পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

Buddhadeb Dasgupta : অভিনেত্রী হিসাবে পরিণত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব, জানালেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত - ভারতীয় সিনেমা

মন্দ মেয়ের উপাখ্যানের মাধ্যমে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (Buddhadeb Dasgupta) তাঁকে অভিনেত্রী হিসাবে পরিণত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন ৷ আবার পরে যখন উত্তরার জন্য ডেকেছিলেন হাতে কাজ থাকার জন্য হ্যাঁ করতে পারেননি ৷ সেই খেদ থেকেই গেল বাকি জীবন ৷ পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে কাজ করার খুব 'দামি' অভিজ্ঞতার স্মৃতিচারণ করলেন অভিনেত্রী ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত (Rituparna Sengupta) ৷

অভিনেত্রী হিসাবে পরিণত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব, জানালেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত
অভিনেত্রী হিসাবে পরিণত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন বুদ্ধদেব, জানালেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত

By

Published : Jun 10, 2021, 6:12 PM IST

Updated : Jun 10, 2021, 8:09 PM IST

ভারতীয় সিনেমার এক স্তম্ভ আজ এই বাসভূমি ছেড়ে তাঁর স্বর্গীয় বাসস্থানের উদ্দেশ্যে পাড়ি দিয়েছেন ৷ এটা মেনে নেওয়া আমাদের সবার পক্ষে কঠিন ৷ তিনি এমন একজন চিত্র পরিচালক যাঁর অনবদ্য সৃষ্টিশৈলী আমাদের গর্বিত করে ৷ বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত (Buddhadeb Dasgupta) একজন সাহসী পরিচালক ছিলেন ৷ তিনি সিনেমায় নতুন একপ্রকার ভাষার প্রবর্তন করেছিলেন ৷ তিনি তাঁর সিনেমায় এমন কিছু বিষয় নিয়ে কাজ করেছিলেন যা বিশ্বজুড়ে সুনাম ও প্রশংসা কুড়িয়েছে ৷ ওঁর 'গৃহযুদ্ধ' দেখে বড় হয়েছি ৷ ওঁর সিনেমায় মমতা শঙ্কর, অঞ্জন দত্ত বা গৌতম ঘোষের অভিনয় মন্ত্রমুগ্ধের মতো দেখেছি ৷ এসব সিনেমা যখন দেখছি, তখন আমি টিনএজারও নই ৷ কিন্তু সেই বয়সেই আমার কাকা আমাকে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত নামটির সঙ্গে আলাপ করান ৷ এই কাকা, যিনি পেশায় ডাক্তার, তাঁর তথাকথিত ভিন্ন ধারার সিনেমার মানে বোঝান আমাকে ৷

ওঁর মন্দ মেয়ের উপাখ্যানে মূল চরিত্রে অভিনয় করতে পেরে আমি ব্যক্তিগতভাবে গর্ব অনুভব করি ৷ চরিত্রটি আমাকে অভিনেত্রী হিসাবে পরিণত করেছে ৷ অভিনয়ের বহু সূক্ষ অলিগলির সন্ধান পেয়েছিলাম ওই চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে ৷ উনি একজন পারফেকশনিস্ট পরিচালক ৷ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের থেকে তাঁদের সেরাটা বের করে আনতে পারতেন ৷ মন্দ মেয়ের উপাখ্যানে পরিচালক যেমনটা চাইছিলেন তা বের করে আনতে গিয়ে নিজেকে প্রচুর ভাঙাচোরা করতে হয়েছিল ৷ কেরিয়ারের শুরুর দিকেই অমন একটা চরিত্রে অভিনয় করতে গিয়ে রাতের ঘুম প্রায় উড়ে গিয়েছিল ৷ একজন বণিতা আবার যে একটা মা-ও বটে... তেমন চরিত্র ফুটিয়ে তুলতে গিয়ে রাতের পর রাত জেগে শুধু ভেবেছি ৷

