কলকাতা, 13 জুলাই: IPS থেকে শুরু করে সাংসদ, নিষিদ্ধ 59টি চিনা অ্যাপ ব্যবহার করতেন অনেকেই । এমনকী টিকটকের মতো অ্যাপ ব্যান করার পর তৃণমূল সাংসদ নুসরত জাহান প্রকাশ্যেই এর বিরোধিতা করেন । লকডাউনের মাঝেও নিয়মিত পোস্ট করতেন তিনি । আবার গুজরাতের প্রাক্তন DIG ভানজারার ভাইজি তথা IPS অফিসার মঞ্জিতা ভানজারা গত বছর জুলাইয়ে নিজের প্রথম ভিডিয়ো দেন টিকটকে । সেটিও ভাইরাল হয় । IPS অফিসার সফিন হাসানেরও টিকটকে সরব উপস্থিতি ছিল ।
শুধু কি তাই ? কেরালা পুলিশের সোশাল মিডিয়ার নোডাল অফিসার তথা ADG হেডকোয়ার্টার মনোজ আব্রাহাম গর্বের সঙ্গে ঘোষণা করেন, "কেরালা পুলিশ সবসময় টেকনোলজি ব্যবহারের ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকে । দেশের প্রথম পুলিশ বাহিনী হিসেবে টিকটকে উপস্থিত হয়ে আমরা গর্বিত ।" বেঙ্গালুরু পুলিশ আবার টিকটকের মাধ্যমে বুঝিয়েছে মহিলাদের সুরক্ষায় কী কী করণীয় ? অনলাইনে জলদি রিপোর্ট করার জন্য ই লস্ট অ্যাপে প্রচারের জন্যও তারা টিকটক ব্যবহার করছিল । ছত্তিশগড়ের দূর্গ পুলিশ কোরোনা নিয়ে প্রচারের জন্য ব্যবহার করেছিল টিকটক। পঞ্জাব পুলিশও টিকটকের মাধ্যমে একই কাজ করেছিল । মজার বিষয় হল- মহারাষ্ট্র পুলিশের সাইবার সেলও ব্যবহার করছিল ব্যান হওয়া ওই চিনা অ্যাপ । DIG হরিশ ভাইজাল টিকটকের মাধ্যমেই ফেক নিউজ়, হেট নিউজ় নিয়ে প্রচার এবং কোরোনা ভাইরাস নিয়ে নানারকম পরামর্শ দিচ্ছিলেন । মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রচারের জন্য টিকটককেই বেছে নিয়েছিল দিল্লি পুলিশের সাইবার ক্রাইম । অথচ এই বছরের শুরুতেই US আর্মি নিজেদের কাজের মোবাইলে টিকটকের ব্যবহার বন্ধ করে দেয় । কারণ তাদের তখনই মনে হয়েছিল যে এই অ্যাপের মাধ্যমে চিন তথ্য জোগাড় করছে । সেই তথ্যের ব্যাকআপ সিঙ্গাপুরেও রাখা হচ্ছে । কিন্তু তারপরও ব্যবহার করা হচ্ছিল । আর এতেই গোপন সব তথ্য চুরির আশঙ্কা করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা ।
জাগতে রহো: নিষিদ্ধ অ্যাপের মাধ্যমে সাংসদ,IPS-দের মেইলও চিনের হাতে !
টিকটক সহ 59টি নিষিদ্ধ চিনা অ্যাপের মধ্যে অনেক অ্যাপই ব্যবহার করতেন দেশের সাংসদ, IPS অফিসার, সেনা কর্তারা ৷ আর সেখান থেকেই গোপন তথ্য চুরির আশঙ্কা করছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা ৷ এই বিষয়ে সতর্ক করছেন সাইবার নিরাপত্তা এবং এথিক্যাল হ্যাকিং বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত ৷
সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত বলছেন, "এর কোনও প্রমাণ নেই যে ওই অ্যাপগুলি চিন সরকারকে তথ্য সরবরাহ করছে । সাধারণভাবে যদি টিকটকের কথা ধরে নেওয়া হয় তবে মানুষ ভিডিয়ো তুলে তাতে পোস্ট করেন । এতে অসুবিধা হওয়ার কথা নয় । কিন্তু যদি কোন আমলা কিংবা IPS অফিসার অথবা সেনাকর্তার মোবাইলে ওই ধরনের অ্যাপ ইনস্টল করা থাকে তবে তা দেশের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক । কারণ ক্লিপবোর্ডের মাধ্যমে সব তথ্য চলে যাচ্ছে ওই অ্যাপের কর্তাদের হাতে । এছাড়া-
★ শেয়ারইটের মতো অ্যাপ-এর মাধ্যমে যদি কেউ গোপন ফাইল ট্রান্সফার করেন তবে নিশ্চিতভাবেই তার ব্যাকআপ থেকে যায় ওই অ্যাপ সংস্থার হাতে ।
★ এই অ্যাপগুলো যেকোনও মানুষের ব্যাঙ্কিং তথ্য সহজেই পেতে পারে
★ ওই অ্যাপগুলি ব্যবহারকারীর কনটাক্ট নম্বরের অ্যাকসেস পেতে পারে
★ ভারত-চিন উত্তেজনার প্রশ্নে চিন আন এথিক্যাল হ্যাকারদের ব্যবহার করে বিভিন্ন অ্যাপ থেকে পাওয়া ডাটার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ সব তথ্য জোগাড়ের চেষ্টা করবেই
নাগরিকদের কনটাক্ট নম্বর যদি চিনের সাইবার টিম পেয়ে যায় তাহলে একটা কূটনৈতিক চাল দেওয়া অসম্ভব নয় । সাধারণভাবে চিন ভারতের সীমান্ত অতিক্রম করে ঢুকে পড়বে না । সেক্ষেত্রে তারা আন্তর্জাতিক নানা ধরনের চাপে পড়বে । কিন্তু চিন তাদের সাইবার টিমের মাধ্যমে দেশের জনগণের কাছে ভারত বিরোধী নানা ধরনের প্রচার চালাতে পারে । চিনের পক্ষে নানা ধরনের সওয়াল তারা করতে পারে । বারবার যদি একটা মিথ্যাকে সত্যি হিসেবে দেখানো হয় তবে একটা সময় সাধারণ মানুষ মিথ্যাটাকেও সত্যি হিসেবে বিশ্বাস করতে শুরু করে । তাতে দেশের সরকার সেনাবাহিনীর সমর্থন হারাবে । একটা অরাজক পরিস্থিতি তৈরির চেষ্টা করতেই পারে ।
এই অ্যাপগুলো কি কোনওরকম ম্যালওয়ার কিংবা র্যানস্যামওয়ার পাঠাতে পারে ?
এখনও পর্যন্ত এই অ্যাপের মাধ্যমে ম্যালওয়ার পাঠানোর কোনও দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়নি বলে জানাচ্ছেন সাইবার বিশেষজ্ঞ সন্দীপ সেনগুপ্ত । সাধারণভাবে ম্যালওয়ার পাঠায় ফ্রডস্টাররা । সাধারণ মানুষের কাছ থেকে টাকা হাতাতে তারা এটা করে থাকে । কিন্তু যেখানে ভারত-চিনের সামরিক উত্তেজনার প্রশ্ন সেখানে এর কার্যকারিতা নেই ।
যে অ্যাপগুলি তথ্য চুরি করে তাদের থেকে বাঁচার উপায় কী ?
★ সাধারণভাবে গুগলের যে কোনও অ্যাপের প্রাইভেসি পলিসি খুব ভালোভাবে খতিয়ে দেখা উচিত । ব্যবহারকারীরাও প্রাইভেসি পলিসি দেখে নেওয়ার পরই অ্যাপ ডাউনলোড করবেন ।
★ অ্যাপ ডাউনলোড করার সময় নানা ধরনের পারমিশন চায় । একটি ভিডিয়ো আপলোড করার অ্যাপ কেন আপনার কনটাক্ট অ্যাকসেসের পারমিশন চাইবে তা দেখা উচিত ৷ শেয়ার ইটের মতো অ্যাপ কেন আপনার স্পিকার এবং ক্যামেরা অ্যাকসেস করার পারমিশন চাইবে ? যে অ্যাপের যেটা কাজ তার বাইরে পারমিশন দেওয়া কখনও উচিত নয় ।
★ অ্যাপ ইনস্টল করার আগে রিভিউ পড়ে দেখা উচিত । যদি দেখা যায় ব্যবহারকারীরা অনেকেই ওই অ্যাপ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তবে তা ডাউনলোড করা উচিত নয় ।
★ ডাউনলোড করা অ্যাপের সেটিংসে গিয়ে দেখতে হবে আপনার কত ডাটা ওই অ্যাপ ট্রান্সফার করেছে । যদি দেখা যায় খুব বেশি সংখ্যক ডাটা ট্রান্সফার হয়েছে তবে তখনই অ্যাপ ডিলিট করে দেওয়া উচিত ।
এই বিষয়ে কলকাতা পুলিশের কী বক্তব্য ?
কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার(অপরাধ) মুরলীধর শর্মা এ প্রসঙ্গে বলেন, "যখন কোনও অ্যাপ আমরা ডাউনলোড করি তখন দেখতে হবে কী কী অ্যাকসেসের পারমিশন চাইছে । আমরা অনেক সময় তাড়াহুড়োর মধ্যে কোনও ভাবনাচিন্তা না করেই বিভিন্ন ধরনের অ্যাকসেসের পারমিশন দিয়ে দিই । যেমন একটি গেম অ্যাপের ক্যামেরা অ্যাকসেসের প্রয়োজন নেই । কিন্তু সেই গেমে অ্যাপ সেই পারমিশন চাইলে প্রশ্ন থেকে যায় । এটা সবাইকে বুঝতে হবে কী উদ্দেশ্যে অ্যাপটি ডাউনলোড করা হচ্ছে । সেই সংক্রান্ত পারমিশন শুধুমাত্র দেওয়া উচিত । অনেকে কুকিরও দখল চায় । যদি দেখা যায় কোনও অ্যাপ অপ্রয়োজনীয় পারমিশন চাইছে তবে তা এড়িয়ে চলা উচিত ।"