ইম্ফল, 27 সেপ্টেম্বর: মণিপুরে দুই মেইতেই পড়ুয়ার অপহরণ ও খুনের তদন্ত করবে সিবিআই ৷ গত 6 জুলাই ওই দু’জন নিখোঁজ হয়ে যায় ৷ বিষয়টি সামনে আসার কয়েকঘণ্টার মধ্যে মণিপুর সরকার সিবিআই-কে তদন্তের বিষয়টি হস্তান্তর করার সিদ্ধান্ত নেয় । তদন্ত শুরু করার জন্য সিবিআইয়ের স্পেশাল ডিরেক্টর অজয় ভাটনগর বুধবার একটি বিশেষ ফ্লাইটে ইম্ফলে পৌঁছেছেন বলে সূত্রের খবর ৷
ওই সূত্র আরও জানিয়েছে, এই ঘটনার তদন্তে সিবিআইয়ের জয়েন্ট ডিরেক্টর ঘনশ্যাম উপাধ্যায়ও আছেন ৷ তিনি সিবিআইয়ের সেকেন্ড ইন কমান্ড ৷ গত কয়েকদিন ধরে তিনি ইম্ফলেই রয়েছেন ৷ এছাড়াও সিবিআইয়ের অন্য দক্ষ আধিকারিকদেরও তদন্তকারী টিমে রাখা হয়েছে ৷
মঙ্গলবার সোশাল মিডিয়ায় মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং লিখেছেন, "নিখোঁজ ছাত্রদের মর্মান্তিক মৃত্যুর বিষয়ে গতকাল যে মর্মান্তিক সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল, সেই নিয়ে আমি রাজ্যের জনগণকে আশ্বস্ত করতে চাই যে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার উভয়ই অপরাধীদের ধরতে নিবিড়ভাবে কাজ করছে ।"
তিনি আরও লিখেছেন, "এই গুরুত্বপূর্ণ তদন্তকে আরও ত্বরান্বিত করতে, সেন্ট্রাল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (সিবিআই) ডিরেক্টর, একটি বিশেষ দল-সহ, আগামিকাল (বুধবার) সকালে একটি বিশেষ ফ্লাইটে ইম্ফলে পৌঁছাবেন । তাঁদের উপস্থিতি এই বিষয়টির দ্রুত সমাধান করার জন্য আমাদের দায়বদ্ধতাকে বোঝাচ্ছে ৷"
তাছাড়া সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং কথা বলছেন বলে জানা গিয়েছে ওই রাজ্যের প্রশাসনের একটি সূত্র থেকে ৷
উল্লেখ্য, ফিজাম হেমজিৎ (20) এবং হিজাম লিন্থোইঙ্গাম্বি (17) নামে ওই দুই পড়ুয়া গত 6 জুলাই নিখোঁজ হয় ৷ পুলিশ জানিয়েছিল যে তাদের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না ৷ তাদের মোবাইল ফোনও বন্ধ ৷ ফলে তাদের সন্ধান করতে সমস্যা হচ্ছে ৷ তাদের মোবাইলে লাস্ট লোকেশন ছিল চুরাচাঁদপুর জেলার শীতের ফুলের পর্যটন স্থানের কাছে লামদান ৷
সোমবার সোশাল মিডিয়ায় তাদের দেহের ছবি ভাইরাল হয়ে যায় ৷ সশস্ত্র দু’জনের ওই দুই পড়ুয়ার আরও একটি ছবি ভাইরাল হয় ৷ তার পরই নতুন করে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে মণিপুর ৷ মঙ্গলবার ইম্ফল উপত্যকায় বিক্ষোভ হয় ৷ পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আটকাতে কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায় ৷ লাঠিচার্জও করে বলে অভিযোগ ৷ এতে মোট 45 জন পড়ুয়া আহত হন ৷ তাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছাত্রী বলে জানা গিয়েছে ৷
উল্লেখ্য, মণিপুরে 53 শতাংশ মেইতেই সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছে ৷ এছাড়া কুকি সম্প্রদায়ের 40 শতাংশ মানুষ রয়েছে ৷ মেইতেইরা মূলত ইম্ফল উপত্যকায় বাস করে ৷ আর কুকিরা থাকে পার্বত্য এলাকায় ৷ মেইতেইদের তফসিলি উপজাতি তকমা দেওয়ার প্রতিবাদে গত 3 মে ইম্ফলে একটি মিছিল হয় ৷ তার পর থেকেই ওই রাজ্যে ক্রমশ উত্তেজনা ছড়ায় ৷
পরিস্থিতি এমন হয় যে ইন্টারনেট বন্ধ রাখতে হয় ৷ এখনও পর্যন্ত ওই রাজ্যে 175 জন নিহত হয়েছেন ৷ আহত হয়েছেন অনেকে ৷ পরে পরিস্থিতি ক্রমশ শান্ত হতে শুরু করে ৷ ইন্টারনেট পরিষেবাও স্বাভাবিক হয় ৷ তার পরই এই ঘটনা সামনে এল ৷ ফলে নতুন করে অশান্ত হয়ে উঠেছে উত্তর পূর্ব ভারতের এই রাজ্য ৷
আরও পড়ুন:উত্তর-পূর্বের দু'টি রাজ্যে বাড়ল আফস্পার সময়সীমা, নোটিশ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের