শিবমোগা (কর্ণাটক), 17 অগস্ট: জন্ম থেকেই জটিল হৃদরোগের সঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে সাড়ে আট বছরের এক বালক ৷ ছোট্ট ছেলের চোখ ভরা স্বপ্ন যাতে অধরা না থেকে যায়, সে জন্য তার জীবনের সবচেয়ে বড় ইচ্ছেটা পূরণ করল কর্ণাটকের পুলিশ ৷ শিবমোগার প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ডোড্ডাপেট থানার ইনস্পেক্টর হিসেবে এক ঘণ্টার জন্য দায়িত্ব পালন করল সেই খুদে ৷
জন্মের পরপরই শিবমোগার উরুগাদুরের বাসিন্দা আট বছরের আজান খানের হার্টের সমস্যা ধরা পড়ে ৷ তার হৃদযন্ত্র খুবই ছোট ছিল । নানা চিকিৎসার পরও নিরাময় হয়নি ৷ শিবমোগায় সহ্যাদ্রি নারায়ণা হৃদয়ালয়ে তার চিকিৎসা চলছে । শিবমোগার বাসিন্দা হলেও আজান বর্তমানে থাকে বালেহোন্নুরে ৷
থানার দায়িত্ব পালনের পর সে বলে, "আমি পুলিশ হতে চাই । আমি আমার বাবাকে বলেছিলাম । আমাকে পুলিশ হওয়ার ব্যবস্থা করার জন্য এসপি মিঠুন কুমারকে ধন্যবাদ । আমি খুশি যে আমি থানায় এসেছি ৷"
বুধবার আজান এই ব্যতিক্রমী সুযোগ পেয়ে থানার পুলিশ ইনস্পেক্টর হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে এবং এক ঘণ্টার জন্য তার ইচ্ছা অনুযায়ী কর্তব্যরত পুলিশকর্মীদের সে নানা নির্দেশ দেয় ৷ জীবনে একবার পুলিশের উর্দি পরা ও একজন পুলিশকর্মী হিসেবে কাজ করার স্বপ্ন ছিল সেই ছেলের ৷ আজানের শরীর অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও, তার ইচ্ছে পুরণে সচেষ্ট হন শিবমোগার পুলিশ সুপার মিঠুন কুমার ৷
মিঠুন কুমার বলেন, "অভিভাবকরা বলেছিলেন যে, ছোট ছেলেটি হার্টের অসুখে ভুগছে । যেহেতু সে পুলিশ হতে চেয়েছিল, আমরা তাকে এই সুযোগ দিই । একটি পুলিশ জিপে তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয় । আমাদের পুলিশ কর্মীরা তাকে স্যালুট দিয়ে অভ্যর্থনা জানান, তাকে ভিতরে নিয়ে যান এবং তাকে তার দায়িত্ব পালনে সহায়তা করেন । থানায় গিয়ে ছেলেটি দারুণ খুশি ৷"
ডোড্ডাপেট থানায় পৌঁছনোর পর পুলিশ সুপার মিঠুন কুমার ফুলের তোড়া দিয়ে আজানকে স্বাগত জানান । আজান এখন প্রথম শ্রেণির ছাত্র ৷ এক ঘণ্টার জন্য পুলিশ ইন্সপেক্টরের ভূমিকা পালন করার কারণে সে দারুণ উৎসাহিত ৷ আজান তার দায়িত্বগুলিকে গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে এবং অবিলম্বে থানার কর্মীদের ডেকে নিয়ে রোল কল করে ।
আরও পড়ুন:পরকীয়ায় বাধা ! লিভ-ইন পার্টনারের ছেলেকে খুনের অভিযোগে গ্রেফতার তরুণী
আজান খান সরকারি রেজিস্টারে স্বাক্ষর করে, ভারতীয় দণ্ডবিধির (আইপিসি) বিভিন্ন ধারার সঙ্গে নিজেকে পরিচিত করার চেষ্টা করে এবং কর্মীদের দায়িত্ব সম্পর্কে থানার কর্মীদের থেকে জানতে চায় ৷ অফিসারদের প্রয়োজনীয়তার কথাগুলি জানার পর, একজন মহিলা কনস্টেবলকে দুই দিনের ছুটি মঞ্জুর করে আজান ৷ ওই মহিলা ছুটির জন্য অনুরোধ করেছিলেন । সাম্মানিক পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসাবে তার সংক্ষিপ্ত মেয়াদে আজান অফিসারদের দায়িত্ব এবং চ্যালেঞ্জগুলি সম্পর্কে জানতে চায় ৷ থানার পিআই অঞ্জন কুমার তাঁদের দায়িত্ব সম্পর্কে ব্যাখ্যা দেন আজানকে ।
আজানের বাবা তবরেজ খান বলেন, "আমার ছেলের হার্টে একটি বিরল সমস্যা রয়েছে । তিন বছর বয়সে ধরা পড়ে তার হৃৎপিণ্ডের মাত্র একটি অংশ রয়েছে । আমাদের হার্ট ট্রান্সপ্লান্ট করতে হবে, কিন্তু তার জন্য তার সমবয়সি ছেলের অঙ্গ লাগবে । এছাড়াও আরও কিছু অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের প্রয়োজন রয়েছে । আমরা জানি না কী ঘটবে ৷ আমার ছেলে পুলিশ ইন্সপেক্টর হতে চেয়েছিল এবং তাই আমরা এসপিকে অনুরোধ করেছিলাম যে, তাকে তা হওয়ার অনুমতি দেওয়া হোক । আমরা সত্যিই কৃতজ্ঞ যে এসপি আমার ছেলের স্বপ্নপূরণ করেছেন ৷"