পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ তৈরির আসল উদ্দেশ্য সফল হবে তো ? - চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ

2012 সালে টাস্ক ফোর্স থেকে দাবি জানানো হয়, চিফ অব স্টাফ কমিটির একজন চেয়ারম্যান চাই। চিফ অব স্টাফ কমিটি সামরিক বাহিনীর তিনটি বিভাগের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে তৈরি।

image
চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ

By

Published : Dec 30, 2019, 10:38 AM IST

2001 সালে কারগিল যুদ্ধের পর একটি মন্ত্রিগোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল । সেই গোষ্ঠী বিভিন্ন বিষয় পর্যবেক্ষণ করে সেনাবাহিনীর তিনটি বিভাগের মধ্যে সমন্বয়ের বিষয়ে একটি স্থির সিদ্ধান্তে এসেছিল । সেই সময় দেশের নিরাপত্তার ফাঁকফোকড় খুঁজতে গঠিত সেই উচ্চপর্যায়ের কমিটি জানায়, একজন ‘সিঙ্গল পয়েন্ট’ অফিসার প্রয়োজন, যিনি প্রতিটি সামরিক বিভাগ পরিচলনারই ভার নেবেন ৷

2012 সালে টাস্ক ফোর্স থেকে দাবি জানানো হয়, চিফ অব স্টাফ কমিটির একজন চেয়ারম্যান চাই। চিফ অব স্টাফ কমিটি সামরিক বাহিনীর তিনটি বিভাগের শীর্ষকর্তাদের নিয়ে তৈরি।

কুড়ি বছর পর, নানা রকম রাজনৈতিক ঘাতপ্রতিঘাত কাটিয়ে অবশেষে সরকার সেই পরামর্শকে মান্যতা দিয়েই এই পদ তৈরি করল সরকার । গত 15 অগাস্ট, স্বাধীনতা দিবসের ভাষণ দেওয়ার সময়ই মোদি এই চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (CDS) তৈরির বিষয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করেন প্রধানমন্ত্রী । কিন্তু, সে সময় ঠিক করা যায়নি, কাকে এই পদে বসানো হবে । বিষয়টি নিয়ে অনেক টালবাহানার পর অবশেষে কেন্দ্র একটা সিদ্ধান্তে আসতে সক্ষম হল । CDS গঠনের বিষয়ে যে প্রেস বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল তাতে এর বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে । একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যকে সামনে রেখে এই পদটি গঠন করা হয়েছে বলেও সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে । সরকার যে ভবিষ্যতে সেনাবাহিনী সংস্কারকে সামনে রেখে এই পদক্ষেপ করেছে, সেকথাও বলা হয়েছিল বিজ্ঞপ্তিতে । এ বার আমি CDS-এর বিষয়ে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তুলে ধরছি ।

তিন বছরের নির্দিষ্ট সময়সীমা দেওয়া হয়েছে CDSকে । এই সময়ের মধ্যে প্রশিক্ষণ, প্রয়োজনীয় সহযোগিতা-সহ প্রতিটি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ করতে হবে । এই পদটির অন্যতম গুরুত্ব হল সম্পূর্ণ ভিন্ন ধাঁচে প্রশিক্ষণের রূপরেখা তৈরি করা । তিন বাহিনীর সমন্বয়ে কীভাবে আরও প্রশিক্ষিত-দক্ষ সেনা তৈরি করা যায় সেই বিষয়টির দিকে নজর দিতে হবে ।

CDS-এর অপর একটি গুরুদায়িত্ব হল যৌথ অপারেশন চালোনোর ক্ষেত্রে কীভাবে পদক্ষেপ করা হবে, সে বিষয়ে ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করা । কোনও বড় ধরনের যৌথ সামরিক অপারেশনের ক্ষেত্রে মাঝে মধ্যেই সমন্বয়ের অভাবে দেখা গেছে, ভবিষ্যতে যাতে এমন ঘটনা না ঘটে সে দিকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে হবে । অতি সম্প্রতি চিন সীমান্তে কাজের ক্ষেত্রে তিন বাহিনীর মধ্যে সমঝোতার ফাঁক চোখে পড়েছে । আশা করা যায় নতুন পদটি তৈরি হওয়ার পর এই সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে ।আভ্যন্তরীণ ক্ষেত্রেও জরুরি পদক্ষেপের ক্ষেত্রে CDS একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে । বাজেটে অর্থ বরাদ্দ এবং প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে সঠিক চিত্রটা তুলে ধরতে পারবে । স্থল-বায়ু-জল তিন বাহিনীর ক্ষেত্রেই অনেক কিছু প্রয়োজনীয় বিষয় খামতি থেকে গেছে, এক্ষেত্রে CDS-এর ভূমিকা উল্লেখযোগ্য । প্রয়োজন অনুসারে সমস্যা সমাধানের বিষয়টি এবার থেকে গুরুত্ব পাবে বলে মনে করা হচ্ছে ৷

আগামী দিনে তথ্যপ্রযুক্তি, সাইবার হামলা, মহাকাশে নজরদারি-র মতো অত্যাধুনিক ক্ষেত্রে হামলার পরিমাণ বাড়তে চলেছে । স্বাভাবিকভাবেই এই ক্ষেত্রগুলির দিকে আগামী দিনে নজরদারি বাড়াতে হবে । CDS-এর অন্যতম দায়িত্ব হচ্ছে বিষয়টির দিকে নজরদেওয়া, এবং প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা । CDS-কে শক্তিশালী করে গড়ে তোলার কোনও পরিকল্পনা কি সরকারের আছে । আমার মনে হয়, কোনও বড় অপারেশনের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সীমাবদ্ধতা একটি বড় ভূমিকা নেবে । বিষয়টি নিয়ে মন্তব্য করা একটু বিতর্কিত । কিন্তু, তাও বলতে হবে সেনা অভিযানের পরিকল্পনা বিষয়ে তার কিছু মতামত থাকবে । তবে গুরুত্বপূর্ণ সময়, গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এই ভূমিকা কেমন হবে না নিয়ে সন্দেহই থেকে যায় । শেষ পর্যন্ত কি রাজনৈতিক নেতাদের মতামতের ভিত্তিতেই পদক্ষেপ করতে হবে, তাঁরাই নির্দেশ দেবেন কখন সার্জিকাল স্টাইক হবে ।

তবে সবদিক বিবেচনা করা একটা কথা বলা যায়, এই পদটি তৈরির পিছনে অন্যতম কারণ আবেগ । তিন বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন করার হাতিয়ার এটিই । সংকীর্ণতা দূর করতে এবং প্রতিরক্ষা খাতে বাজেট বরাদ্দের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারবে । একই সঙ্গে CDS কূটনীতিক, প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ, প্রাক্তন সেনা আধিকারীকদের সঙ্গে মত বিনিময় করতে পারবেন । তাদের থেকে প্রয়োজনীয়
উপদেশ আদান-প্রদানের মাধ্যমে কাজ করতে পারবেন ।

লেখক : লেফ. জেনেরাল (অবসরপ্রাপ্ত) ডি এস হোডা (2016-এর সার্জিকাল স্টাইকের নেতৃত্বে ছিলেন )

ABOUT THE AUTHOR

...view details