নয়াদিল্লি, 24 সেপ্টেম্বর:কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ায় গত জুন মাসে খালিস্তানি বিচ্ছিন্নতাবাদী হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভারত ও কানাডার মধ্যে যে নজিরবিহীন কূটনৈতিক টানাপোড়েন চলছে, এর পিছনে ইতিমধ্যেই মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির ভূমিকার কথা উঠে এসেছে ৷ মনে করা হচ্ছে, সরাসরি ওয়াশিংটনকে যুক্ত না করে অন্য দেশের বিষয়ে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-এর নাক গলানোর যে অভিযোগ ওঠে, এক্ষেত্রেও সেরকমই মার্কিন গোয়েন্দা শৈলী কাজ করেছে ৷ এই বিষয়ে উঠে আসছে পাঁচ দেশকে নিয়ে গঠিত ফাইভ আইস গোয়েন্দা গোষ্ঠীর মধ্যে তথ্য-আদান প্রদানের কথাও ৷
দিন কয়েক আগে কানাডার সংসদে দাঁড়িয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো জানিয়েছিলেন, হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনায় ভারত সরকারের এজেন্টদের যুক্ত থাকার বিশ্বাসযোগ্য অভিযোগ রয়েছে ৷ এরপর থেকেই চরমে উঠেছে দুই দেশের কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব ৷ দুই দেশই পরস্পরের শীর্ষ কূটনৈতিক কর্তাকে দেশ ছাড়তে বলেছে ৷ ভারত আপাতত কানাডার নাগরিকদের জন্য ভিসা প্রদানও স্থগিত রেখেছে ৷ জাস্টিন ট্রুডোর মুখে শনিবারও সেই একই দাবির কথা শোনা গিয়েছে ৷ এখানেই প্রশ্ন উঠেছিল, কানাডার সংসদে দাঁড়িয়ে সে দেশের প্রধানমন্ত্রী ভারতের বিরুদ্ধে এত বড় অভিযোগ কোন প্রমাণের ভিত্তিতে করছেন?
শনিবার নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই কানাডার তরফে ভারতের বিরুদ্ধে হরদীপ সিং নিজ্জরের খুনের ঘটনায় যুক্ত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে ৷ এই রিপোর্টে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি কানাডার গোয়েন্দাসংস্থা গুলিকে এমন কিছু তথ্য দিয়েছিল, যার ভিত্তিতেই কানাডা ওই ঘটনায় ভারতের যোগ সম্পর্কে নিশ্চিত হয় ৷ এমনকি কানাডায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ডেভিড কোহেনও জানিয়েছেন, ফাইভ আইস গোয়েন্দা গোষ্ঠী থেকে পাওয়া তথ্যের উপর দাঁড়িয়েই ভারতের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন ৷
আরও পড়ুন: ফাইভ আইসের গোয়েন্দা তথ্য পেয়েই ভারতকে নিশানা ট্রুডোর, জানালেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত
জানা গিয়েছেন, মার্কিন সংস্থা এফবিআই এর এজেন্টরা জুন মাসের 18 তারিখের ওই ঘটনার আশেপাশের সময়েই ক্যালিফোর্নিয়া বসবাসকারী শিখদের সতর্ক করেছিল ৷1946 সালে গঠিত হওয়া ফাইভ আইস গোয়েন্দা গোষ্ঠীর সদস্য দেশগুলি হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও কানাডা ৷ এই দেশগুলির গোয়েন্দা সংস্থাগুলি পরস্পরের সঙ্গে গোপন তথ্য আদান-প্রদান করে থেকে ৷ সম্ভবত এই গোষ্ঠী থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতেই, নিজ্জরের ক্যালিফোর্নিয়ার কয়েকজন শিখ ধর্মাবলম্বীর কাছে ফোন গিয়েছিল এফবিআই-এর থেকে ৷ খালিস্তানপন্থী বিচ্ছিন্নতাবাদীদের জীবন বিপন্ন হতে পারে বলেও সতর্ক করেছিলেন এফবিআই এজেন্টরা ৷ প্রীতপাল সিং নামে এক মার্কিন নাগরিক তথা মার্কিন শিখ ককাস কমিটির কোঅর্ডিনেটর জানিয়েছেন, তাঁর মতো আরও মার্কিন নিবাসী 2 শিখের কাছে এফবিআই-এর ফোন গিয়েছিল ৷ ক্যালিফোর্নিয়ার একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা 'এনসাফ'য়ের কর্তা সুখমান ধামীর দাবি, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিবাসী শিখদের পুলিশ সাবধানে থাকার পরামর্শও দিয়েছিল ৷
আরও পড়ুন: 'হরদীপ সিং নিজ্জারের হত্যায় জড়িত ভারত', ট্রুডোর অভিযোগে উদ্বিগ্ন আমেরিকা
এরইমধ্যে, ভারতের জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ) খালিস্তানি জঙ্গি ও তাদের মদতদাতাদের স্থাবর, অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করার কাজ শুরু করেছে ৷ কানাডাবাসী খালিস্তানী জঙ্গি গুরপতবন্ত সিং পান্নুর অমৃতসর ও চন্ডীগড়স্থিত সম্পত্তি শনিবার বাজেয়াপ্ত করেছে এনআইএ ৷ জানা গিয়েছে, এই প্রথম ইউএপিএ আইনের 33 (5) ধারায় একজন পলাতক জঙ্গির সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হল ৷ অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে নয়াদিল্লিতে একটি জঙ্গিবাদ বিরোধী সম্মেলন করছে এনআইএ ৷ র, আইবি, বিভিন্ন রাজ্যগুলির গোয়েন্দা সংস্থাগুলির এই সম্মেলনে যোগ দেও কথা ৷ 2 দিনের এই সম্মেলনের সূচনা করতে পারেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ৷