পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

আবিষ্কারে অ্যাডভেঞ্চার, নিজের শরীরে প্রাথমিক পরীক্ষা এই বিজ্ঞানীদের

কোনও নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব হলে চিকিৎসক ও গবেষকরা ওষুধ খুঁজতে শুরু করেন । ওষুধ খুঁজে পেলে প্রথমে তা পশু-পাখিদের উপর প্রয়োগ করা হয় । কিন্তু, এমন অনেক গবেষক আছেন যাাঁরা জীবনের পরোয়া না করে সেই সব ওষুধ নিজেদের উপর প্রয়োগ করেছেন ।

By

Published : Apr 26, 2020, 10:38 PM IST

Published : Apr 26, 2020, 10:38 PM IST

Updated : Apr 27, 2020, 8:52 AM IST

The stars that were there to discover and save lives
আবিষ্কারে ও জীবন বাঁচাতে ছিলেন যে নক্ষত্ররা , জানুন

যাঁরা মানুষের জীবন বাঁচাতে নিজের জীবন বিপন্ন করতে পিছপা হননি -

কোনও নতুন রোগের প্রাদুর্ভাব হলে, চিকিৎসক এবং বৈজ্ঞানিকরা এগিয়ে আসেন ওষুধ খুঁজতে । প্রথমে তাঁরা পশুদের উপর পরীক্ষা করে দেখেন ৷ ওষুধ কেমন কাজ করছে । কিন্তু, অনেক বৈজ্ঞানিক এবং চিকিৎসক এমনও আছেন, যাঁরা নিজেদের উপর এই সব ওষুধের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছেন ৷ তা করতে গিয়ে নিজেদের জীবনেও বিপদ ডেকে এনেছেন । গবেষণা করতে গিয়ে বিভিন্ন অ্যাডভেঞ্চারের মুখে পড়েছেন ৷ এমন কিছু দৃষ্টান্ত দেওয়া হল ৷

ইয়েলো ফিভারে মৃত্যু -

1881 সালে ডা. কার্লোস গবেষণা করে জানেন , প্রাণঘাতী ইয়েলো ফিভারের মূল কারণ হল মশার কামড় । মার্কিন সেনাবাহিনীর চিকিৎসকরা তা প্রমাণ করতে এগিয়ে আসেন । মেডিকেল সায়েন্টিস্ট ওয়াল্টার রিডের নেতৃত্বে 1900 সালে ইয়েলো ফিভারের কারণ খতিয়ে দেখতে তদন্ত শুরু করেন চিকিৎসক জেমস কেরল, অ্যারিসটিডস আগ্রামন্টে এবং জেসি উইলিয়াম লাজিয়ার । আর তা করতে গিয়ে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে মশার কামড় খান কেরল এবং লাজিয়ার । এরপর দু’জনেরই ইয়েলো ফিভার হয় । কিছুদিন পরে লাজিয়ারের মৃত্যু হয় । কেরল তখন সুস্থ হয়ে উঠলেও 7 বছর পর একই রোগে তাঁরও মৃত্যু হয় । কিন্তু তাঁদের এই আত্মোৎসর্গ বহু মানুষকে ইয়েলো ফিভারের হাত থেকে বাঁচিয়েছিল ৷

নিজের অস্ত্রোপচার নিজেই করেছিলেন যাঁরা -

তখনকার দিনে অস্ত্রোপচার করতে হলে গোটা শরীরে অ্যানাস্থেসিয়া করতে হত। কিন্তু একজন মহান চিকিৎসক বলেন, তা করা নিষ্প্রয়োজন । আমেরিকার পেনসিলভেনিয়ার চিকিৎসক, ডা. ও’নিল কেন চেয়েছিলেন, অস্ত্রোপচারের এই পদ্ধতিতে আমূল পরিবর্তন আনতে । তাঁর একটি আঙুলে এক ধরনের সংক্রমণ হয়েছিল । কিন্তু তিনি কেবল সেই আঙুলটিতেই অ্যানাস্থিসিয়া করেন এবং নিজে নিজেই তাতে অস্ত্রোপচার করেন । আবার 1921 সালের 15 ফেব্রুয়ারি তিনি নিজের পেটে লোকাল অ্যানাস্থেসিয়া করেন ৷এরপর নিজেই সফলভাবে অ্যাপেনডেকটমির অস্ত্রোপচার করেন । তখন তাঁর বয়স ছিল 60 বছর । 10 বছর পর তিনি নিজের উপর তৃতীয়বার অস্ত্রোপচার করেন ৷ তারপর 36 ঘণ্টার মধ্যেই কাজে যোগ দেন । তাঁর এই সব অ্যাডভেঞ্চার, লোকাল অ্যানাস্থিসিয়ার প্রক্রিয়াকে গোটা পৃথিবীজুড়ে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিল ।

