পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Dec 2, 2023, 2:22 PM IST

ETV Bharat / bharat

ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ে 'প্রাণত্রাতা' রেল মাস্টার, ইটিভি ভারতকে তাঁর ছেলে শোনালেন সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা

Bhopal Gas Tragedy: প্রতিবছর আজকের দিনটিতে পালন করা হয় জাতীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ দিবস ৷ প্রায় 40 বছর আগে 1984-এর 2 ডিসেম্বরের রাত পালটে দিয়েছিল সবকিছু ৷ শিল্পদূষণের অভিঘাতে ঢাকা পড়ে গিয়েছিল মধ্যপ্রদেশের ভোপালের পরিচয় ৷ দূষণের ক্ষত নিয়ে ভোপাল আজও হয়ে রয়েছে এক মর্মান্তিক উদাহরণ ৷ সেদিন রাতের 'প্রাণত্রাতা' অজ্ঞাত নায়ক গোলাম দস্তগীর ৷ তিনি সেদিন প্রাণ বাঁচান অনেকের ৷ ইটিভি ভারতকে তাঁর ছেলে জানালেন সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ৷

ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ে 'প্রাণত্রাতা' রেল মাস্টার
Bhopal Gas Traged

ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ে 'প্রাণত্রাতা' রেল মাস্টার

ভোপাল, 2 ডিসেম্বর:ভোপালের জনবসতির মধ্যেই ছিল ইউনিয়ন কার্বাইড-এর রাসায়নিক কারখানা। তৈরি ও সঞ্চিত হত উদ্বায়ী বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানেট। 2 ডিসেম্বর রাতে কারখানার 'সি প্ল্যান্ট'-এ সঞ্চিত মিথাইল আইসোসায়ানেটের 610 নম্বর ট্যাঙ্কে কোনওভাবে জল মিশে যায়। তাপদায়ী বিক্রিয়ায় উৎপন্ন হয় কার্বন ডাই অক্সাইড ও অন্যান্য গ্যাস। উদ্ভূত ভয়ঙ্কর তাপ ও চাপে ট্যাঙ্ক খুলে প্রায় 40 মেট্রিক টন মারণ মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস ছড়িয়ে পড়ে বাতাসে। চোখজ্বালা, কাশি, শ্বাসকষ্ট, ত্বকের প্রদাহে আক্রান্ত হন ভোপালের প্রায় সাড়ে আট লাখ জনবসতির অর্ধেকেরও বেশি মানুষ। সেদিন রাতের 'প্রাণত্রাতা' রেল মাস্টার ৷ অজ্ঞাত নায়কের ছেলের কাছ থেকে জেনে নিন সেই ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ৷

তাঁর নাম গোলাম দস্তগীর। তিনি 1984 সালের 2শে ডিসেম্বর রাতে ভোপাল রেলওয়ে স্টেশনে সহকারী স্টেশন সুপারিনটেনডেন্ট হিসাবে ডিউটিতে ছিলেন। তিনি যথারীতি তাঁর দায়িত্ব পালন করছিলেন। কিন্তু সেদিন তাঁর দায়িত্বের পরিধি অনেক 'বড়' হয়ে গিয়েছিল। বিষাক্ত গ্যাস লিক হয়ে পরিস্থিতি যখন খারাপ হতে থাকে, তখন কাগজপত্রে মুখ গুঁজে কাজ করছিলেন দস্তগীর ৷ তিনি তখন বুঝতে পারেন না কেন তাঁর দম বন্ধ হয়ে আসছে। খুব শীঘ্রই জানা যায়, চারিদিকে কুয়াশার মতো রয়েছে বিষ, যা এক নিমেষে মৃত্যু ঘটাচ্ছে।

তখন স্টেশনে দাঁড়িয়ে রয়েছে দুই এক্সপ্রেস ৷ তাতে শত শত যাত্রী ৷ গোরক্ষপুর-মুম্বইগামী ট্রেন পঁচিশ মিনিট থেমে রয়েছে সেখানে। বাবা গোলাম দস্তগীর ড্রাইভারকে বলেন, "এই ট্রেনটা এখান থেকে নিয়ে যাও ৷ চালক ওপর থেকে অর্ডার চান। আমি নিজ দায়িত্ব নিয়ে বলছি যদি কিছু হয় তার দায়ভার আমারই ৷ গার্ডকে আমি অনুরোধ করে বলি, সময় নষ্ট করবেন না, ট্রেনটি নিয়ে যান। ট্রেনটি পাঁচ মিনিটের মধ্যে ছেড়ে যায় ৷" এক নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মে ছুটে আসা গোলাম দস্তগীর সেদিন শত শত যাত্রীকে বাঁচিয়ে ছিলেন।

