মানবতার বৃহত্তর ক্ষেত্রের পরিপ্রেক্ষিতে খাদ্য সুরক্ষার সঙ্গে কৃষকদের জীবনের নিরাপত্তা অবিচ্ছিন্ন ভাবে সংযুক্ত ৷ এই মৌলিক সত্যকে অস্বীকার করে নেতারা জাতীয় কৃষিক্ষেত্রকে পিছনের সারিতে রাখার বিষয়টি বেছে নিয়েছেন ৷ একই সঙ্গে ডক্টর স্বামীনাথনের পরামর্শমূলক রিপোর্টকেও অস্বীকার করা হয়েছে ৷ ওই রিপোর্টে ডক্টর স্বামীনাথন উল্লেখ করেছিলেন যে বর্তমান পৃথিবীর পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে দেশের কৃষকদের নিয়ে একটা জাতীয় স্তরের পরিকল্পনা করা প্রয়োজন ৷ এই বিষয়টির গুরুত্ব উল্লেখ করে ওই মূল্যবান পরামর্শমূলক রিপোর্ট দিয়েছিলেন তিনি ৷
মোদি সরকার সম্প্রতি এক লাখ কোটি টাকার একটি সম্মিলীত কৃষি পরিকাঠামো তহবিল গঠন করেছে ৷ এর সঙ্গে জানানো হয়েছে যে কৃষকদের ভালো-মন্দ, কৃষির অগ্রগতি এবং গ্রামীণ উন্নয়ন এক সঙ্গে করা ও মোবাকিলা না করা গেলে দেশের সামগ্রিক অগ্রগতি মরীচিকাই থেকে যাবে ৷ ওই প্রকল্পের মাধ্যমে ভারতকে কৃষিক্ষেত্রে আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে ৷ এর মধ্যে একটা বড় অংশের পরিকাঠামোগত সুবিধা প্রদান করা হবে ৷ তার ভিতরে রয়েছে সরবরাহ সংক্রান্ত পরিষেবা, প্রাথমিক স্তরের প্রক্রিয়াগত কেন্দ্র, সারমজুত করার গুদাম, ভালো মানের পরীক্ষা কেন্দ্র, হিমঘরের সুবিধা, মান বৃদ্ধির কেন্দ্র ও অন্যান্য আরও অনেক সুবিধা ৷ যাতে একেবারে চাষের শুরু থেকে তা বিক্রি পর্যন্ত কৃষকরা সুবিধা পান ৷ কৃষক, প্রাথমিক কৃষি সমবায়, উচ্চাকাঙ্ক্ষী কৃষি-বিনিয়োগকারী, স্টার্ট আপস এবং মার্কেটিং কো-অপারেটিস, যারা কৃষকদের কাজে লাগে এবং যাদের সঙ্গে কৃষকরা নিয়মিত যোগাযোগ রেখে চলেন, তাদের বিনা সুদে ঋণ দেওয়ার ব্যবস্থা করে কেন্দ্রীয় সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ পরিকাঠামো তৈরি করতে চাইছে ৷
সরকার আশা করছে যে ফসলের দাম যতদিন না ন্যায্য হচ্ছে, ততদিন মজুত করে রাখা গেলে এবং অন্যান্য পরিষেবার মাধ্যমে এর গুণগত মান বৃদ্ধি করা গেলে, তা কৃষকদের জন্য কার্যকরী বিনিয়োগের পর্যায়ে পৌঁছতে সাহায্য করবে ৷ একই সঙ্গে এটাও হিসাব করা হয়েছে যে এর ফলে কৃষি নির্ভর শিল্পে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পাবে এবং খাদ্য অপচয়ে অনেকটাই রাশ টানা যাবে ৷ বিভিন্ন রাজ্যের কৃষি ও অন্যান্য সংযুক্ত ক্ষেত্রের মোট মূল্যের ভিত্তিতে পরিকাঠামো তহবিলের জন্য ঋণের অংশ নির্ধারণ করেছে কেন্দ্রীয় সরকার ৷ এই পদক্ষেপের ফলে দেশের কৃষিক্ষেত্র উন্নতির দিকে যাবে ৷ বিশাল এই প্রকল্পের সাফল্য পরিমাপের মাপকাঠি হল কৃষকদের কল্যাণে এর অবদান কতটা হল !
