দিল্লি, 21 ফেব্রুয়ারি : লোকসভায় বাজেট আলোচনার সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন দাবি করেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পরিষ্কার । এ বিষয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশও করেন । অথচ, মাস দু’য়েক আগে তিনিই বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছিলেন । বলেছিলেন, দেশে কোনওরকম অর্থনৈতিক মন্দা নেই । প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) সন্তোষজনক ছিল বলেও জানিয়েছিলেন তিনি । সীতারমন অবশ্য নিজে ফিনান্সিয়াল সার্ভে ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন ।
বেশ কয়েকদিন ধরেই CAG, রিজার্ভব্যাঙ্ক, সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (CSI) এবং বিশ্বব্যাঙ্কের মতো সংস্থাগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করছিল ভারতের ক্রমহ্রাসমান আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে । বিশেষ করে গাড়ি, শক্তি উৎপাদন, প্রাকৃতিক গ্যাস, কৃষি নানা ক্ষেত্রে বৃদ্ধির শ্লথগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা । তবে, সরকার এই সতর্কবার্তাগুলিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি । এখন কিছু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এমন দেখানো হচ্ছে যাতে সব ব্যবস্থাই ভাল ফল দিচ্ছে । অন্তত অর্থমন্ত্রীর কথাবার্তায় তেমনই স্পষ্ট হয়েছে । অর্থমন্ত্রী পরিসংখ্যান দেখিয়ে দাবি করেছেন যে, 2019 সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে যে পরিমাণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) হয়েছে, তার পরিমাণ তার আগের বছরের তুলনায় তিন বিলিয়ন কম । FDI-এর জন্য সবচেয়ে পছন্দের দেশের একটি তালিকা সপ্তাহ তিনেক আগে প্রকাশ করেছে UNO। সেই তালিকা অনুযায়ী, প্রথম তিন স্থানে রয়েছে অ্যামেরিকা, চিন ও সিঙ্গাপুর । এরপর রয়েছে ব্রাজিল, ব্রিটেন, হংকং এবং ফ্রান্স । তালিকার আট নম্বর জায়গাটি অর্জন করতে পারে ভারত । ভারতে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ অর্থাৎ FDI হয়, তা অ্যামেরিকায় হওয়া FDI-এর এক পঞ্চমাংশ । চিনের FDI-এর পরিমাণ ভারতের তিনগুণ । এই পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রকের সার্থকতা প্রচারের দামামা বাজানোটা সত্যিই বিস্ময়কর ।
যদি গত 20 বছরের পরিসংখ্যান দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে, ভারতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে FDI এসেছে 2016 সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে । সেই পর্যায়ে পৌঁছতে না পেরে ছ'মাস আগে সরকার বেশ কিছু সংস্কারের কথা ঘোষণা করে । কয়লাখনি, চুক্তিবদ্ধ উৎপাদনে 100 শতাংশ FDI-র কথা ঘোষণা করা হয়েছে । একক ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু ছাড়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে । এই সংস্কারগুলি কতটা ভালো ফল দিতে পারে, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে সব মহলে। বিমান পরিবহণ ও প্রতিরক্ষায় FDI-এর সুযোগ থাকলেও শেষ পাঁচ বছরে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র 1800 কোটি । কেন লক্ষ্যপূরণ করা গেল না বা কেন আরও বিনিয়োগ সম্ভব হল না, তা পর্যালোচনা না করে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী সরকার এখনও গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখিয়ে চলেছে ।