বক্সার, 29 মে : আবারও সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধের চেষ্টা ! সত্য খবর তুলে ধরার চেষ্টায় বিজেপি নেতার রোষানলে ইটিভি ভারতের প্রতিনিধি ৷ বিহারের বক্সারে ইটিভি ভারতের সাংবাদিক উমেশ পান্ডের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করলেন এলাকার বিজেপি নেতা তথা প্রাক্তন বিধায়ক পরশুরাম চতুর্বেদী ৷ উমেশের বিরুদ্ধে বক্সার সদর থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির 500, 506, 290, 420 ও 34 নম্বর ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে ৷
সাংবাদিক উমেশ পান্ডের বিরুদ্ধে হুমকি, মানসিক প্রতারণা, জাতীয় বিপর্যয়ের সময়ে সামাজিক সম্প্রীতি বিঘ্নিত করা, টাকার জন্য ব্ল্যাকমেল, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে এবং বিজেপির ভাবমূর্তি কলুষিত করার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ৷
স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অশ্বিনী চৌবের এই প্রতিবেদন ছাপার পরই তেলেবেগুনে জ্বলে ওঠেন বিজেপি নেতা পরশুরাম চতুর্বেদী কেন সাংবাদিকের উপর চটলেন বিজেপি নেতা ?
ঘটনার সূত্রপাত 15 মে ৷ উমেশ পান্ডের একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় ইটিভি ভারতে ৷ প্রতিবেদনটিতে দেখা যাচ্ছে, স্বাস্থ্যমন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী অশ্বিনী চৌবে একই অ্যাম্বুলেন্স নতুন স্টিকার লাগিয়ে, নতুন করে সাজিয়ে 4 বার উদ্বোধন করেছেন ৷ এরপর খবরটির একাধিক ফলো আপও প্রকাশিত হয় ৷ নিমেষে বড় ইস্যু হয়ে যায় ঘটনাটি ৷ বিষয়টি নজরে আসে বিহারের বিরোধী দলনেতা তেজস্বী যাদবের ৷ ইটিভি ভারতের প্রতিবেদনটি তিনি নিজের টুইটারে শেয়ারও করেন ৷ সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ে খবরটি ৷
এরপর 20 মে বিজেপি নেতা পরশুরাম চতুর্বেদী উমেশের বাড়িতে আসেন ৷ দুপুর তখন প্রায় আড়াইটে থেকে তিনটে ৷ পরশুরাম আমাদের প্রতিনিধিকে জিজ্ঞাসা করেন, এটি তাঁর বাড়ি কিনা ৷ উমেশও তাঁকে আপ্যায়ণ করেন ৷ বাড়িতে বসিয়ে চা খাওয়ান ৷
তারপর আস্তে আস্তে নিজের রূপ দেখাতে শুরু করেন বিজেপি নেতা ৷ উমেশকে প্রশ্ন করেন, খবরটি কেন ছাপানো হয়েছে ৷ উমেশও শান্ত কিন্তু স্পষ্ট গলায় জানিয়ে দেন, তিনি কেবল তাঁর কাজ করছিলেন ৷ প্রত্যেকের নিজের নিজের কাজ সম্মানের সঙ্গে করা উচিত ৷ তিনিও তাই করছিলেন ৷ এরপরই বিজেপি নেতা তাঁর বাড়ি থেকে উঠে চলে যান ৷
আরও পড়ুন : ইটিভি ভারতের সাংবাদিকের কণ্ঠরোধ করতেই মামলা, পর্যবেক্ষণ হাইকোর্টের
22 মে উমেশ জানতে পারেন তাঁর বিরুদ্ধে এফআইআর করা হয়েছে বক্সার সদর থানায় ৷ তিনি সেইসময় থানার বাইরেই খবর সংগ্রহের কাজে গিয়েছিলেন ৷ একটি বন্ধ পানের দোকানের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ৷ সেইসময় উমেশের কিছু সাংবাদিক বন্ধু তাঁকে জানায়, এফআইআরের বিষয়টি ৷ থানার আধিকারিককে ফোন করেন উমেশ ৷ জানতে পারেন, তিনি বাড়ি গিয়েছেন ৷ এরপর বন্ধুদের হাত দিয়েই এফআইআরের কপিটি আনান উমেশ ৷
উমেশ পান্ডে জানিয়েছেন, সমস্ত প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর প্রতিবেদন লিখেছেন । সমস্ত প্রমাণ রয়েছে তাঁর কাছে ।
বারবার সংবাদ মাধ্যমের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হচ্ছে ৷ এর আগে বেআইনি বালি তোলার খবর প্রকাশ করায় ইটিভি ভারতের বীরভূমের সাংবাদিক অভিষেক দত্তরায়কেও রক্তচক্ষুর সামনে পড়তে হয়েছিল ৷ একাধিক অভিযোগ দায়ের হয়েছিল তাঁর বিরুদ্ধেও ৷ মামলা গড়িয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত ৷ হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলে বীরভূমের সাংবাদিক । সেই আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, কণ্ঠরোধ করতেই সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে ৷