মুম্বই, 28 নভেম্বর : তখন তিনি কংগ্রেসে । মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী । কংগ্রেসের ঘোর শত্রু শিবসেনা । কিন্তু, খলিস্তানি জঙ্গিদের টার্গেট থেকে সেই সময় শিবসেনা প্রধান বাল ঠাকরে, তাঁর স্ত্রী, দুই পুত্র আর তাঁর পরিবারের সদস্যদের প্রাণ বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন শরদ পাওয়ার । বাঁচিয়ে দিয়েছিলেন বাল ঠাকরের বাসভবন ‘মাতোশ্রী’কেও । এক সময় শিবসেনার নেতা নারায়ণ রাণে তাঁর আত্মজীবনী ‘নো হোল্ডস বারড: মাই ইয়ার্স ইন পলিটিকস’-এ এই কথা জানিয়েছেন । লিখেছেন, "কংগ্রেসের সঙ্গে শিবসেনার সম্পর্ক যেমনই হোক, বাল ঠাকরের সঙ্গে বরাবরই ভালো যোগাযোগ ছিল শরদ পওয়ারের ।" প্রায় চার দশক পরে সেই পুরানো বন্ধুত্বের সমীকরণটা আর একবার নতুন রূপে ধরা পড়ল মারাঠা ভূমে । ঠাকরে পরিবার থেকে কেউ প্রথমবারে জন্য মন্ত্রী হলেন । সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী । আর সেই 'ঐতিহাসিক' মুহূর্ত তৈরিতে কিং মেকার হয়ে থাকলেন শরদ পাওয়ার ।
মারাঠা ভূমের রাজনীতি গত কয়েক দিন ধরে নানা খাতে বয়েছে । সবাইকে চমকে দিয়ে দিনের আলো ফোটার আগে মুখ্যমন্ত্রিত্বের শপথ নিয়েছিলেন দেবেন্দ্র ফড়নবিশ । সবাইকে চমকে দিয়ে উপ-মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন শরদ পাওয়ারের ভাইপো অজিত পাওয়ার । সবাই 'মেঘনাদ' হিসেবে দেখেছিলেন অমিত শাহকে । কিন্তু, মাত্র চার দিনের মধ্যে ছবিটা বদলে যায় । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে আস্থা ভোট শুরু হওয়ার একদিন আগেই পদ থেকে সরে দাঁড়ান মুখ্যমন্ত্রী এবং উপমুখ্যমন্ত্রী । তারপরই কংগ্রেস-NCP কে সঙ্গে নিয়ে সরকার গড়ার কাজ শুরু করে শিবসেনা । চূড়ান্ত হয়, মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেবেন শিবসেনা প্রধান উদ্ধব ঠাকরে ।
সেই মতো আজ শিবাজি পার্কে শপথ নিলেন উদ্ধব । উপস্থিত ছিলেন কংগ্রেস, NCP-র প্রতিনিধিরা । শিঙা ফুকে শপথ অনুষ্ঠানের সূচনা হল । মঞ্চে তখন চাঁদের হাট । উপস্থিত ছিলেন শরদ পাওয়ার , রাজ ঠাকরে, মল্লিকার্জুন খাড়গে, প্রফুল পটেল, অজিত পাওয়ার সহ একাধিক রাজনৈতিক নেতৃত্ব । দু'দিন আগেও যিনি ছিলেন উদ্ধবের সব থেকে বড় বিরোধী আজকের শপথ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন সেই দেবেন্দ্র ফড়নবিশ । এসেও ছিলেন । প্রধান অতিথিদের মধ্যে অবশ্যই প্রথম নাম শিল্পপতি মুকেশ অম্বানি । স্ত্রী নীতাকে নিয়ে হাজির তিনিও । মঞ্চে বড় করে বসানো ছিল বাল ঠাকরের মূর্তি । বাবার আশিস নিয়ে শপথ নিলেন উদ্ধব । তাঁকে শপথ বাক্য পাঠ করালেন রাজ্যপাল ভগৎসিং কোশিয়ারি । ইতিহাস রচিত হল শিবাজি পার্কে । ঠাকরে পরিবার থেকে এই প্রথম কেউ মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন । একদিন বালাসাহেব ঠাকরে স্বপ্ন দেখেছিলেন । সেই স্বপ্নই যেন আজ সফল হল । আজ মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথের পর উদ্ধব ঠাকরেকে টুইট বার্তায় শুভেচ্ছা জানান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ।
আজকের শপথ অনুষ্ঠানের পর যে প্রশ্নটা ঘিরে সব থেকে বেশি আলোচনা শুরু হল তা হল অজিত পাওয়ারের ভবিষ্যৎ । মারাঠা ভূমের রাজনীতির চর্চা যাঁরা করেন, তাঁরা বলেছেন খুব শীঘ্রই মূল স্রোতে ফিরতে চলেছেন অজিতও । উদ্ধবের মন্ত্রিসভাতেই তিনি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পেতে চলেছেন । উদ্ধবের সুখের সংসারে এখন সামনে কেবল দুটি কাজ । সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করা । আর দ্বিতীয়ত, ছয় মাসের মধ্যে ভোটে জিতে বিধায়ক হওয়া ।