ফসল উৎপাদনে কৃষকদের সমস্যায় ফেলার জন্য যে সমস্ত কারণ দায়ি, তার মধ্যে অন্যতম হল পরিকাঠামোর অভাব ৷ যখন টমেটোর দাম ন্যায্যমূল্যের থেকেও কম হয় এবং তাতে চাষের খরচও ওঠে না, তখন কৃষকরা রাগ করে রাস্তায় টমেটো ফেলে দেন ৷ অন্যদিকে টমেটোর দাম মাঝেমধ্যে আকাশছোঁয়া হয়ে যায় বলে হতাশ হয়ে পড়েন ক্রেতারা ৷ এই দুইটি উদাহরণই প্রমাণ করছে যে কৃষকদের জন্য পরিকাঠামোর অভাব ঠিক কতটা রয়েছে ৷ এই ধরনের পরিস্থিতির জন্য জাতীয় ক্ষতির মোট পরিমাণ গিয়ে দাঁড়ায় প্রায় ৪৪ হাজার কোটি টাকা ৷ এপ্রিল মাসে দা ন্যাশনাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার পাইপলাইন (NIP) জানিয়েছিল যে ই-মার্কেট পরিষেবা, হিমঘর ও গবেষণার মানোন্নয়নের জন্য আগামী পাঁচ বছরে অন্তত ৬৮ লাখ কোটি টাকা বিনিয়োগ করা প্রয়োজন ৷ যদি ফসল মার্কেট ইয়ার্ডে চলে যায়, তারপোলিন না থাকে, তখন দেখার যে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক কীভাবে তাঁর নষ্ট হয়ে যায় ফসল বিক্রি করেন এবং ওই পরিকাঠামো তহবিল কীভাবে ওই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের উদ্ধার করে ৷ জাতীয় নমুনা সমীক্ষার তরফে একেবারে তৃণমূল স্তরের তথ্য দিয়ে নিশ্চিত ভাবে জানানো হয়েছে যে কৃষকদের জীবনযাপনের জন্য অত্যন্ত অযৌক্তিক সহায়ক মূল্য দেওয়া হয় ৷ যদিও এটাও প্রকাশ্যে এসেছে যে একজন কৃষকের গড় পারিবারিক আয় প্রতি মাসে ৬ হাজার টাকা ৷
ডক্টর স্বামীনাথন পরামর্শ দিয়েছিলেন যে একজন সাধারণ কৃষকের কত টাকা খরচ হয়, জমির ইজারা বাবদ খরচের পরিমাণ কত এবং তার সঙ্গে ৫০ শতাংশ উদ্বৃত্ত যোগ করার পর সহায়ক মূল্য নির্ধারণ করা উচিত ৷ তবে এই পরামর্শটি বিবেচনা করা হয়নি ৷ ফলে সাধারণ কৃষকের আর্থিক অবস্থা আরও দুর্বল হয়েছে ৷ পরিকাঠামোগত তহবিলের প্রয়োগের সময় সবকিছুর উপরে উঠে কৃষিক্ষেত্রের জন্য নেতৃত্বের মনোভাবের মৌলিক পরিবর্তন প্রয়োজন ৷ সুরক্ষিত কৃষি কৌশল জলবায়ুর প্রতিবন্ধকতা এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা পাওয়ার শক্তিশালী বর্ম তৈরি করতে পারে ৷ একই সঙ্গে সফল প্রয়োগ কৌশল সাধারণ কৃষকদের সুবিধা ও লাভ দু’টোই নিশ্চিত করতে পারে ৷ এর ফলে চাষবাসকে কৃষকরা উৎসবের মতো করে উপভোগ করতে পারবে ৷