ভোপাল, 2 ডিসেম্বর:ভোপালের জনবসতির মধ্যেই ছিল ইউনিয়ন কার্বাইড-এর রাসায়নিক কারখানা। তৈরি ও সঞ্চিত হত উদ্বায়ী বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট। 2 ডিসেম্বর রাতে কারখানার 'সি প্ল্যান্ট'-এ সঞ্চিত মিথাইল আইসোসায়ানেটের 610 নম্বর ট্যাঙ্কে কোনওভাবে জল মিশে যায়। তাপদায়ী বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাস। উদ্ভূত ভয়ঙ্কর তাপ ও চাপে ট্যাঙ্ক খুলে প্রায় 40 মেট্রিক টন মারণ মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। চোখজ্বালা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের প্রদাহে আক্রান্ত হন ভোপালের প্রায় সাড়ে আট লাখ জনবসতির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সেদিন রাতের 'প্রাণত্রাতা' রেল মাস্টার ৷ অজ্ঞাত নায়কের ছেলের কাছ থেকে জেনে নিন সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ৷
তাঁর নাম গোলাম দস্তগীর। তিনি 1984 সালের 2শে ডিসেম্বর রাতে ভোপাল রেলওয়ে স্টেশনে সহকারী স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট হিসাবে ডিউটিতে ছিলেন। তিনি যথারীতি তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু সেদিন তাঁর দায়িত্বের পরিধি অনেক 'বড়' হয়ে গিয়েছিল। বিষাক্ত গ্যাস লিক হয়ে পরিস্থিতি যখন খারাপ হতে থাকে, তখন কাগজপত্রে মুখ গুঁজে কাজ করছিলেন দস্তগীর ৷ তিনি তখন বুঝতে পারেন না কেন তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসছে। খুব শীঘ্রই জানা যায়, চারিদিকে কুয়াশার মতো রয়েছে বিষ, যা এক নিমেষে মৃত্যু ঘটাচ্ছে।
তখন স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই এক্সপ্রেস ৷ তাতে শত শত যাত্রী ৷ গোরক্ষপুর-মুম্বইগামী ট্রেন পঁচিশ মিনিট থেমে রয়েছে সেখানে। বাবা গোলাম দস্তগীর ড্রাইভারকে বলেন, "এই ট্রেনটা এখান থেকে নিয়ে যাও ৷ চালক ওপর থেকে অর্ডার চান। আমি নিজ দায়িত্ব নিয়ে বলছি যদি কিছু হয় তার দায়ভার আমারই ৷ গার্ডকে আমি অনুরোধ করে বলি, সময় নষ্ট করবেন না, ট্রেনটি নিয়ে যান। ট্রেনটি পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছেড়ে যায় ৷" এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে ছুটে আসা গোলাম দস্তগীর সেদিন শত শত যাত্রীকে বাঁচিয়ে ছিলেন।
বাতাসে মিথাইল আইসোসায়ানেটের 0.4 পিপিএম (পার্ট পার মিলিয়ন)-এর উপস্থিতিই বিপজ্জনক। তা 21 পিপিএম এ পৌঁছলে মৃত্যু অনিবার্য। ভোপালে এর মাত্রা পৌঁছেছিল তারও কয়েক গুণ বেশি। তাই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অসহনীয় কষ্ট নিয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন প্রায় তিন হাজার মানুষ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভোপাল গ্যাসকাণ্ডে মোট মৃতের সংখ্যা 3 হাজার 787 ৷ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত 5 লাখ 58 হাজার 125 জন। যার মধ্যে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্থায়ী পঙ্গুত্বের শিকার হন 3 হাজার 900 জন। তবে ভোপাল গ্যাসকাণ্ডের দুর্গতদের পক্ষে আন্দোলনকারীদের দাবি, অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা 8-10 হাজার।