পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

Bhopal Gas Tragedy 38 years: 38 বছর কাটল, আজও যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বাঁচার লড়াই চালাচ্ছেন ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তরা

ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ের 38 বছর পূর্ণ হল (Bhopal Gas Tragedy 38 years)। 1984 সালের 2 ও 3 ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী রাতে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে হাজার হাজার মানুষ প্রাণ হারান । আজও সেই অন্ধকার রাতের যন্ত্রণা ভোগ করছেন গ্যাস ট্রাজেডির ক্ষতিগ্রস্তরা ।

bhopal-gas-tragedy-38-years-victims-pain-and-hardship-still-alive
38 বছর কাটল, আজও যন্ত্রণা বুকে নিয়ে বাঁচার লড়াই চলছে ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের

By

Published : Dec 2, 2022, 7:34 PM IST

ভোপাল, 2 ডিসেম্বর: স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে সবচেয়ে বেদনাদায়ক স্মৃতিগুলির মধ্যে অন্যতম ভোপাল গ্যাস বিপর্যয় (Bhopal Gas Tragedy 38 years)৷ 38 বছর আগের সেই ক্ষত আজও তাজা মানুষের মনে ৷ 1984 সালের 2 এবং 3 ডিসেম্বরের মাঝের রাতে ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানা থেকে নির্গত বিষাক্ত গ্যাস মিথাইল আইসোসায়ানেট প্রাণ কেড়ে নিয়েছিল হাজার হাজার মানুষের ৷

কী ঘটেছিল সেই রাতে ?

1984 সালের (Bhopal gas tragedy 1984) 2 এবং 3 ডিসেম্বরের মধ্যবর্তী রাতে, ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার প্ল্যান্ট নম্বর সি থেকে গ্যাস লিক হতে শুরু করে, যা ডাও কেমিক্যালসের অংশ ছিল ৷ সেখানে মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস জলের সঙ্গে মিশ্রিত হয়েছিল । প্ল্যান্ট ঠান্ডা করতে এটি মিশ্রিত করা হয় ৷ তবে সেই রাতে এর সংমিশ্রণে ভুল হয়ে যায় এবং জল লিক হয়ে পৌঁছে যায় ট্যাঙ্কে । তার প্রভাবে প্ল্যান্টের 610 নম্বর ট্যাঙ্কে তাপমাত্রা বৃদ্ধির সঙ্গে চাপ বেড়ে যায় এবং সেখান থেকে গ্যাস বের হতে থাকে । কিছুক্ষণের মধ্যেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় । বিষাক্ত গ্যাস বাতাসে মিশে আশপাশের এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে এবং তারপর যা ঘটে তা ভোপাল শহরের কালো ইতিহাস হয়ে থেকে গিয়েছে (Bhopal gas tragedy news)।

আশপাশের বস্তিগুলোও ক্ষতিগ্রস্ত

বিষাক্ত গ্যাস প্রথমে কারখানার পাশে নির্মিত বস্তিতে পৌঁছয় । সেখানে দরিদ্র পরিবারগুলি বসবাস করত । গ্যাসটি এতটাই বিষাক্ত ছিল যে, তার সংস্পর্শে এলে মাত্র তিন মিনিটে মানুষ মারা যায় । গ্যাসের প্রভাবে বিপুল সংখ্যক মানুষ যখন চোখ ও শ্বাসকষ্টের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছন, তখন চিকিৎসকরাও বুঝে উঠতে পারেননি কী চিকিৎসা করতে হবে । রোগীর সংখ্যাও এত বেশি ছিল যে তিল ধারণের জায়গা ছিল না ৷

10 ঘণ্টা ধরে চলে গ্যাসের তাণ্ডব

গ্যাস লিকের খবর নেতা-কর্মকর্তাদের কাছে পৌঁছনোর আগেই সেখানে বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের কাজ শুরু হয়ে যায় । গ্যাস লিক বন্ধের চেষ্টা চলে ৷ প্রায় 10 ঘণ্টার পরিশ্রমের পর বিষাক্ত গ্যাস লিক হওয়া বন্ধ করা সম্ভব হয় । কিন্তু ততক্ষণে এই বিষাক্ত গ্যাস ভোপালে ব্যাপক ধ্বংসলীলা চালিয়ে ফেলেছে ।

আরও পড়ুন:20 বছর ধরে নমুনা আগলে চিকিৎসক, চেয়ে দেখেনি সরকার

ক্যানসারের কবলে আক্রান্তরা

ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ের ফলে বিষাক্ত গ্যাস শরীরে গিয়ে অনেকেই ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে পড়েন ৷ তাঁদের চিকিৎসার জন্য, গ্যাস ত্রাণ বিভাগ, এইমসের সঙ্গে চুক্তি করে এই রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয় । তবে, গ্যাস আক্রান্তদের সংগঠন প্রশ্ন তুলেছে, এইমস-এ যখন ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য উন্নত চিকিৎসক নেই, তখন সেখানে কীভাবে চিকিৎসা হবে এবং যদি করা হয়, তাহলে খরচ কে বহন করবে ? সংস্থাগুলি বলছে, প্রায় এক বছর আগে হাইকোর্ট ভোপাল এইমস-এ গ্যাস আক্রান্তদের চিকিৎসার কথা বলেছিলেন ।

