পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

ভারতের কৃষিক্ষেত্র হবে জৈবভিত্তিক, দায়িত্বে কে ? - জৈব চাষ

কেন্দ্রীয় বাজেটে জৈব কৃষির আওতাধীন জমির পরিমাণ বাড়ানোর কথ বলা হয়েছে । অথচ তার দায়িত্ব কে নেবে তা নিয়েই কোনও কিছু স্পষ্ট নয় । দিল্লি থেকে ইন্দ্রশেখর সিংয়ের প্রতিবেদন ।

Representative Image
ছবিটি প্রতীকী

By

Published : Feb 20, 2020, 1:46 PM IST

2020-21 সালের কেন্দ্রীয় বাজেট কৃষিক্ষেত্র নিয়ে খুবই স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে । মোদি সরকার কৃষিব্যবস্থাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে সুবিধা দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ । অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমন কবিতার একটি পংক্তির মাধ্যমে একটি পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন । এই পরিকল্পনা অনুযায়ী, 2020-21 সালের মধ্যে জৈব কৃষির আওতাধীন জমির পরিমাণ বাড়িয়ে 4 লাখ হেক্টর করা হবে । পাশাপাশি জৈব কৃষির আওতায় যাতে আরও জমিকে অন্তর্ভুক্ত করা যায় তাই সবুজ বিপ্লব বাজেটে পরম্পরাগত কৃষি বিকাশ যোজনায় (CSS) 500 কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । ইতিমধ্যে জৈব কৃষির আওতায় অতিরিক্ত 0.51 লাখ হেক্টর জমি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে । ফলে আরও বেশি পরিমাণে জৈব খাদ্যের উৎপাদন করা সম্ভব হবে যা স্থানীয়দের কাজেও আসবে । আবার রপ্তানিও করা যাবে । APEDA-র হিসাব অনুযায়ী ভারতের জৈব পণ্য রপ্তানি বাবদ 2018-19 সালে আয় ছিল 5,151 কোটি টাকা । 2017-19 সালের তুলনায় 49 শতাংশ বেশি ।

দেশের কৃষি খামার ব্যবস্থায় কৃষি ও পরিবেশগত পদ্ধতিসমূহের পুনর্ব্যবহারকে নিশ্চিত করতে অর্থমন্ত্রী আরও কিছু প্রশংসনীয় পদক্ষেপ ঘোষণা করেছেন । তার মধ্যে রয়েছে জৈব পণ্যের বাজারে গতি আনার জন্য "জৈবিক খেতি" সংক্রান্ত একটি অনলাইন পোর্টাল তৈরি করার মতো পদক্ষেপ । রয়েছে গ্রামীণ হিমঘর প্রকল্পের উন্নতির স্বার্থে "ধন্য লক্ষ্মী"-র মতো উদ্যোগও । এই সমস্ত পদক্ষেপের ঘোষণা পীযূষ গোয়েলের 2019 সালের বাজেট বক্তৃতার সঙ্গে সাযুজ্যপূর্ণ । সেখানে জৈব খাদ্য উৎপাদনকে মোদি সরকারের 2030 সালের দূরর্দশী ভবিষ্যৎপরিকল্পনার অষ্টম মাত্রা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল ।

2025 সালের মধ্যে দেশের রপ্তানি বাবদ আয়ের পরিমাণ 50 বিলিয়ন মার্কিন ডলারে যাতে পৌঁছায় তার জন্য যখন APEDA জৈব ফসলের রপ্তানি বাড়াতে চাইছে তখন জৈব কৃষি এবং বীজ প্রভৃতির সঙ্গে যুক্ত বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন, জৈব ভারতের বীজ বপন করবে কে? আমাদের কি আদৌ যথেষ্ট পরিমাণে খাঁটি জৈব বীজ রয়েছে? এই স্তরের রপ্তানি কখনওই শুধুমাত্র জমির প্রতিযোগিতা কিংবা বীজের বৈচিত্র দিয়ে সম্ভব নয় । এই বৃদ্ধি নিশ্চিত করার জন্য জৈব বীজ বপনের আরও দক্ষ প্রক্রিয়া আমাদের প্রয়োজন । আবার, উৎপাদনের এই গতি ধরে রাখতে কৃষকদের উন্নত মানের জৈব বীজও প্রয়োজন ।

অপরিশোধিত জৈব নয়

ভারতে অধিকাংশ মানুষই অপরিশোধিত বীজকে (সেই সব বীজ যা ছত্রাকনাশক কিংবা রাসায়নিক পদার্থে আগে থেকে ডুবিয়ে রাখা হয়) জৈব ভেবে বিভ্রান্ত হন । কিন্তু বিষয়টা হল তাঁদের ভুল জানানো হয় । একটা বীজকে তখনই জৈব বলা যেতে পারে যদি তা জৈব মাটিতে জন্মায় । জৈব-পরিবেশগত কৃষি পদ্ধতি প্রয়োগের মাধ্যমে এবং জৈব হিসেবে চিহ্নিত হয় । আর সত্যিটা হল, খুব ভালো মানের জৈব বীজ কেনার বিকল্প প্রকৃতপক্ষে খুবই কম । কারণ এই দেশে এখনও জৈব বীজের বাজারের পরিধি খুব প্রাচীন ও সীমিত । অন্তত, অ্যামেরিকা বা জার্মানির গবেষণাগারে প্রস্তুত জৈব বীজের বাজারের সঙ্গে তুলনায় তো বটেই ।

