আমরা তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, সিঙ্গাপুর আর জার্মানির সাফল্যের কাহিনি শুনেছি । এই দেশগুলো কোভিড-19 প্যানডেমিক সবথেকে ভালোভাবে মোকাবিলা করেছে । এতটাই, যে তারা লকডাউন তুলে নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে । কিন্তু দেখে অবাক লাগছে যে, ভিয়েতনাম কীভাবে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ জয় করল, সেটা নিয়ে কেউ কিছু বলছে না । যেখানে উপরোক্ত দেশগুলিতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে, সেখানে ভিয়েতনামে মৃতের সংখ্যা শূন্য । যে কারণেই হোক, অতিরিক্ত ব্যস্ততার মাঝে পৃথিবী এই আশ্চর্য ঘটনার দিকে নজর দেয়নি । 8ই মে পর্যন্ত, জার্মানিতে মৃতের সংখ্যা 7392, সিঙ্গাপুরে 20, তাইওয়ানে 6 এবং দক্ষিণ কোরিয়ায় 256 । ভিয়েতনামে কোরোনা মৃত্যু না হওয়ার পিছনে কারণ হল সুরক্ষামূলক পদক্ষেপ নেওয়ায় তাদের বিচক্ষণতা এবং দূরদর্শিতা ।
আমেরিকা যবে থেকে আক্রান্ত হয়েছে, তখন থেকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কোভিড-19কে একটা চিনা ভাইরাস বলে আসছেন । কিন্তু ভিয়েতনাম শুরু থেকেই চিনের ব্যাপারে ভাল করেই জানত । চিন-ভিয়েতনাম যুদ্ধ থেকেই এই কঠিন শিক্ষা লাভ সম্ভব হয়েছে । APT-32 নামে ভিয়েতনামের একটি সাইবার নিরাপত্তা এজেন্সি আবিষ্কার করে, যে চিনে একটা নতুন ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে । সঙ্গে সঙ্গে ভিয়েতনাম সরকার চিনের আপৎকালীন পদক্ষেপ এবং উহান পুর-প্রশাসনের ব্যাপারে আরও জানতে তাদের সাইবার- নিরাপত্তা সংস্থাগুলিকে কাজে লাগায় । আমেরিকার সাইবার-নিরাপত্তা সংস্থা ফায়ারআই প্রকাশ করে, যে 2012 সাল থেকেই চিন, জার্মানি এবং আমেরিকান কোম্পানিগুলির গোপন তথ্য জানার জন্য সাইবার-হামলা চালাচ্ছে APT-32 ৷ আমেরিকার পাশাপাশি ভিয়েতনামও চিনে নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে একটা নতুন ভাইরাসের ইঙ্গিতবাহী সোশাল মিডিয়া পোস্টগুলোর ব্যাপারে উৎসুক হয়ে ওঠে । চিনে থাকা দেশের পড়ুয়া, কূটনীতিক এবং ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে আরও তথ্য সংগ্রহের পর, অ্যাকশন প্ল্যান তৈরিতে একমুহূর্ত দেরি করেনি ভিয়েতনাম সরকার । চিনের সঙ্গে 1281 কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত থাকায় ভিয়েতনাম সরকার ভাইরাসের আসন্ন বিপদ উপলব্ধি করে । ফেব্রুয়ারি মাসে একটি ত্রিমুখী রণকৌশল তৈরি করে ভিয়েতনাম । একটি কমিউনিস্ট দেশ হলেও, প্রয়োজনে নাগরিক অধিকার খর্ব করেও সরকার এব্যাপারে পদক্ষেপ নিয়েছে ।