কলিযুগ ক্রমশই প্রতারণার যুগে পরিণত হচ্ছে ৷ আর এর জন্য দায়ী সেই সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্তরা, যারা নিরীহ মানুষের জীবনের বিনিময়ে নকল ও ভেজাল সামগ্রী তৈরির ব্যবসা চালাচ্ছে । জনস্বাস্থ্য নীতিতে কোনও সংস্থান না থাকার ফলে, এই অপরাধীরা কোরোনা প্যানডেমিককেও সুযোগ হিসেবে ব্যবহার করেছে ৷ এই সমস্ত দুর্নীতিগ্রস্তরা পরিস্থিতির পূর্ণ সুযোগ নিয়ে বাজারে ভেজাল বা জাল স্যানিটাইজার তৈরির নানা রকম ছক করেছে । চিন ও বাংলাদেশের সরকার এই ধরনের ষড়যন্ত্রীদের প্রাণদণ্ডের সাজা শোনাচ্ছে । ব্রিটেন, ব্রাজিল, ফ্রান্স, ও স্পেন নজরদারি বাড়াচ্ছে এবং খাদ্য নিরাপত্তা মানদণ্ডে কড়া নজর রাখছে । যদিও যথাযথ প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপের অভাবে এধরনের অপরাধীরা অভ্যন্তরীণ বাজারকে ব্যবহার করে তাদের ব্যবসা গড়ে তুলছে । আইন ও নিয়ন্ত্রণ তখনই কার্যকরী হতে পারে, যখন সেগুলো তৈরি হবে এবং বিনা দ্বিধায় প্রয়োগ করা হবে ।
সম্প্রতি এইসব অর্থলোভীরা, বর্তমান পরিস্থিতিকে কাজে লাগিয়ে অবৈধ ব্যবসার পথ বার করেছে । ভেজালের চক্রীদের নির্মূল করতে এবং জনস্বাস্থ্যের অবনবি রুখতে নজরদারির ব্যবস্থা নিয়েই প্রশ্ন তোলা হচ্ছে । এরই মধ্যে CAG রিপোর্টে অজস্র প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাগত খামতি তুলে ধরা হয়েছে এমন একটা দেশে, যেখানে দুধ, ডাল থেকে তেল, মশলা – সবেতেই ভেজাল খুঁজে পাওয়া যায় ।
কোরোনা প্যানডেমিকের সময় বিভিন্ন গ্যাং তৈরি হয়েছে, যারা হাত পরিচ্ছন্ন রাখার ক্রমবর্দ্ধমান গুরুত্বের ফায়দা তুলছে । স্যানিটাইজ়ারের বিপুল চাহিদার প্রেক্ষিতে ভারত সরকার পাঁচ মাস আগেই 200 মিলিলিটারের সর্বোচ্চ দাম 100 টাকায় বেঁধে দিয়েছে । ইথাইল অ্যালকোহল, আইসোপ্রোপাইল অ্যালকোহল ও প্রোপাইল অ্যালকোহল দিয়ে সঠিক মানের স্যানিজাইজ়ার তৈরির গাইডলাইনও প্রকাশ করা হয়েছে । কিন্তু কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই নয়ডা, জম্মু ও কাশ্মীর, মুম্বই, বরোদা, ব্যাঙ্গালোর ও হায়দরাবাদে নকল স্যানিটাইজ়ার তৈরির চক্র ধরা পড়েছে ৷
ছোটো তদন্তে বড় পর্দাফাঁস
প্রকাশম, কাডাপ্পা আর চিত্তুর জেলায় প্রায় 50 জন অ্যালকোহল আসক্ত মানুষ স্যানিটাইজ়ার খেয়ে মারা যান । এইসব মৃত্যুর পুলিশি তদন্তে মৃত্যুর কারণ ও তারপর অবৈধ কারবার নিয়ে বিরাট বড় সত্য সামনে আসে । রাসায়নিক মিথানল লিটার প্রতি 10-15 টাকায় বাজারে পাওয়া যায় । ভেজাল কারবারীরা তার সঙ্গে অন্য রাসায়নিক মিশিয়ে ভেজাল পণ্য তৈরি করা শুরু করে । হায়দরাবাদের শহরতলীতে এই নকল জিনিসের ব্যবসা কুটিরশিল্পের মতো বেড়ে উঠছে । ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতার ছদ্মবেশে কীভাবে এই অবৈধ ব্যবসায়ীরা মানুষের জীবনের সঙ্গে ছেলেখেলা করে ব্যক্তিগত মুনাফা লুটছে, তা দেখে অবাক লাগে ।