পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

অর্থনীতি নিয়ে কল্পরাজ্যে বাস করা কেন ? - কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন

দেশের অর্থনৈতিক বৃদ্ধি যে ক্রমহ্রাসমান, তা স্পষ্ট হয়েছে ধীরে ধীরে। 2016 সালের পর দেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের পরিস্থিতিও সেই পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। এক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি একযোগে কাজ করে হাল ফেরাতে পারে অর্থনীতির।

ছবি
ছবি

By

Published : Feb 21, 2020, 8:26 AM IST

Updated : Feb 21, 2020, 9:38 AM IST

দিল্লি, 21 ফেব্রুয়ারি : লোকসভায় বাজেট আলোচনার সময় কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন দাবি করেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এখন অনেকটাই পরিষ্কার । এ বিষয়ে তিনি সন্তোষ প্রকাশও করেন । অথচ, মাস দু’য়েক আগে তিনিই বিষয়টিকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছিলেন । বলেছিলেন, দেশে কোনওরকম অর্থনৈতিক মন্দা নেই । প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) সন্তোষজনক ছিল বলেও জানিয়েছিলেন তিনি । সীতারমন অবশ্য নিজে ফিনান্সিয়াল সার্ভে ডেভেলপমেন্টের দায়িত্বে ছিলেন ।

বেশ কয়েকদিন ধরেই CAG, রিজার্ভব্যাঙ্ক, সেন্ট্রাল স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট (CSI) এবং বিশ্বব্যাঙ্কের মতো সংস্থাগুলি উদ্বেগ প্রকাশ করছিল ভারতের ক্রমহ্রাসমান আর্থিক বৃদ্ধি নিয়ে । বিশেষ করে গাড়ি, শক্তি উৎপাদন, প্রাকৃতিক গ্যাস, কৃষি নানা ক্ষেত্রে বৃদ্ধির শ্লথগতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তারা । তবে, সরকার এই সতর্কবার্তাগুলিকে তেমন গুরুত্ব দেয়নি । এখন কিছু সংশোধনমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে এমন দেখানো হচ্ছে যাতে সব ব্যবস্থাই ভাল ফল দিচ্ছে । অন্তত অর্থমন্ত্রীর কথাবার্তায় তেমনই স্পষ্ট হয়েছে । অর্থমন্ত্রী পরিসংখ্যান দেখিয়ে দাবি করেছেন যে, 2019 সালের এপ্রিল থেকে নভেম্বরের মধ্যে যে পরিমাণ প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ (FDI) হয়েছে, তার পরিমাণ তার আগের বছরের তুলনায় তিন বিলিয়ন কম । FDI-এর জন্য সবচেয়ে পছন্দের দেশের একটি তালিকা সপ্তাহ তিনেক আগে প্রকাশ করেছে UNO। সেই তালিকা অনুযায়ী, প্রথম তিন স্থানে রয়েছে অ্যামেরিকা, চিন ও সিঙ্গাপুর । এরপর রয়েছে ব্রাজিল, ব্রিটেন, হংকং এবং ফ্রান্স । তালিকার আট নম্বর জায়গাটি অর্জন করতে পারে ভারত । ভারতে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ অর্থাৎ FDI হয়, তা অ্যামেরিকায় হওয়া FDI-এর এক পঞ্চমাংশ । চিনের FDI-এর পরিমাণ ভারতের তিনগুণ । এই পরিস্থিতিতে অর্থমন্ত্রকের সার্থকতা প্রচারের দামামা বাজানোটা সত্যিই বিস্ময়কর ।

যদি গত 20 বছরের পরিসংখ্যান দেখা যায়, তাহলে দেখা যাবে, ভারতে সবচেয়ে বেশি পরিমাণে FDI এসেছে 2016 সালের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে । সেই পর্যায়ে পৌঁছতে না পেরে ছ'মাস আগে সরকার বেশ কিছু সংস্কারের কথা ঘোষণা করে । কয়লাখনি, চুক্তিবদ্ধ উৎপাদনে 100 শতাংশ FDI-র কথা ঘোষণা করা হয়েছে । একক ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু ছাড়ের কথা ঘোষণা করা হয়েছে । এই সংস্কারগুলি কতটা ভালো ফল দিতে পারে, তা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে সব মহলে। বিমান পরিবহণ ও প্রতিরক্ষায় FDI-এর সুযোগ থাকলেও শেষ পাঁচ বছরে বিনিয়োগ হয়েছে মাত্র 1800 কোটি । কেন লক্ষ্যপূরণ করা গেল না বা কেন আরও বিনিয়োগ সম্ভব হল না, তা পর্যালোচনা না করে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাসী সরকার এখনও গয়ংগচ্ছ মনোভাব দেখিয়ে চলেছে ।

