে ধরে জনমানসের আবেগ স্পর্শ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কারণ, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কংগ্রেস থেকে দূরে সরে আসা মানুষের কাছে কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি এবং রাজ্যের তৃণমূল কংগ্রেস ভুল ইতিহাস পৌঁছে দিচ্ছে বলে অভিযোগ কংগ্রেসের। সেই ভুল ইতিহাসের বিরুদ্ধে সঠিক তথ্য উত্থাপন করে আবারও গ্রাম বাংলার সাধারণ মানুষকে নিজেদের দলে টানতে চাইছে কংগ্রেস ৷
গত বছর 7 সেপ্টেম্বর কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীরের উদ্দেশ্যে ভারত জোড়ো যাত্রা শুরু হয়। টানা পাঁচ মাস চলে এই কর্মসূচি ৷ ভারত জোড়া যাত্রায় কন্যাকুমারী থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত 4 হাজার কিলোমিটার পথ হেঁটেছেন রাহুল গান্ধি। তাঁর সঙ্গে পা মিলিয়েছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের একাধিক কংগ্রেস কর্মী-সমর্থকরা। যোগ দিয়েছেন বহু সাধারণ মানুষ ও সমাজের বিভিন্ন অংশের বিশিষ্টরা। তাঁদের সামনে বরাবরই রাহুল গান্ধি দেশের বর্তমান পরিস্থিতি ও স্বাধীনতা পরবর্তী সময় ইন্দিরা গান্ধি, রাজীব গান্ধি কীভাবে দেশের জন্য কাজ করে গিয়েছেন তা তুলে ধরেছেন।
আরও পড়ুন:মেয়ের ভবিষ্যৎ রক্ষার স্বার্থে ভারত জোড়ো যাত্রায় হেঁটেছেন, জানালেন পূজা
একইভাবে বিভিন্ন বক্তব্যে ইন্দিরা গান্ধিকে গুলি করে ঝাঁঝরা করে দেওয়া কিংবা রাজীব গান্ধিকে আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণে ছিন্নভিন্ন করে দেওয়ার আবেগকেও উসকে দিয়েছেন রাহুল। কখনও বা পথ চলতে কোনও শিশুকে বুকে টেনে নিয়েছেন, কখনও আবার কোনও শিশুর পায়ের জুতোর ফিতে বেঁধে দিয়েছেন রাহুল গান্ধি। ঠিক তেমনই কাশ্মীরে বোন প্রিয়াঙ্কা গান্ধির সঙ্গে রাহুল গান্ধির আবেগঘন মুহূর্তের ছবিও ধরা পড়েছে। সূত্রের দাবি, সেই সমস্ত মুহূর্তের ভিডিয়ো ছবি 'হাত সে হাত জোড়ো' কর্মসূচিতে সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার নির্দেশ দিয়েছে এআইসিসি (AICC)।
এই সমস্ত মুহূর্তের ছবি ভিডিয়ো সাধারণ মানুষকে দেখিয়ে কংগ্রেসের কী লাভ? রাজ্যের এআইসিসি সদস্য শুভঙ্কর সরকারের বক্তব্য, "দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে একাধিক সংস্থা নির্মাণ, এক কথায় দেশের উন্নয়নে কংগ্রেসের কী ভূমিকা তা সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরা হচ্ছে । এতে ক্ষতির তো কিছু নেই। বরং কংগ্রেস আমলে যে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান সংস্থা নির্মাণ করা হয়েছিল তা বর্তমানে শাসকরা হয় বিক্রি করে দিচ্ছে নতুবা ধ্বংস করে দিচ্ছে । এর ফলে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তো বটেই সার্বিকভাবে দেশের ক্ষতি হচ্ছে।"
আরও পড়ুন:ভারত জোড়ো যাত্রার সাফল্যে খুশি কংগ্রেস, কিন্তু এরপর কী ?
তিনি আরও জানান, আর নিজেদের অপদার্থতা রাখতে শাসক ধর্ম জাত-পাতের নামে মানুষকে লেলিয়ে দিচ্ছে। যার বিরুদ্ধে লড়াই করছে কংগ্রেস। নফরৎ ছোড়ো ভারত জোড়ো যাত্রায় রাহুল গান্ধি দেশের মানুষকে আবারও ঐক্যবদ্ধ করতে সফল হয়েছেন। এবার গ্রামের মানুষের কাছে কংগ্রেসের ভূমিকাকে তুলে ধরা চেষ্টা করেছেন। রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, রাহুল গান্ধির নেতৃত্বে 'ভারত জোড়ো যাত্রা' জাতীয় স্তরে অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু তা ভোট ব্যাংকে কতটা প্রতিফলিত হবে, তা সন্দেহজনক। কারণ গ্রামীণ ভারতের বুথস্তরে পশ্চিমবঙ্গে কয়েকটি জায়গা বাদ দিলে কংগ্রেসের সংগঠন একেবারে নেই বললেই চলে। তাই 'হাত সে হাত জোড়ো' কর্মসূচির সফলতা নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে ।