সচেতনতার অভাব তো রয়েইছে । তার উপর আবার কোরোনা পরিস্থিতি । দুইয়ে মিলে তলানিতে মরণোত্তর দেহ এবং অঙ্গ দানের উদ্যোগ । উদ্বেগ প্রকাশ করছেন চিকিৎসক থেকে শুরু দেহ দান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত কর্মীরা । জানাচ্ছেন, গত পাঁচ মাসের গ্রাফটা সর্বোচ্চ নিম্নমুখী । দেহদানের অঙ্গীকার কার্যত হেরে যাচ্ছে কোরোনা পরিস্থিতির কাছে । কিন্তু আজ কেন হঠাৎ উঠে আসছে এই অঙ্গ দানের বিষয়টি ? আজ, 13 অগাস্ট । আন্তর্জাতিক অঙ্গদান দিবস ।
এই রাজ্য তথা দেশ মাঝে মধ্যেই সাক্ষী থেকেছে অঙ্গ দানের । মরণোত্তর দেহ দান করেছেন অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ । বাম আমলের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু মরণোত্তর দেহ দান করেন । কিন্তু যতটা অঙ্গ দান ও মরণোত্তর দেহ দান হওয়া উচিত আদৌ কি তা হয়? আজও কি এই বিষয়গুলি নিয়ে সচেতন মানুষ ? সামাজিক দিক থেকে কি আদৌ দায়বদ্ধ? উত্তরে 'না'-এর পাল্লাটাই বেশি ভারী । মানুষের মধ্যে সচেতনা বাড়ানোই আজকের দিনটির উদ্দেশ্য । যাতে আরও বেশি করে দেহ দানে তথা অঙ্গ দানে আগ্রহী হয়ে ওঠে মানুষ । দেহ দানের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবগত হন আরও বেশি করে ।
রাজ্যের মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালগুলি সূত্রে খবর, লকডাউন শুরুর সময় তথা মার্চের শেষের দিকে থেকে দেহ দানের ইচ্ছা প্রকাশ করে জমা পড়েনি আবেদন পত্র । একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার উদ্যোগে কলকাতার একটি সরকারি হাসপাতালে কয়েকটি দেহ দান হয়েছিল বটে । তবে সেগুলি এখনও মর্গেই পড়ে রয়েছে । রাজ্যের সরকারি-বেসরকারি সব হাসপাতালগুলির চিত্রই একইরকম । অঙ্গদান প্রক্রিয়া থমকে থাকায় জটিল অস্ত্রোপচারও অনেক সময় করা যাচ্ছে না বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকরা ।
কী এই অঙ্গ দান?
অঙ্গ দান বিষয়টি বোঝার আগে আমাদের আগে অঙ্গ প্রতিস্থাপন বিষয়টি জানতে হবে । অঙ্গ প্রতিস্থাপন হল এমন একটি চিকিৎসা পদ্ধতি যেখানে একজন রোগীর অকার্যকর অঙ্গ বা কলা (টিসু) সুস্থ অন্য এক ব্যক্তির অঙ্গের সাহায্যে প্রতিস্থাপিত হয় । অনেক সময়ই দেখা যায় একজন রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে গেলে অঙ্গ প্রতিস্থাপনই একমাত্র উপায় । অঙ্গ প্রতিস্থাপনের পর একজন রোগীর সুস্থভাবে বেঁচে থাকার সম্ভাবনাও বেড়ে যায় । কোনও দাতা যদি অঙ্গ দান করে থাকেন তখনই অন্য একজনের শরীরে সেই অঙ্গটি প্রতিস্থাপন সম্ভব । মৃত্যুর আগেই অনেকেই অঙ্গ বা দেহ দানের বন্ডে সই করেন । মৃত্যুর পর তাঁর কার্যকরি অঙ্গ সংগ্রহ করে একজন রোগীর শরীরে তা প্রতিস্থাপন করা হয় । তবে জীবিত অবস্থাতেও কেউ অঙ্গ দান করতে পারেন । জীবিত অবস্থায় একজন তাঁর একটি কিডনি, লিভারের অংশ, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়, অন্ত্র, রক্ত দান করতে পারেন । অঙ্গ দানের পরেও তিনি স্বাভাবিকভাবেই বাঁচতে পারবেন । তবে মৃত ব্যক্তির অঙ্গ দানের বিষয়টি শেষ পর্যন্ত আত্মীয়ের হাতেই থাকে । হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের বেশ কিছু কিছু অঙ্গ দান করা যায় ( কর্নিয়া, হার, চামরা, রক্ত কণিকা) । অন্যদিকে ব্রেন ডেথের ক্ষেত্রে 37টি অঙ্গ ও টিসু দান করা যায় । তার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন অঙ্গ যেমন কিডনি, হার্ট, লিভার, ফুসফুস । যেসব রোগীর হার্ট, কিডনি, যকৃত, অন্ত্র, ফুসফুস, অগ্ন্যাশয়ের মতো অঙ্গ সঠিকভাবে কাজ করছে না বা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তাঁদের শরীরে অঙ্গ প্রতিস্থাপন করা হয় ।
কোরোনা পরিস্থিতিতে অঙ্গ দান