গঙ্গাসাগর, 30 নভেম্বর :গত দু’বছরে কোভিডের থাবা কেড়ে নিয়েছে বহু প্রিয় মানুষকে (shantanu maitra participated in a cycle race to homage the covid deads) ৷ কোভিডে মৃত সেইসমস্ত মানুষদের শ্রদ্ধা জানিয়ে গোমুখ থেকে গঙ্গাসাগর পর্যন্ত এক অন্যরকম সাইকেল যাত্রায় অংশ নিলেন সুরকার শান্তনু মৈত্র ৷ সোমবারই তিনি পৌঁছান গঙ্গাসাগরে । পুরো যাত্রাপথে তাঁর সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে অতিমারিতে মৃত বহু মানুষের স্মৃতি । গঙ্গাসাগরে তাঁর সঙ্গে ছিলেন মা এবং স্ত্রীও । আড়াই মাস আগে শান্তনু বাবাকে হারিয়েছেন । বাইরে থাকার কারণে কোভিডে মৃত বাবার দেহ শেষবারের মত দেখা পর্যন্ত হয়নি । সেই যন্ত্রণা আজও তাড়িয়ে বেড়ায় শিল্পীকে । তিনি জানান, যখন একশো দিনের হিমালয় অভিযানে বেরিয়েছিলেন, তখনও বাবার উৎসাহ ছিল দেখার মত, নিয়মিত খোঁজ নিতেন ছেলের । কিন্তু এ বার অভিযান শুরুর আগেই পিতৃবিয়োগ । এই যাত্রা তাই বাবাকে স্মরণ করেই । সেই সঙ্গে কোভিডে মৃতদেরও শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন শিল্পী ।
শান্তনু বলেন, ‘‘কোভিড পুরো পরিকল্পনাটা নষ্ট করে দিল । আমার মতো বহু মানুষকে কোভিড একলা করে দিয়েছে ৷ একাকিত্বের চেয়ে বড় অভিশাপ আর কিছুই হতে পারে না । বাবার হঠাৎ চলে যাওয়াটা এখনও মেনে নিতে পারিনি । যখন উনি হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন, তখনও দেখা করতে পারিনি । মারা যাওয়ার পরেও দেখতে পাইনি ওঁকে।’’
আবছা হয়ে আসা গঙ্গাসাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে শান্তনু আরও বলেন, ‘‘মনে হল আমি কী করতে পারি? আমি গঙ্গার সঙ্গে আছি, গঙ্গাসাগর পর্যন্ত যাচ্ছি । যাঁরা প্রিয়জনকে হারিয়েছেন, তাঁদের বেশ কিছুজনের সঙ্গে কথা বলেছি । হারিয়ে যাওয়া স্বজনের ছবি পাঠাতে বলেছিলাম । প্রায় হাজারখানেক ছবি এসেছে । সব আলাদা আলাদা গল্প । এই সব নিয়ে আমার এই সফর । আমি এঁদের স্মৃতি নিয়ে এসেছি।’’ এই সফরকাহিনি নিয়ে একটি মিউজ়িক অ্যালবামও প্রকাশ করার ইচ্ছে রয়েছে, জানান শান্তনু ।
Shantau Maitra on covid dead তার মত বহু মানুষকেই একা করে দিয়েছে কোভিড ৷ সেইসমস্ত মানুষদের শ্রদ্ধা জানিয়ে একটি কোভিড মেমোরিয়াল তৈরির কথাও জানান তিনি ৷ শান্তনু জানান, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট না করে এই স্মৃতি কী ভাবে রক্ষা করা যায়, তা নিয়ে বিস্তর গবেষণা করেছেন তিনি । গঙ্গাসাগরে শ্রীধাম হাইস্কুল তাঁকে একটা জায়গা দিয়েছে । সেখানে একটি বেদি বানানো আছে । কোভিডে মৃতদের ছবি এক বিশেষ ধরনের কাগজে ছাপানো হয়েছে । তা সেই বেদিতে সংরক্ষণ করে রাখা হবে । সেখানে লাগানো হবে তুলসি গাছ । স্কুলের ছোট ছোট ছেলেমেয়েরা তাতে জল দেবে । শিল্পী বলেন, ‘‘কানপুরের এক যুবকের সহযোগিতায় তুলো দিয়ে বিশেষ ধরনের কাগজ তৈরি হয়েছে। সেখানেই ছাপা হয়েছে সকলের ছবি।’’ গঙ্গাসাগরে কপিলমুনি মন্দিরের পাশাপাশি তীর্থযাত্রীদের কাছে এটাও কোভিডের স্মরণিকা হিসেবে দর্শনীয় স্থান হয়ে থাকবে বলে আশা শান্তনুর ।