নয়াদিল্লি, 8 নভেম্বর: পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা এবং 2024-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তূণ থেকে আরও একটি তির বার করল কংগ্রেস । পূর্বতন ইউপিএ সরকারের সঙ্গে মিলে দুর্নীতির অভিযোগে যে অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ড সংস্থার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল কেন্দ্র, এখন তাদের সঙ্গেই কেন্দ্র হাত মেলাচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের ৷ কংগ্রেসের দাবি, এতেই বোঝা যায় কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ আনা হয়েছিল ৷
রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী এবং ভিভিআইপিদের জন্য 12টি এডব্লিউ-101 বিলাবহুল চপার কিনতে 2010 সালে ইতালির সাবেক উড়ান নির্মাণ সংস্থা ফিনমেকানিকা (2016-য় নাম পাল্টে হয় লিওনার্দো)-র ভর্তুকিপ্রাপ্ত ব্রিটিশ শাখা অগুস্তা-ওয়েস্টল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি হয় কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন তৎকালীন ইউপিএ সরকারের ৷ 3000 কোটি টাকার ওই চুক্তিতে বিপুল অঙ্কের ঘুষের লেনদেন হয় বলে 2013 সালে অভিযোগ করে বিজেপি ৷ দাবি করে, সরকারি ওই চুক্তিবাবদ 450 কোটি টাকা ঘুষ ঘরে তোলেন কংগ্রেস নেতারা ৷
2014-র লোকসভা নির্বাচনের সময়ও এই দুর্নীতির অভিযোগকে হাতিয়ার করে কংগ্রেসকে পর্যুদস্ত করে বিজেপি ৷ ক্ষমতায় আসার পর ওই সংস্থার সঙ্গে চুক্তি বাতিলও করে দেয় নরেন্দ্র মোদির সরকার ৷ আগামী দিনে তাদের সঙ্গে যাতে কোনও লেনদেন না হয়, তার জন্য ওই সংস্থার উপর নিষেধাজ্ঞাও চাপানো হয় ৷ এমনকি 2019-এর নির্বাচনেও অগুস্তা দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে আনা হয় ৷ কিন্তু সম্প্রতি গোপনে ওই সংস্থার সঙ্গে কেন্দ্রের কথাবার্তা চালু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷ তাতে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ায় সিলমোহরও পড়ে গিয়েছে বলে খবর ।
আরও পড়ুন:Lakhimpur Kheri Case : অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির তদারকিতে লখিমপুর-তদন্ত, জানাল সুপ্রিম কোর্ট
সংবাদমাধ্যম সূত্রে এই গোপন কথাবার্তার বিষয়টি সামনে আসতেই কার্যত খড়্গহস্ত কংগ্রেস নেতৃত্ব ৷ এ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে টুইটারে শ্লেষ দাগেন দলের সাংসদ রাহুল গান্ধি ৷ তিনি লেখেন, ‘‘আগুস্তা আগে দুর্নীতিগ্রস্ত ছিল, বিজেপির লন্ড্রিতে এসে এখন সাফ হয়ে গিয়েছে !’’ যে সংস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত এবং ভুয়ো বলে দাগিয়ে দিয়েছিল মোদি সরকার, তাদের সঙ্গে গোপনে কিসের চুক্তি, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন দলের সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র রণদীপ সুরজেওয়ালাও ৷
এদিন একের পর এক টুইটে কেন্দ্রকে নিশানা করেন সুরজেওয়ালা ৷ তিনি লেখেন, ‘‘2019-এর নির্বাচনের আগে এ নিয়ে টুইটারে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানিয়েছেন ৷ 2019-এর সংসদীয় নির্বাচনের সময় সরকারের ফাঁস করা ভুয়ো নথি হাতে নিয়ে সংবাদমাধ্যমের বন্ধুরা হাজার হাজার ঘণ্টা ব্যয় করেছেন ৷ এখন অগুস্তার সঙ্গে কেন্দ্রের এই গোপন চুক্তি নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস আছে তো ?’‘ সুরজেওয়ালা আরও লেখেন, ‘‘মোদি সরকার এবং অগুস্তা/ফিনমেকানিকার মধ্যে কিসের গোপন লেনদেন ? এক সময় যে সংস্থাকে দুর্নীতিগ্রস্ত, ঘুষপ্রদানকারী এবং ভুয়ো বলে দাগিয়ে দিয়েছিলেন মোদিজি এবং তাঁর সরকার, এখন তাদের সঙ্গে চুক্তিতে সমস্যা নেই ? দুর্নীতির ভুয়ো অভিযোগ এখন কেন মাটি চাপা দেওয়া হচ্ছে ? সুবিধাবাদী মোদিজি, দেশ জবাব চায় ।’’
বিরোধী কংগ্রেসের এই অভিযোগ নিয়ে কেন্দ্রের তরফে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি । তবে দিল্লি সূত্রে খবর, সম্প্রতি রোম সফরে গিয়েই বিষয়টি পাকা করে এসেছিলেন মোদি । ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘির সঙ্গে বৈঠকের দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার প্রতিশ্রুতি করার প্রসঙ্গ ওঠে । সেখান থেকে ফিরেই নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া হয় । একটি সর্বভারতীয় সংস্থার তরফে এ নিয়ে ইতালির রাষ্ট্রদূত ভিনশেনজো দে লুকার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, প্রধানমন্ত্রীর রোম সফরে ওই বৈঠকের সময় বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে তিনিও ছিলেন । লুকার দাবি, ভারত এখনও আনুষ্ঠানিক ভাবে কিছু জানায়নি । তবে মহামারি, শক্তি এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে অঙ্গীকার করেছে দুই দেশ ।
আরও পড়ুন:5 Years of demonetisation : প্রথম মমতাই নোটবন্দির কুফল বুঝতে পেরেছিলেন, দাবি ডেরেকের
শুধু তাই নয়, 2012 সালে কেরলের দুই মৎস্যজীবীকে হত্যায় অভিযুক্ত দুই ইতালীয় নাবিক, মাসিমিলানো লাতোরে এবং সালভাতোর জিরোনের উপর থেকেও কয়েক মাস আগে সব মামলা প্রত্যাহার করে নেয় ভারত । তার পরই প্রথম রোম সফরে যান মোদি । ইতালির সঙ্গে সম্পর্ক জিইয়ে তুলে নৌবাহিনীকেও দিল্লি আধুনিক ভাবে সুসজ্জিত করে তোলার পরিকল্পনা করছে বলে জানা গিয়েছে ।