বাতাসে মিথাইল আইসোসায়ানেটের 0.4 পিপিএম (পার্ট পার মিলিয়ন)-এর উপস্থিতিই বিপজ্জনক। তা 21 পিপিএম এ পৌঁছলে মৃত্যু অনিবার্য। ভোপালে এর মাত্রা পৌঁছেছিল তারও কয়েক গুণ বেশি। তাই কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই অসহনীয় কষ্ট নিয়ে মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন প্রায় তিন হাজার মানুষ। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভোপাল গ্যাসকাণ্ডে মোট মৃতের সংখ্যা 3 হাজার 787 ৷ শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত 5 লাখ 58 হাজার 125 জন। যার মধ্যে ভয়ঙ্করভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে স্থায়ী পঙ্গুত্বের শিকার হন 3 হাজার 900 জন। তবে ভোপাল গ্যাসকাণ্ডের দুর্গতদের পক্ষে আন্দোলনকারীদের দাবি, অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা 8-10 হাজার।

সেই রাত এখনও প্রতি মুহূর্তে ভেসে ওঠে গোলাম দস্তগীরের ছেলে শাদাব দস্তগীরের চোখে। "আমরা বাড়িতে ছিলাম, বাবাকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছিল, যে কেমন রয়েছে", বললেন শাদাব দস্তগীর ৷ তাঁর কথায়, "আমরা পরে জানতে পারি, বাবাকে বড় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ৷ রাস্তার দুই পাশে দেহ থরে থরে রাখা ৷ আমাকে তাদের মধ্যে আমার বাবাকে খুঁজতে হয়েছিল ৷ খুঁজে পায়নি ৷ আমি বাড়িতে গিয়ে তাঁর ফিরে আসার জন্য প্রার্থনা করতে লাগলাম। বাবা যখন বাড়ি ফিরলেন দেখলাম তাঁর চোখ এতটাই ফুলে গিয়েছিল যে তাকানো যাচ্ছিল না ৷ কল্পনা করুন এমন একজন ব্যক্তিত্ব যিনি সারারাত বিষ হজম করে হাজার হাজার মানুষের জীবন রক্ষা করেছেন।"

তিনি আরও বলেন, "বিষাক্ত ওই গ্যাস তাঁর শরীরে ক্ষতি করেছে জেনেও তখনও তিনি সাহস হারাননি। সেই রাতের পর বাবা 19 বছর বেঁচে ছিলেন ৷ কিন্তু আমাদের পরিবার প্রতি মুহূর্তে সেই বিষাক্ত রাতের কথা ভুলিনি ৷ তবে আমার আক্ষেপ কেউ গোলাম দস্তগীরকে নায়ক নয়, শুধু গ্যাসের শিকার হিসেবে দেখেন। সবাই ত্রিশ-পঁয়ত্রিশ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন, তিনিও পেয়েছেন।"

উল্লেখ্য, ভোপাল গ্যাস লিকের সেই ভয়াবহ স্মৃতি ঘিরে 'দ্য রেলওয়ে মেন' সিরিজ তৈরি হয়েছে। 18 নভেম্বর নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া ওই ভোপাল দুর্ঘটনার রাতে অসহায় মানুষকে উদ্ধারের ঘটনা দেখা গিয়েছে চারটি এপিসোডে। তাতে রেলওয়ের জেনারেল ম্যানেজারের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন আর মাধবন। আর স্টেশন মাস্টার হিসেবে দেখা যাচ্ছে কে কে মেননকে । আর মাধবন, কেকে মেনন ছাড়াও পুলিশ কনস্টেবলের চরিত্রে অভিনয় করেছেন 'মির্জাপুর' খ্যাত অভিনেতা দিব্যেন্দু। আর লোকো পাইলটের চরিত্রে অভিনয় করেছেন প্রয়াত ইরফান খানের ছেলে বাবিল।

আরও পড়ুন:

  1. স্কুলের ল্যাবে অ্যামোনিয়া গ্যাস লিক, অসুস্থ শিক্ষক-সহ একাধিক ছাত্রী
  2. গ্যাস সিলিন্ডার ফেটে পুড়ল তাজপুর সমুদ্র সৈকতের 4টি হোটেল
  3. সোনারপুরে কারখানায় বিষাক্ত গ্যাস লিক, অসুস্থ 1 শ্রমিক

ABOUT THE AUTHOR

...view details