ইম্ফল, 2 অক্টোবর:মণিপুরে হিংসার জন্য কুকি বনাম মেইতেইয়ের সংঘাত নয়, প্রতিবেশী দেশ মায়ানমার ও বাংলাদেশের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলিকে দায়ী করলেন মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং ৷ তাঁর কথায়, একটি সুপরিকল্পিতভাবে সাজানো ব্যাখ্যা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করা হচ্ছে । যেখানে বলা হচ্ছে, মণিপুরে জাতিগত বিভাজন রয়েছে, যা কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যে মায়ানামার এবং বাংলাদেশ-ভিত্তিক বিদ্রোহীদের দ্বারা পরিচালিত 'প্রক্সি যুদ্ধ'-এর কারণে হয়েছে ৷
বীরেন সিং মণিপুরে সমস্যা সৃষ্টির জন্য দুই প্রতিবেশী দেশ থেকে বেআইনিভাবে অস্ত্র পাচারকে দায়ী করেছেন । তিনি বলেছেন, "মণিপুরের বর্তমান সংকটের কারণ জাতিগত গোষ্ঠীগুলির মধ্যে সংঘর্ষ এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা নয়। বরং ভারত সরকারের বিরুদ্ধে মায়ানমার এবং বাংলাদেশের কুকি জঙ্গিদের সঙ্গে কাজ করা মণিপুরের জঙ্গি গোষ্ঠীগুলির সহযোগিতায় সম্পূর্ণ একটি যুদ্ধ ৷"
মুখ্যমন্ত্রীর দাবি, রাজ্যে একদল উস্কানি দিয়ে ঝামেলার সৃষ্টি করেছে ৷ তারা রাজ্যকে ভেঙে দিতে চায় ৷ কিন্তু সংকটটিকে একটি জাতিগত বা সাম্প্রদায়িক, বা ধর্ম ভিত্তিক বা সংখ্যাগরিষ্ঠ এবং সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ হিসাবে দেখানোর চেষ্টা করা হয়েছে । বীরেন সিং বলেন, "তবে মানুষের কণ্ঠে সংঘর্ষের আসল কারণটি উঠে এসেছে ।"
সংসদে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং মণিপুর সহিংসতার বিষয়ে বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের দেওয়া বিবৃতি এবং আরও গুরুত্বপূর্ণভাবে শনিবার এক সন্দেহভাজন জঙ্গি সেমিনলুন গ্যাংটেকে গ্রেফতারের বিষয়ে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিবৃতি তুলে ধরে মুখ্যমন্ত্রী মণিপুরে সংকটের স্পষ্ট কারণ নিয়ে কথা বলেছেন । তিনি বলেন,"যেহেতু ইস্যুটি ভারত সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, সেহেতু কেন্দ্রীয় সরকার এটি মোকাবিলা করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে ।" একজন মেয়ে-সহ দুই পড়ুয়াকে হত্যার ঘটনায় বীরেন সিং সেনাবাহিনী, আধাসামরিক বাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের সঙ্গে তদন্তকারী সংস্থার দ্রুত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছেন । অপরাধীদের আইন অনুযায়ী যাতে কঠোর শাস্তি হয় রাজ্য সরকার তা নিশ্চিত করবে বলে তিনি জানিয়েছেন ৷
প্রাথমিকভাবে দুই পড়ুয়াকে হত্যার ঘটনায় দুটি মেয়ে-সহ ছয়জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে ৷ কিন্তু ধৃত দুটি মেয়ে নাবালিকা হওয়ায় তাদের ইম্ফল বিমানবন্দরে আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করা হয় । মুখ্যমন্ত্রী জনগণের কাছে আইন মেনে চলার আবেদন করেছেন । বিক্ষোভ ও সমাবেশ করার সময় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়ার মতো আইন মেনে চলতে বলেছেন । তিনি জানান যে বিক্ষোভকারী এবং নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি এবং সংঘর্ষ এড়ানো যেতে পারে যদি সকলে নিয়ম মেনে চলে ।
আরও পড়ুন:মণিপুরের সমস্যার একটি কারণ অভিবাসীরা, শান্তি ফেরানোর চেষ্টা চলছে: বিদেশমন্ত্রী
অন্যদিকে মণিপুরের আদিবাসীদের শীর্ষ সংস্থা, আদিবাসী উপজাতি নেতাদের ফোরাম (আইটিএলএফ) রবিবার দুই নাবালক-সহ 7 কুকি-জো লোককে গ্রেফতারের প্রতিবাদে চুরাচাঁদপুর জেলায় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধের ডাক দিয়েছে । আইটিএলএফ এনআইএ এবং সিবিআইকে 48 ঘণ্টার মধ্যে সাত ধৃতকে মুক্তি দেওয়ার অনুরোধ করেছে ৷ এর অন্যথা হলে মণিপুরের সমস্ত পার্বত্য জেলাগুলিতে আরও তীব্র আন্দোলন হবে বলে তারা হুঁশিয়ারি দিয়েছে । আইটিএলএফের মুখপাত্র গিঞ্জা ভুয়ালজং বলেছেন, কাউকে বাফার জোনে প্রবেশ বা বের হতে দেওয়া হবে না । সোমবার থেকে সমস্ত সরকারি অফিস বন্ধ থাকবে ৷"