দিল্লি, 9 মে : কেন্দ্রের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সংঘাত অব্যাহত । কোরোনা পরিস্থিতিতে অসহযোগিতার অভিযোগ তুলে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আজ চিঠি দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ । তিনি চিঠিতে জানান, ভিন রাজ্যে আটকে থাকা পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকের বাড়ি ফেরাতে কোনওরকম সাহায্য করছে না রাজ্য সরকার ।
রাজ্যে কোরোনা সংক্রমণ দেখা দেওয়ার পর থেকেই একাধিক ইশুতে প্রকট হয়েছে কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাত । কখনও রাজ্যের তরফে অভিযোগ করা হয়েছে, পর্যাপ্তসংখ্যক PPE কিট দেয়নি কেন্দ্র । কখনও আবার অভিযোগ করা হয়েছে, ICMR-এর তরফে পাঠানো নমুনা পরীক্ষার কিটে ত্রুটি রয়েছে । এই অভিযোগটি অবশ্য ICMR-এর তরফে স্বীকারও করা হয়েছিল । এরপরে বিষয়টি নিয়ে জল অনেক দূর গড়ায় ।
কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের সংঘাত আরও চরমে ওঠে যখন কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল কোরোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পশ্চিমবঙ্গে আসে । রাজ্য সরকারের তরফে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় কোনওরকম সহযোগিতা করা হবে না । কারণ রাজ্যে আসার আগে কেন্দ্রের তরফে কোনওরকম অনুমতি নেওয়া হয়নি । যদিও পরে রাজ্যের তরফে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলকে রাজ্যের কোরোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার অনুমতি দেওয়া হয় ।
পশ্চিমবঙ্গের কোরোনা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার শেষ দিন 4 মে মুখ্য সচিবকে চিঠি দিয়ে আরেকটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের প্রধান অপূর্ব চন্দ্র । সেই চিঠিতে কোরোনা মৃতের সংখ্যার ক্ষেত্রে রাজ্যের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন । জানান, রাজ্যের তরফে 72 জন কোরোনা আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর কথা স্বীকার করা হয়েছে । কিন্তু তাঁদের মৃত্যুর কারণ হিসেবে অন্যান্য শারীরিক অসুস্থতাকে উল্লেখ করা হয়েছে । শুধু তাই নয়, কনটেনমেন্ট জ়োনগুলিতে নজরদারি রাখার যে দাবি রাজ্যের তরফে করা হচ্ছে তার কোনও তথ্য বা নথি নেই বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেন অপূর্ব চন্দ্র ।
কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দলের প্রধানের চিঠি দেওয়ার একদিন পর মুখ্যসচিব রাজীব সিনহাকে ফের আর একটি চিঠি দেন স্বরাষ্ট্র সচিব অজিত ভাল্লা । সেই চিঠিতে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গে কোরোনায় মৃতের হার বেশি বলে দাবি করা হয় । শুধু তাই নয়, রাজ্যে লকডাউনের ক্ষেত্রে ঢিলেঢালা দেওয়া হচ্ছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয় । এর আগেও পশ্চিমবঙ্গে লকডাউন নির্দেশমতো পালন করা হচ্ছে না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে অভিযোগ করা হয়েছিল ।
কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্যের এই সংঘাতে ঘৃতাহুতির কাজ করেন কেন্দ্রের পক্ষে সওয়াল করতে থাকা রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় । রেশনে দুর্নীতি থেকে শুরু করে একাধিক ইশুতে মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে কটাক্ষ করতে দেখা যায় তাঁকে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অজুহাত না দেখিয়ে কোরোনা মোকাবিলায় কেন্দ্রের সঙ্গে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়াই করার অনুরোধ জানিয়ে টুইটও করতে দেখা যায় রাজ্যপালকে । আবার রাজ্যপালকে নিজের সাংবিধানিক ক্ষমতার কথা মনে করিয়ে পাঁচ পাতার চিঠি দিতেও দেখা গেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ।
পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে সেই সংঘাতকে বজায় রেখেই আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখলেন অমিত শাহ । আর এবার কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের ইশু ভিন রাজ্যে আটকে থাকা পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকরা । অমিত শাহ চিঠিতে লেখেন, "ভিন রাজ্যে আটকে থাকা পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের ট্রেনকে রাজ্যে পৌঁছানোর অনুমতি দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকার । এটা পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকদের সঙ্গে অন্যায় করা হচ্ছে । এর ফলে শ্রমিকদের কষ্ট আরও বাড়বে ।"
মমতাকে লেখা চিঠিতে অমিত শাহ ভিন রাজ্য শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে কেন্দ্রের উদ্যোগের বিষয়টিও উল্লেখ করেন । তিনি চিঠিতে জানান, এখনও পর্যন্ত 2 লাখ ভিন রাজ্যের শ্রমিককে বাড়ি ফিরতে সহায়তা করা হয়েছে কেন্দ্রের তরফে । ভিন রাজ্যে আটকে থাকা পশ্চিমবঙ্গের শ্রমিকরাও বাড়ি ফিরতে আগ্রহী । কিন্তু সরকারের অসহযোগিতার ফলে তাঁরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না ।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সুরে সুর মিলিয়েছেন প্রাক্তন রেল রাষ্ট্রমন্ত্রী অধীর চৌধুরি । বর্তমান সময়ে কেন্দ্র-রাজ্য হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি । রাজ্য সরকারের উচিত কেন্দ্রের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করা ।