হায়দরাবাদ, 26 এপ্রিল : কোরোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আটকাতে বিশ্বের বিভিন্ন গবেষণাগারে টানা কাজ করে চলেছেন চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ এবং গবেষকরা ৷ বর্তমান সংকট থেকে রোগীদের বাঁচাতে বিভিন্ন চিকিৎসা পদ্ধতিও অবলম্বন করা হয়েছে ৷ সঠিক ওষুধের অপ্রতুলতা এবং প্রতিষেধকের অভাব বিশেষজ্ঞদের ভাইরাসের প্লাজ়মা নিয়ে গবেষণা করতে বাধ্য করছে ৷ এই পদ্ধতি ব্যবহারের ফলে রোগীদের চিকিৎসায় চিকিৎসকদের কিছুটা সাহায্য করছে ৷ যদিও এটা খুব বেশি আশাপ্রদ নয় ৷ প্লাজ়মা চিকিৎসার জন্য কোরোনা থেকে সেরে ওঠা রোগীর শরীর থেকে রক্ত সংগ্রহ করা প্রয়োজন ৷ কিন্তু এটা এখনও জানা যায়নি যে, সেরে ওঠা কতজন রোগী রক্ত দিতে সম্মত হয়েছেন ৷ এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কয়েকদিন আগে একটি ধারণা পত্র সামনে আনেন ড. কে ললিতা ৷ তিনি বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিনডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ে জেনেরাল মেডিসিন নিয়ে MD পাঠরতা ৷
তাঁর প্রস্তাব, এই ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া আটকাতে কৃত্রিম বা সিন্থেটিক অ্যান্টিবডি তৈরি করা হোক ৷ তিনি তাঁর এই ধারণা পত্র ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ মেডিসিনে জমা দিয়েছেন ৷ তিনি এখন চেন্নাইতে থাকেন ৷ তিনি অমর সঙ্গীতশিল্পী ঘণ্টাশালা বেঙ্কটেশ্বর রাও-এর নাতনি ৷ তিনি ইনাডুকে সিন্থেটিক অ্যান্টিবডি নিয়ে 'এক্সক্লুসিভ' সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ৷
ফেজ় ডিসপ্লে মোডে DNA
20 জানুয়ারি, 2020 থেকে 25 মার্চ 2020, এই সময়ের মধ্যে চিনের শেন জেন হাসপাতালে প্লাজ়মা থেরাপির মাধ্যমে পাঁচজন কোরোনা আক্রান্ত রোগীর শরীরে অ্যান্টিবডি প্রবেশ করানো হয় ৷ এরপর তাঁদের মধ্যে তিনজনকে চিকিৎসা শেষে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং দেখা যায় যে তাঁরা সেরে উঠছেন ৷ যদিও এই ধরনের কিছু মানুষ হয়তো রক্ত দিতে এগিয়ে আসবেন না ৷ এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হলে রক্তের শ্বেত কণিকাকে একই ধরনের অ্যান্টিবডি DNA কোষে পরিবর্তিত করতে হবে ৷ সিন্থেটিক অ্যান্টিবডি তৈরি করতে যে ফেজ় ডিসপ্লে পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়, তা ব্যবহার করেই এক্ষেত্রে অ্যান্ডিবডি ও DNA তৈরি করতে হবে ৷ তৈরি করা এই ধরনের অ্যান্টিবডিকে গবেষণাগারে ‘Viro-D6’ ব্যবহার করে বাফার ফুয়েলেড এলাইসান পদ্ধতিতে পরিষ্কার করতে হবে ৷ একটিমাত্র কোষে আটকে রাখার জন্য অ্যান্টিবডিতে প্রস্তুত করার এই সময় টিশু মেটিরিয়ালের প্রয়োজন পড়বে ৷ এই পুরো পদ্ধতি শেষ করতে অন্তত এক মাস সময়ের প্রয়োজন ৷ এই ধরনের পরীক্ষা সরকারি পরীক্ষাগারে করা যেতে পারে ৷ গবেষণাগার বা বেসরকারি পরীক্ষাকেন্দ্রেও সরকারি অনুমতির ভিত্তিতে এই পরীক্ষা করা যেতে পারে ৷
50 দিনে একবার একটি অ্যান্টিবডি তৈরি করা গেলে, তা থেকে আরও কয়েক মিলিয়ন অ্যান্টিবডি তৈরি করা যেতে পারে ৷ যদিও এটা আগে খরগোশ এবং হনুমান জাতীয় প্রাণীর শরীরে প্রয়োগ করে পরীক্ষা করে নিতে হবে ৷ কোরোনা ভাইরাস শরীরে বেড়ে ওঠার সময়সীমা 14 দিনের ৷ এই সময়কালের মধ্যে ওই প্রাণীদের শরীরে ঠিক কী পরিবর্তন হচ্ছে, তা পর্যবেক্ষণ করে সিন্থেটিক অ্যান্টিবডি তৈরিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন এবং আরও কিছু যোগ করা যেতে পারে ৷ অ্যান্টিবডি তৈরিতে সময় লাগতে পারে 30 দিন ৷ তা নিয়ে পরীক্ষা করতে আরও 14 দিন ৷ মানে সব মিলিয়ে 44 থেকে 50 দিন পর্যন্ত সময় লাগতে পারে ৷ তৈরি করা এই অ্যান্টিবডিকে রোগীর শরীরে প্রবেশ করানোর চিকিৎসা-সংক্রান্ত পরিভাষা ‘প্যাসিভ ইমিউনিটি’ ৷ এই পদ্ধতি বিজ্ঞানীরা শুরু করেছিলেন 1984 সালে ৷ গুরুতর অসুস্থ এবং ভাইরাস সংক্রান্ত সমস্যায় ভোগা রোগীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করাই ছিল এর উদ্দেশ্য ৷
প্যাসিভ ইমিউনিটি প্রয়োগ করার পর যক্ষা, নেক্রোসিস এবং টাইফয়েডের মতো রোগীদের শরীরে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছিল ৷ ক্যানসার সারাতেও অনেক দেশে এই পদ্ধতি অবলম্বন করা হয় ৷ কোরোনা ভাইরাসের জন্য তৈরি করা কোনও অ্যান্টিবডি আগামী দিনেও কোরোনা ভাইরাসের প্রতিষেধক হতে পারে ৷ বর্তমানে কোরোনা মোকাবিলা করার জন্য একাধিক পরীক্ষা করা হচ্ছে ৷ বিশ্বব্যাপী এই ভাইরাসের মোকাবিলায় এই পরীক্ষাগুলির তুলনায় সিন্থেটিক অ্যান্টিবডি তৈরি করা অনেক সহজ বলে দাবি করা যেতেই পারে ৷
বিজ্ঞানী ড. কে ললিতা