গ্যাস আক্রান্তের আয়ুষ্মান কার্ড নেই

ভোপালে বিষাক্ত গ্যাসের কবলে পড়া মানুষদের চিকিৎসা হয় মূলত ভোপাল মেমোরিয়াল হাসপাতাল এবং গ্যাস রাহাত হাসপাতালে ৷ কিন্তু চিকিৎসকের অভাবে হাসপাতালের অনেক বিভাগই বন্ধ ৷ রোগীরা চিকিৎসার জন্য বেসরকারি হাসপাতালে ঘুরে বেড়াচ্ছেন । রাজ্য সরকার তাঁদের আয়ুষ্মান প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত করেছে ৷ তবে সবাই এখনও সেই পরিষেবা পাননি ৷ তাই বহু লোককে চিকিত্সা না পেয়ে দুর্ভোগে পড়তে দেখা গিয়েছে ৷ আয়ুষ্মান কার্ড না থাকায় অনেকে চিকিত্সা থেকে বঞ্চিতও হচ্ছেন ।

অতিরিক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি

1984 সালে ভোপালে ভয়াবহ গ্যাস ট্র্যাজেডির কারণে, মানুষ এখনও রোগের শিকার হচ্ছে । আজও হাসপাতালে ঘুরতে হয় সেই সব মানুষদের । সরকার এই গ্যাসে আক্রান্ত 90 শতাংশ মানুষ আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বলে মনে করে । যদিও বাস্তব তা নয় । বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্তদের জন্য কাজ করা স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মতে, এই ঘটনায় 70 শতাংশ মানুষ সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন । সরকার সুপ্রিম কোর্টে যে পরিসংখ্যান পেশ করেছে, তাতে বলা হয়েছে যে এই মারাত্মক গ্যাসের কারণে মাত্র 5 হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে । যদিও সংস্থাগুলো বলছে, এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় এ পর্যন্ত 15 হাজার 300 জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন । সরকারি নথি এবং হাসপাতালের নথি অনুযায়ী, এটা স্পষ্ট যে গ্যাসের 90% আক্রান্ত ব্যক্তি এখনও দীর্ঘস্থায়ী রোগের কারণে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ।

এই গ্যাসের প্রভাব সারাজীবন স্থায়ী হয়

ভোপাল গ্যাস বিপর্যয়ে আক্রান্তদের জন্য কাজ করা সদভাবনা ট্রাস্টের সদস্য রচনা ধিংড়া বলেন, "ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার অভ্যন্তরীণ নথিতে এটাও স্পষ্টভাবে লেখা আছে যে, একবার মিথাইল আইসোসায়ানেট গ্যাস শরীরে গেলে তার প্রভাব সারা জীবন শরীরে থেকে যায় । যতই চিকিৎসা করা হোক না কেন, তা সারে না ।" তিনি বলেন যে, গত 11 বছর ধরে, গ্যাস ভুক্তভোগীদের সংগঠনগুলি রাজ্য সরকারকে অন্তত যারা মারা গিয়েছে তাঁদের সঠিক পরিসংখ্যান সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরার জন্য অনুরোধ করে আসছে, যাতে ডাও কেমিক্যাল এবং ইউনিয়ন কার্বাইড থেকে সঠিক ক্ষতিপূরণ পাওয়া যায় ।

শুধু বার্ষিকীতেই স্মরণে বিপর্যয়

38 বছর কাটল ৷ এখনও সমস্যার সমাধান হয়নি ৷ শুধু বার্ষিকীতেই এই দিনটি স্মরণ করা হয় । কিছু জায়গায় কিছু এনজিও ক্ষতিগ্রস্তদের সমর্থনে প্রতিবাদ করে । ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়তি ক্ষতিপূরণ দেওয়ার অনেক প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয় । কিন্তু এই দিনটি চলে গেলেই সব চলে যায় বিস্মৃতির অতলে ৷ ইউনিয়ন কার্বাইড কারখানার মালিকানা আমেরিকান কোম্পানির হাতে থাকায় সব সময়ই দাবি উঠেছে বিষাক্ত গ্যাসে আক্রান্তদের ডলারের বর্তমান মূল্যে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে । এই আবেদন যদিও এখনও সরকারি ফাইলে তালাবন্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে । 38 বছর ধরে যন্ত্রণা বুকে নিয়েই দিন কাটছে ক্ষতিগ্রস্তদের ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details