ফওজ়িয়া কুফি । একজন আন্দোলনকারী । আফগানিস্তানের জাতীয় আইনসভার সদস্য । একজন লেখিকা । আর এই সব কিছুর উপরেও তিনি একজন মহিলা, যিনি থাকেন বাদাকশন প্রদেশে । একজন মহিলা যে একজন পুরুষের সমান, তা ওই দেশে কখনও মানা হয়নি । দুই দশক ধরে লড়াই করে সেই বিষয়টিতে তিনি পরিবর্তন আনতে পেরেছেন ।
কুফিকে থামাতে তাঁকে হত্যার একাধিক চেষ্টা করা হয়েছে । চলতি বছরের অগস্ট মাসে তাঁকে হত্যা করার শেষ চেষ্টাটি করা হয়। কাবুল শহরে ঘটনাটি ঘটে । যদিও তিনি সেখান থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছেন । ফওজ়িয়া এখন দোহায় রয়েছেন । সেখানে তালিবানের সঙ্গে সমঝোতা সংক্রান্ত আলোচনা করছেন ।
- এই শান্তি প্রক্রিয়া নিয়ে দোহা থেকে ETV ভারতের বিলাল ভাটের সঙ্গে একান্ত সাক্ষারকারে ফওজ়িয়া কুফি ।
ETV ভারত : আফগানিস্তানের রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় আপনাকে সমান অধিকার দেওয়ার বিষয়ে তালিবানরা কোনও দিনই সম্মত ছিল না । অথচ তাঁদের সঙ্গেই আপনি আলোচনার এক টেবিলে বসতে চলেছেন । এই বিষয়টি যখন আপনি প্রথমবার শুনলেন, তখন আপনার কী প্রতিক্রিয়া হয়েছিল ?
ফওজ়িয়া :আমি মনে করে আফগানিস্তানের মহিলারা তালিবান সরকারের শিকার । আমাদের মৌলিক অধিকার দেওয়া হয়নি । শিক্ষা, স্বাস্থ্য, সামাজিক ও রাজনৈতিক অংশগ্রহণের অধিকার দেওয়া হয়নি । আমরা চাই না যে মহিলারা আবার যুদ্ধের শিকার হোক । এই আলোচনায় অংশীদার হয়ে মহিলারা সমঝোতার টেবিলে থাকুন, এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপর্ণ বিষয় । আসলে আমরা সেই বদ্ধমূল ধারণাগুলিকে ভেঙে দিতে চাই, যা শুধু তালিবানদের সময় থেকে নয় ঐতিহাসিক ভাবে আফগানিস্তানে রয়েছে । সমস্ত শান্তি আলোচনাগুলিতে পুরুষরাই থাকেন । তাই আমি মনে করি এই ক্ষেত্রে ইতিহাস তৈরি হল । আর এতে আমি নিজেকে আরও শক্তিশালী অনুভব করছি । কিন্তু এর সঙ্গে অনেক দায়িত্বও চলে এল ।
ETV ভারত : মহিলাদের অধিকার, শিশু কন্যাদের অধিকার এবং সমগ্র অঞ্চলে মহিলাদের উন্নতির জন্য আপনি সংসদের ভিতরে ও বাইরে সরব হয়েছেন । তারা কি সত্যিই মহিলাদের জন্য সমান অধিকারের ব্যবস্থা করবেন ? এই আলোচনা থেকে আপনি কতটা আশাবাদী ?
ফওজ়িয়া : প্রথমত, আমাদের এই বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্ট হতে হবে আফগানিস্তানে কোনও একটি নির্দিষ্ট মতাদর্শ কতৃত্ব স্থাপন করবে না । ইসলামের ব্যখ্যার মাধ্যমে মৌলবাদীদের মতাদর্শ হোক বা লিবারেলদের মতাদর্শ । আমাদের আরও উন্নত জীবন ও ইসলামের আরও উন্নত সংজ্ঞার উপর নির্ভর করে এগিয়ে চলতে হবে । তাই আমরা এমন একটা আফগানিস্তানের জন্য লড়াই করছি, যেখানে আমরা আমাদের প্রতিবেশীর সঙ্গে শান্তিতে বসবাস করতে পারি । লিঙ্গের ঊর্ধ্বে উঠে আমরা এমন একটা আফগানিস্তান চাই যা সকলের জন্য সমান ভাবে প্রতিনিধিত্ব করবে । আফিগানিস্তানের মহিলাদের জন্য নারী শিক্ষাই মূল ভিত্তি । এটা আফগানিস্তানের পুরুষদের জন্যও সমান ভাবে প্রযোজ্য । শিক্ষার সুযোগ না পেলে কোনও রকমের উন্নতি সম্ভব নয় । আমরা এখন দোহায় রয়েছি । আমরা নীতি ও পদ্ধতি এবং অন্য কার্যকরী দিকগুলি নিয়ে আলোচনা করছি । কারণ, আমরা চাই ভিত্তিটা সঠিক হোক । যখন ভিত্তিটা সঠিক ভাবে করা হবে, তখন এই আলোচনাগুলি আরও সহজ হয়ে যাবে । এই পর্যায়ে সম্ভবত আমরা মহিলাদের অধিকার নিয়ে আলোচনা করতে পারছি না । কারণ, এটা খুবই স্পর্শকাতর বিষয় । সবে আলোচনা শুরু হয়েছে । এটা যত এগোবে, আশা করছি যে আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলিকে উত্থাপন করা যাবে । যাতে একজনের মতামত অন্যের উপর চাপিয়ে দেওয়ার বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায় । আমরা এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি করতে চাই, যেখানে সবাই শান্তিতে ও সমৃদ্ধিতে জীবনযাপন করতে পারেন ।
ETV ভারত : একেবারে শুরুতে তালিবানরা সকলের কাছে স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে তারা আফগানিস্তানে ইসলামের আইন চায় । এটা নিয়ে অন্য দলগুলির প্রতিক্রিয়া কী এবং আপনি কি দেশকে নতুন কর্মসূচির মধ্যে দেখতে চান ?