লাদাখ ইশুকে সামনে রেখে চিনের পণ্য বয়কট নিয়ে সরব হয়েছে অনেকে । এর জেরে কোথাও না কোথাও চিন-ভারত দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যেও প্রভাব পড়ছে । এই পরিস্থিতিতে দেশের শিল্প ও বাণিজ্য সংস্থাগুলির পরিস্থিতি কী ? কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে দেশের শিল্পসংস্থাগুলি । বল পেতে পারে নতুন উদ্যোগগুলি । তা নিয়ে মার্চেন্ট চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির প্রেসিডেন্ট বিবেক গুপ্তার সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে ETV ভারতের ডেপুটি এডিটর পার্থপ্রতিম ঘোষ রায় ।
প্রশ্ন : বর্তমান পরিস্থিতিতে ভারত-চিনের মধ্যে যে পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, বিশেষ করে ভারত-চিন সেনা সংঘর্ষের পর সোশাল মিডিয়ায় নানা ধরনের আলোচনা চলছে । অনেক জায়গায় কিছু পদক্ষেপও নজরে এসেছে । দেখা যাচ্ছে, কোথাও যেন ভারত-চিন দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একটা প্রতিকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে । বর্তমানে নানা জায়গায় আলোচনা চলছে । বলা হচ্ছে বয়কট বা ব্যান চায়না । যদি তা হয়, তাহলে তার কী প্রভাব পড়তে পারে?
বিবেক গুপ্তা : দেখুন এখানে দুটি বিষয় রয়েছে । একটি আবেগ । অন্যটি বাস্তব । হয়তো স্বল্প সময়ের জন্য এর প্রভাব পড়তে পারে । কিন্তু দীর্ঘ সময়ের কথা ভাবলে দেখা যায়, প্রয়োজন পড়লেই আমদানি করা হয় । সাধারণত একটি জিনিস যখন আমরা অন্য জায়গা থেকে পাই না বা সস্তায় পাওয়া যায় না, তখনই সংশ্লিষ্ট দেশ থেকে ওই পণ্য আমদানি করতে হয় । আমরা যদি বলি চিনের পণ্য বয়কট করব, তাহলে তার বিকল্প পণ্য আমদানির জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে । কারণ অন্য দেশে এই পণ্যগুলির দাম চিনের থেকে দশ শতাংশ বা 20 শতাংশ বেশি । যদি ভিয়েতনাম, কম্বোডিয়া বা অস্ট্রেলিয়ার পণ্য চিনের দামে পাওয়া যেত, তাহলে ওখান থেকেই আমদানি করা যেত । আমাদের চিনের পণ্য কেনার কোনও শখ বা বিশেষ ইচ্ছে নেই । বরং পণ্যগুলির বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে সবসময় একটা সংশয় থাকে । তাছাড়া আমদানির ক্ষেত্রে আমাদের অনেক নিয়ম মানতে হয় । কিন্তু চিনের প্রস্তুতকারী সংস্থাগুলিকে এত নিয়ম মানতে হয় না । ওরা বাক্সে প্যাকিং করে পাঠিয়ে দেয় । আমরা তা নিয়ে কাজ শুরু করে দিই । চললে চলল । আর নাহলে নেই । তাই চিন থেকে আমদানি করাটাও অনেকটা সহজ ।
পণ্য বয়কট করার জন্য আমাদের একটা জিনিস মাথায় রাখতে হবে । আমরা যদি পণ্য বহিষ্কার করি, ওরাও করবে । তাই আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে । দুর্বল হলে চলবে না । শহিদদের বলিদান আমরা ভুলব না । কোনওদিন তা বৃথা যেতে দেব না । তবে আবেগকে সরিয়ে রেখে, আমাদের ব্যবসায় নামতে হবে । এখানে বাস্তববুদ্ধির প্রয়োগ করতে হবে । যদি দেখা গেল চিন থেকে আমদানি সম্ভব নয়, তাহলে পরবর্তী বিকল্প বেছে নিতে হবে । আমাদের উৎপাদন করতে হবে । এক্ষেত্রে যথাযথ উদ্যোগ ও উৎসাহের দরকার ।
প্রশ্ন : যথাযথ উদ্যোগ ও উৎসাহের কথা বলছেন । তাহলে আমরা কেন সেই উদ্যোগ নিতে পারিনি । শিল্পপতিদের কেন সেই জায়গাটা তৈরি করে দিতে পারিনি । চিন পারল । চিন তাদের বাজার অর্থনীতিকে একটা জায়গায় নিয়ে এসেছে । এখন সারা পৃথিবী তাকিয়ে আছে । কিন্তু, আমরা কেন পারলাম না । কোথায় গলদ রয়েছে?
বিবেক গুপ্তা : বহু বছর আগে চিনে একটি অভ্যন্তরীণ নীতি তৈরি হয় । তারা জানত, বৃহৎ জনসংখ্যার দেশ । তাই তাদের কাজ দিতে হবে । আসলে সবাই তো আর কৃষিকাজে যুক্ত নয় । তাই উদ্যোগ, উৎপাদন, ব্যবসা-বাণিজ্যেও জোর দিতে হবে । কী কী ক্ষেত্রে এই উদ্যোগ বা বিনিয়োগের প্রয়োজন রয়েছে ? তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে, চিন প্রথম পরিকাঠামোগত উন্নয়নে বিনিয়োগ করল । রাস্তা-ঘাট, রেল, বিমানবন্দর ইত্যাদি । এদিক থেকে আমরা অনেকটা পিছিয়ে আছি । ভারতে প্রায় সাড়ে ছ'লাখ গ্রাম আছে । কিন্তু, প্রতিটি গ্রামে বিদ্যুৎ বা রাস্তা নেই । তাহলে আমি যদি কিছু উৎপদন করি, তা সরবরাহ বা বিক্রি করব কীভাবে ? রাস্তা-ঘাট, যথাযথ যোগাযোগই তো নেই । ক্রয়ক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রেও সে দেশের প্রশাসন সাহায্য করল । কিন্তু, আমরা পারলাম না । যারা উদ্যোগপতি বা ব্যবসায়ী, তাঁদের ক্ষেত্রেও সুবিধা রয়েছে সেই দেশে । চিনে ঋণ নিলে সুদের হার 2 শতাংশ । সেখানে ভারতে 11 বা 12 শতাংশ । প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রী 8 শতাংশ সুদের হারের কথা ঘোষণা করলেন । অথচ গাইড লাইন ইশু করার সময় লিখে দেওয়া হল 9.2 শতাংশ । তাহলে কোথায় যাব আমরা ? আমাদের কেউ সুরক্ষা দিচ্ছে না । অনেকসময় দেখা যায় ওদের তৈরি পণ্য আমাদের কাঁচামালের থেকেও সস্তা । এটা নিয়ে সরকারের ভাবনাচিন্তা করা উচিত । শিল্পংসস্থাগুলির সঙ্গে বসতে হবে । যদি এখানকার শিল্পের বিকাশ ঘটাতে হয়, তাহলে শিল্পক্ষেত্রের সমস্যাগুলি খতিয়ে দেখতে হবে ।