বৃষ্টি ও সংগীত ৷ চিরন্তন অন্তরঙ্গতা । তানসেনের মেঘমল্লারে বৃষ্টি আসার কাহিনি আমরা পড়েছি । কখনও বৃষ্টি-জলের শব্দ নিজেই সংগীত হয়ে উঠেছে । 'টাপুর-টুপুর' বা 'রিমঝিম' সংগীত ছাড়া আর কী? কখনও অন্তমিলে ছন্দ তৈরি হয়, কখনও বা ছন্দপতন...কিন্তু সংগীতই তো ! বৃষ্টির এই সৃজনশীলতা নজর এড়ায়নি অনেকের । রিমঝিম ছন্দ ঘিরেই একটি বাড়িকে বাদ্যযন্ত্রে রূপান্তরিত করে ফেলেছেন শিল্পীরা । হ্যাঁ, ঠিকই পড়েছেন । বৃষ্টি ও চারদেওয়াল মিলেই তৈরি হয়েছে এক বাদ্যযন্ত্র...শিল্প পরিসর । বর্ষা এলেই আপন ছন্দে মেতে ওঠে বাড়িটি । তৈরি হয় সংগীত । পর্যটকরা যদি ওই বাড়ির সামনে দাঁড়ান, আর সেইসময় বৃষ্টি নামে । তবে সাক্ষী থাকবেন সেই অদ্ভুত শব্দ তরঙ্গের ...
জার্মানির ড্রেসডেন । সেখানেই রয়েছে 'Neustadt Kunsthofpassage' যার অর্থ 'শিল্প চত্বর' অর্থাৎ শিল্পের পরিসর । এই স্থানে পাঁচটি ভিন্ন শিল্প পরিসর রয়েছে । এক একটির এক এক বৈশিষ্ট্য । কোনও পরিসরে আলোর সৃজনশীলতা, কোনও পরিসরে রয়েছে প্রাণীরা । আর অবশ্যই সেখানে রয়েছে সংগীত পরিসর ! যে পরিসর উপহার দেয় সেই অদ্ভুত সিম্ফনি ।
শিল্পী অ্যানেতে পল, ক্রিস্টোফ এবং আন্দ্রে টেম্পলের মিলিত প্রয়াসে তৈরি হয় ওই 'সংগীত-নিলয়'। ওই বিশেষ বাড়িতেই থাকেন তাঁরা । কিন্তু এই বাড়িটিকে এরকমভাবে তৈরি করার ভাবনা তাঁরা কীভাবে পেলেন ? এই প্রশ্নও করা হয়েছিল । সেই প্রসঙ্গে বলতে গেলে উল্লেখ করতে হয় প্রকৃতির আরও একটি বিশেষত্বের কথা । রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবাগ । প্রায়ই বৃষ্টি হয় পিটার্সবার্গে । অ্যানেতে থাকতেন সেখানেই । অ্যানেতে জানিয়েছেন, বর্ষার জল তাঁর জানালায় তৈরি করত 'বৃষ্টি প্রেক্ষাগৃহ' । তখন এরকমই এক বাড়ির কথা ভাবতেন তিনি । রুব গোল্ডবার্গ মেশিনের থেকেও অনুপ্রাণিত হয়ে বাড়িটির সম্মুখভাগ তৈরি করা হয় ।
এই যে বাড়িটি । নীলরঙের চার দেওয়াল । রেন পাইপগুলি সেইভাবেই তৈরি । ফানেল ও পাইপের এক অদ্ভুত মেলবন্ধন । মনে হবে হালকা নীল রঙের দেওয়ালে স্যাক্সোফোন সারি সারি । এই পাইপেই জল পড়ে বৃষ্টির ছন্দে এক সিম্ফনি তৈরি হয় । মনে হয় বৃষ্টির কলতান !
1999 সালে বাড়িটি এইভাবেই তৈরি করেছিলেন শিল্পীরা । তারপর থেকে পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ এই 'সংগীত-নিলয়' । যেখানে বৃষ্টির সময় এই সংগীতের সুর আপনাকে মুগ্ধ করবে ৷