জৈব খাদ্যের চাহিদার বৃদ্ধি শুরু হলে এই সংক্রান্ত নিয়মনীতি এবং উৎকর্ষমানও কঠোর হবে । জৈব চিহ্নিতকরণের যাবতীয় পরিকাঠামোগুলির মধ্যে মিল হল, সমস্ত বীজ যা থেকে জৈব খাদ্য প্রস্তুত হয়, সেগুলিকেও জৈব বলে চিহ্নিত করতে হবে । যে সব সংস্থা বীজকে জৈব বলে চিহ্নিত করে, বর্তমান প্রযুক্তির মাধ্যমে তারা বীজের অবশিষ্টাংশের হদিশ পেতে পারে । পরবর্তীকালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং আমেরিকায় জৈব বীজের ভবিষ্যত নির্ধারণে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে উঠতে পারে ।

জৈব ভারতের বীজ বপন করুন

রিপোর্ট অনুযায়ী 2024 সালের মধ্যে বিশ্বব্যপী জৈব বীজের বাজারের মূল্য হবে 5.4 বিলিয়ন মার্কিন ডলার । সুতরাং, ভারতের উচিত গতিপথ সামান্য হলেও বদল করা । শুধুমাত্র আরও বেশি পরিমাণে জৈব খাদ্য উৎপাদন করলেই চলবে না । বরং একে জৈব বীজ উৎপাদনের হাব বা কেন্দ্র হয়ে উঠতে হবে । সরকার এবং উদ্ভিদপালকদের উচিত বিশ্বব্যাপী যে সব সংস্থা বীজকে জৈব বলে চিহ্নিত করার কাজ করে তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে জৈব বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট নিয়মনীতি তৈরি করা । এর পরবর্তী পদক্ষেপ হওয়া উচিত সিকিম, উত্তরাখণ্ড, হিমাচল এবং উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতেত জৈব বীজ উৎপাদন শুরুতে উদ্যোগী হওয়া । যেমন সিকিমের জন্য একেবারে যথার্থ । তার জন্য কেন্দ্রীয় বাজেটে কর বিরতিতে বিশেষ ছাড়ের বন্দোবস্ত করা এবং জৈব অঞ্চলে জমি লিজ় পাওয়ার শর্ত লঘু করা প্রভৃতি বিষয় অবশ্যই থাকা উচিত যাতে তা চাষি এবং উদ্ভিদপালকদের উপার্জনে স্পষ্ট প্রভাব ফেলে ।

ভারত, বিশেষ করে তার জীববৈচিত্রে ভরপুর অঞ্চল বীজ উৎপাদনের নিরিখে একেবারে সম্পদের ভান্ডার । প্রকৃতির সঙ্গে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান রেখে চাষিরা বেশি বীজ নষ্ট না করেই আরও বেশি ফসল উৎপদান করতে পারেন । আবার, এর পাশাপাশি জল এবং অন্যান্য আবাস এলাকারও সংরক্ষণ করতে পারে । ন্যাশনাল বিউরো অফ প্ল্যান্ট জেনেটিক রিসোর্সেস (NBPGR ) বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে এবং সরকারের থেকে প্রাপ্ত অর্থসাহায্যের মাধ্যমে এই সব এলাকায় জৈব বীজ উৎপাদনে উদ্যোগপতিদের আগ্রহী করে তোলা যেতে পারে । অন্যান্য সংগঠন যেমন বায়োডাইভারসিটি ইন্টারন্যাশনাল, ICAR এবং রাজ্যের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এই কর্মসূচিতে গতি আনতে পারে । বিবর্তনমূলক অংশগ্রহণমূলক জনন (EPB )-এর জন্য আঞ্চলিক ভাষায় নতুন নতুন মডিউল গড়ে তোলা প্রয়োজন যা চাষি এবং উদ্ভিদপালকদের কাছে যথেষ্ট সংখ্যায় মজুত থাকা প্রয়োজন । এই কর্মসূচি সরকারের সহযোগিতাতেই বাস্তবায়ন করা উচিত । FPO-গুলিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে ।

এক কথায় বলতে গেলে জৈব খাদ্যের বৃহত্তম রপ্তানিকারক দেশ হিসেবে ভারতকে এগিয়ে আনতে গেলে মোদি সরকারকে যে কোনও বাধা-বিপত্তি হঠানোর প্রস্তুতি নিতে হবে । জৈব বীজ শুধুমাত্র এই ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার জন্য জরুরি নয় । বরং, যদি দৃঢ়প্রতিজ্ঞভাবে সংকল্প নেওয়া যায় তাহলে বীজ রপ্তানিতে 10 শতাংশ বৃদ্ধির সরকারের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া সম্ভব । একইসঙ্গে ভারতীয় কৃষকদের উপার্জন চার গুণ বেশি বাড়ানো সম্ভব । প্রশ্ন শুধু থেকে যাবে যে, জৈব খাদ্য উৎপাদনে ভারত কি সুযোগের সদব্যবহার করতে পারবে না জৈব বীজের ক্রমবর্ধিষ্ণু বাজারের সম্ভাবনা অঙ্কুরেই বিনষ্ট হয়ে যাবে?

লেখক : অধিকর্তা - নীতি এবং প্রচার, ন্যাশনাল সিড অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্ডিয়া

ABOUT THE AUTHOR

...view details