বাংলাদেশে 2018 সালের তুলনায় 2019 সালে FDI-এর পরিমাণ অনেকটাই কমেছে । পাকিস্তানে FDI-এর পরিমাণ কমেছে প্রায় 20 শতাংশ । আমরা যদি দক্ষিণ এশিয়ার পরিস্থিতির দিকে তাকাই, তা হলে দেখতে পাব, একমাত্র ভারতেই FDI-এর পরিমাণ অন্তত পরিসংখ্যানগতভাবে বেড়েছে । তবে তা কোনওভাবেই পাঁচ লাখ কোটি ডলারের অর্থনীতি বা 8 শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রার সমতূল নয় । FDI-র ক্ষেত্রে বিশ্বের প্রথম তিনটি দেশের মধ্যে আসতে গেলে ভারতকে সুচারু পরিকল্পনা করতে হবে । দক্ষ শ্রমিক এবং স্বাস্থ্যক্ষেত্রে পিছিয়ে থাকার জন্য পিছিয়ে পড়ছে ভারত । ফলে উন্নতি করতে গেলে ঠিক কোন কোন ক্ষেত্রে বিশেষ জোর দিতে হবে, তা পরিষ্কার ।

মাস চারেক আগে নিউ ইয়র্কের ব্লুমবার্গ গ্লোবাল বিজনেস ফোরাম থেকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ভারতে বিনিয়োগ করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিলেন । দাবি করেছিলেন, বিনিয়োগের জন্য এ দেশে রয়েছে অসাধারণ সুযোগ । ভারতে বিনিয়োগ করলে একাধিক সুবিধার কথাও ঘোষণা করেন তিনি । কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, প্রশাসনিক স্তরে উদ্যোগের অভাব একাধিক সমস্যার সৃষ্টি করেছে । এ দেশে সরকার চেষ্টা করলেও এখনও বহু সমস্যা রয়ে গিয়েছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অর্থভাণ্ডার (IMF)। সমাধানের কোনও সহজ ও চটজলদি পথ না মেলায় ভারত ইন্টারন্যাশনাল কম্পিটিটিভ ইন্ডেক্সে 30 ধাপ নেমে গিয়েছে ভারত । ফেভারেবল কমার্স বেসিসে 63 নম্বর স্থানে থাকলেও সমস্যার সমাধান হওয়ার কোনও ইঙ্গিত নেই । কেউ ইচ্ছা করলে, নিউজিল্যান্ডে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে সম্পত্তির নথিভুক্তি করে 12 ঘণ্টার মধ্যে ব্যবসা শুরু করে দিতে পারেন । প্রশাসন থেকেই সব ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে। সেই তুলনায়, এ দেশে সম্পত্তি নথিভুক্তি করতে 154 দিন ও ব্যবসা শুরু করতে 136 দিন সময় লাগে । ভারতে দুর্নীতি, বিদ্যুতের অপ্রতুলতা, পরিবহণ ব্যবস্থা ইত্যাদি একেবারে তৃণমূলস্তরের সমস্যা নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে ফোর্বস । কিন্তু এগুলি নিয়ে এখনও সেভাবে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি ।

2024-25 সালের মধ্যে 100 লাখ কোটির তহবিল তৈরির লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হলেও তার প্রথমিক কাজও সে ভাবে শুরু হয়নি । নিয়মের বেড়াজালকে যতটা সম্ভব সরল করে বিদেশি বিনিয়োগ টানতে যখন হংকং এবং সিঙ্গাপুর তীব্র প্রতিযোগিতায় নেমেছে, তখন ভারত প্রশাসনিক লাল ফিতে থেকে বেরনোর পথ খুঁজে পায়নি । কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারগুলি যখন একযোগে কাজ করে সমস্যা কাটানোর চেষ্টা করবে, তখনই বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ বাড়তে পারে।

Last Updated : Feb 21, 2020, 9:38 AM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details