পুরুলিয়া হল বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের প্রিয় লোকেশন ৷ অনেক ছবিতেই উনি পুরুলিয়াকে নানাভাবে ব্যবহার করেছেন ৷ মন্দ মেয়ের উপাখ্যানও পুরুলিয়াতেই শু্যট করা হয়েছিল ৷ গোটা ইউনিট নিয়ে সেখানে পৌঁছনই বেশ কষ্টসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছিল ৷ পুরুলিয়ার মতো প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষ যখন জানতে পেরেছেন তারকা অভিনেত্রী আসছেন... সে ভিড় দেখার মতো ৷ তার উপর পুরুলিয়ার ওই গরম ৷ কিন্তু কিছুতেই পরিচালককে দমানো সম্ভব নয় ৷ মাথায় টুপিটি চাপিয়ে ভিড় ঢেলে এগিয়ে কীভাবে যেতে হয় তা শিখতে বুদ্ধদেব দাশগুপ্তকেই দেখতে হবে ৷ যাই হোক সেটে উনিই সবার প্রথমে পৌঁছবেন ৷ লাইট চেক করে লেন্স টেন্স সব দেখে নেওয়া ছিল ওঁর নিত্যদিনের কাজ ৷ উনি ছিলেন একজন টাস্কমাস্টার ৷ ওঁর সিনেমার মধ্যে দিয়ে ওঁর কারুশিল্পের প্রতিভা ব্যক্ত হয়েছে ৷ উনি ওঁর নিজের জেনারেশনের তো বটেই আগামী অনেক জেনারেশনের প্রদর্শক ৷

উনি ভোরবেলা এবং সন্ধ্যার ন্যাচারাল লাইটে কাজ করতে খুব পছন্দ করতেন ৷ এই লাইট নিয়ে কাজ করার কঠিন দিকটি ছিল- খুব অল্প সময়ের জন্য এই লাইট পাওয়া যেত ৷ তার মধ্যেই ভীষণ নিয়মানুবর্তীতার মধ্যে কাজ করতে হত ৷ ঠিক মতো শু্যট দিতে না পারলেই রেগে যেতেন ৷ আমি তো ওঁকে শুধু লাইট পছন্দ না হওয়ার জন্য এক একটা গোটা দিন প্যাক-আপ বলে দিতে শুনেছি ৷ এই লাইট নিয়ে ওঁকে বহুবার হতাশ হতেও দেখেছি, যেটা আমাদের মানে গোটা ইউনিটকেই গ্রাস করত ৷ কিন্তু যত যাই হোক, শেষ অবধি পরিচালক সেরাটা বের করে আনবেনই ৷

মন্দ মেয়ের উপাখ্যান করতে গিয়ে ওঁর থেকে কত বকা খেয়েছি ৷ তবে জানতাম আমার প্রকৃত অভিনেত্রী সত্ত্বা উনি জাগিয়ে তুলছেন ৷ অনেক পরিণত অনুভব করেছিলাম এই সিনেমাটা করার পর ৷

ওঁর 'উত্তরা'-তেও উনি আমারা কথা ভেবেছিলেন ৷ আমাকে ডেকেওছিলেন ৷ উত্তরায় আমাকে নিতে চেয়ে উনি আমার বাবাকে একটা চিঠিও লিখেছিলেন ৷ কিন্তু সেই সময় অন্যান্য কাজে এত ব্যস্ত ছিলাম যে উত্তরা ফস্কেই গেল ৷ এখন খুব আফসোস হয় ভাবলে ৷ এই আফসোস আমার সারাজীবনই থেকে গেল ৷ তবে পরে কখনও আবার কাজ করা হবে একসঙ্গে... উনি অন্য কোনও সিনেমায় আমাকে নেবেন বলে কথাও হয়েছিল... তবে আর কোনও উপায় রইল না ৷

উনি প্রায়ই বলতেন যে ওঁর মেয়ে আর আমি একই স্কুলে পড়েছি ৷ কারমেল ৷ সিনেমা-স্ত্রিপ্ট এসবের বাইরেও এমন টুকরো-টাকরা নানা গল্পগুজব হত ৷

ওঁর সিনেমাগুলির মধ্যে বাঘ বাহাদুর, গৃহযুদ্ধ, উত্তরা, তাহাদের কথা আমার প্রিয় ৷ একটা যুগের অবসান হল ওঁর সঙ্গে ৷ এমন দূরদর্শী পরিচালক, একই সঙ্গে গভীর জ্ঞান এবং পাওয়ারহাউস প্রতিভা একেবারেই বিরল ৷ আজকের দিনটা আমাদের ইন্ডাস্ট্রির পাশাপাশি গোটা দেশের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির জন্য শোকের ৷ একটা সুস্পষ্ট যুগের অবসান হল ৷

আরও পড়ুন : Buddhadeb Dasgupta : অধ্যাপক থেকে পরিচালক, বুদ্ধদেবের প্রয়াণে শেষ 'তাহাদের' যুগ

Last Updated : Jun 10, 2021, 8:09 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details