কোভিড-19 প্যানডেমিক জাতীয় অর্থনীতিতে দু'টি সমস্যা তৈরি করেছে । অর্থনীতির নিম্নগতির জন্য রাজস্ব আদায়ে ব্যাঘাত ঘটছে এবং সামাজিক ক্ষেত্রে আরও বেশি বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে । এর মধ্যে রয়েছে স্বাস্থ্য ও সামাজিক সুরক্ষা সংক্রান্ত কর্মসূচিও । আর্থিক বিবেচনার মানদণ্ড দ্বারা এই দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা খুবই শক্ত কাজ । তবে কেন্দ্রীয় বাজেটে মধ্যপন্থা নেওয়া হয়েছে । ভারতে স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা চিরস্থায়ী হয়ে গিয়েছে । এই পরিস্থিতিতে কোভিড-19 জনস্বাস্থ্য ব্যবস্থার উপর বিনিয়োগের প্রয়োজনীয়তা দেখিয়েছে । যা করতে পারলে স্বাস্থ্য ব্যবস্থার দুর্বলতাগুলির দিকে নজর দেওয়া যায় । উন্নত ও উন্নয়নশীল, সব রাজ্যই প্যানডেমিকের ধাক্কা সহ্য করেছে । প্রস্তুতির অভাব বিষয়টিকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে ।
2021-22 সালের বাজেটে অর্থমন্ত্রী স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, স্বাস্থ্য গবেষণা এবং আয়ুষ মন্ত্রক সংক্রান্ত খাতে এক সঙ্গে 76 হাজার 901 কোটি টাকা বরাদ্দ করেছেন । গত বছর এই খাতে যা বরাদ্দ করা হয়েছিল, এবার তার থেকে 11 শতাংশ বেশি করা হল । গত চার বছরে এটাই সর্বোচ্চ বৃদ্ধি । তবে সরকারের তরফে করা মোট খরচের থেকে অংশ হিসেবে এই খাতে খরচ কম বা বেশি একই আছে । আর এটা 2020-21 বাজেটের মতো মোট খরচের 2.21 শতাংশে থেকে গিয়েছে । আরও গভীরভাবে খতিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ খাতে 71 হাজার 268 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । গত বছরের বাজেটের তুলনায় এই খাতে বৃদ্ধির পরিমাণ 9 শতাংশ । আয়ুষের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছে 2 হাজার 970 কোটি টাকা । আর স্বাস্থ্য গবেষণার জন্য 2 হাজার 663 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । এই বছরের বাজেটে মোট সরকারি ব্যয়ের 2.21 শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে সামগ্রিকভাবে বরাদ্দ করা হল । এর ফলে সুরক্ষা বিধি মানতে দেশের পরিবারগুলির উপর যে খরচের বোঝা চাপছে, তা খুব একটা বাড়বে না । পকেট এক্সপেন্ডিচার থেকে মোট ব্যয় 63 শতাংশ রইল । এটা শুধু খারাপই নয়, এর ফলে লাখ লাখ মানুষকে দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেওয়া হল ।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ, আয়ুশ ও স্বাস্থ্য গবেষণা খাতে ব্যয়
আত্মনির্ভর ভারত ও উন্নতির লক্ষ্যে পৌঁছতে যে 6 টি স্তম্ভের কথা উল্লেখ করা হয়, তার মধ্যে অন্যতম স্বাস্থ্য ও সুস্থ থাকার বিষয়টি । তার অধীনেই ঘোষণা করা হয়েছে পি এম আত্মনির্ভর স্বাস্থ্য ভারত যোজনা । যে ঘোষণাকে সত্যিই প্রশংসা করতে হয় । 6 বছরের জন্য 64 হাজার 180 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । এর মাধ্যমে গ্রামীণ ও শহরের স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কেন্দ্রগুলিকে সহায়তা করা হবে । এছাড়া জনস্বাস্থ্য সংক্রান্ত গবেষণাগার তৈরি হবে । বিমানবন্দর ও সমুদ্র বন্দরগুলিতে জনস্বাস্থ্য কেন্দ্র চালু করা হবে । রোগ নিয়ন্ত্রণের জন্য জাতীয় কেন্দ্রকে শক্তিশালী করা হবে । প্রাথমিক চিকিৎসাকে জোরদার করতে এবং জনস্বাস্থ্যের কার্যক্রমকে তুলে ধরতে এই ব্যবস্থা নেওয়া হতে চলেছে । কোভিড-19 প্যানডেমিক আমাদের এক চরম বাস্তবের মুখোমুখি করেছিল । যে বাস্তব দেখিয়েছে যে আমরা যদি প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরিষেবা, নজরদারির ব্যবস্থা এবং জনস্বাস্থ্যের কাজে বেশি বিনিয়োগ না করি, তাহলে ক্ষতির পরিমাণ মারাত্মক হবে । এই প্রসঙ্গে বলা যায় যে সংক্রামক রোগকে নিয়ন্ত্রণ করতে এই ব্যবস্থার মাধ্যমে সঠিক দিশায় পদক্ষেপ করা হয়েছে । তবে সম্পদ সংক্রান্ত বরাদ্দ পর্যাপ্ত নাও হতে পারে । আর এটা বেশ কয়েকটি কর্মসূচির মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে । এর সঙ্গে কোভিড টিকাকরণের কাজে 35 হাজার কোটি বরাদ্দ করা হয়েছে । এই সিদ্ধান্তকে বাস্তব সম্মতই বলা যায় । এর ফলে জনসংখ্যার যথেষ্ট পরিমাণ অংশকে টিকা দেওয়া যেতে পারে । আমরা যত তাড়াতাড়ি টিকা নেব, ততই তা অর্থনীতির পক্ষে মঙ্গলজনক হবে । কারণ, অনেক বেশি মানুষ মুক্ত ভাবে উৎপাদনশীল কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারবেন এবং অর্থনৈতিক বিকাশে অবদান রাখতে পারবেন ।