পুনরুজ্জীবিত করার চেষ্টায় বিজ্ঞানী -

24 সালে আলেকজান্ডারের মনে হয়, নিজের উপরই পরীক্ষা করে দেখবেন তিনি । এরপর একজন তরুণের দেহ থেকে সংগ্রহ করা রক্ত তিনি নিজের দেহে ‘ট্রান্সফিউজ’ করেন ৷ কিন্তু শেষপর্যন্ত বাঁচতে পারেননি তিনি ৷ পরে জানা গিয়েছিল, তাঁর মৃত্যুর কারণ ছিল, যার রক্ত তিনি নিজের দেহে সঞ্চালন করেছিলেন, সেই ‘ব্লাড ডোনার’ আক্রান্ত ছিলেন ম্যালেরিয়া এবং যক্ষা রোগে ।

সেই বিজ্ঞানী যিনি ব্যাকটেরিয়া পান করেছিলেন -

জার্মান বৈজ্ঞানিক রবার্ট কচ আবিষ্কার করেছিলেন যে ভিব্রিয়ো কলেরি নামক ব্যাকটেরিয়া ৷ তাই আসলে কলেরা সংক্রমণের মূল কারণ । বাভারিয়ান রসায়নবিদ ম্যাক্স জোসেফ ভন পেটেনকোফার তাঁকে ভুল প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন ৷ এর জন্য একটি পরীক্ষা করেন তিনি । রবার্ট কচের সামনেই ভিব্রিও কলেরি ব্যাকটেরিয়া ফলের রসের সঙ্গে মিশিয়ে পান করেন । এরপর তাঁর শরীরেও কলেরার উপসর্গ দেখা যায় ৷ এরপর তাঁকে হাসপাতালে ভরতি করা হয় । তবে, এক সপ্তাহ পরে তিনি সুস্থ হয়ে উঠেছিলেন ।

আলসার, ক্যানসার নির্ণয় করেছিলেন যাঁরা -

অস্ট্রেলিয় চিকিৎসাবিদ বেরি মার্শাল রয়্যাল পার্থ হাসপাতালে কাজ করতেন । তাঁর সহকর্মী রবিন ওয়ারেনের সঙ্গে মিলে তিনি 1984 সালে ঘোষণা করেন , হেলিকোব্যাক্টর পাইলরি ব্যাকটেরিয়া পেটের আলসার এবং ক্যানসারের জন্য দায়ী । যদিও অন্যান্য বৈজ্ঞানিক এবং চিকিৎসকরা এই সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিলেন ৷ কারণ তাঁরা বিশ্বাস করতেন পেটে যে সব রাসায়নিক নিঃসৃত হয়, তা ব্যাকটেরিয়াকে বেঁচে থাকতে দেয় না । বেরি মার্শাল তখন ওই ব্যাকটেরিয়া মেশানো ফলের রস পান করেন । কিছুদিনের মধ্যেই তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন । পরীক্ষা করে দেখা যায়, তাঁর পেটে ব্যাকটেরিয়া বাস করতে শুরু হওয়ায় আলসার তৈরি হয়েছে । অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল ওষুধ খেয়ে বেরি পরে সুস্থ হয়ে ওঠেন । এই পরীক্ষার মাধ্যমে তিনি প্রমাণ করেন, তাঁর পেটে যে ব্যাকটেরিয়া ছিল, তাই পেটের আলসার ও ক্যানসারের জন্য দায়ী । ওয়ারেন এবং বেরিকে 2005 সালে তাঁদের এই আবিষ্কারের স্বীকৃতি হিসাবে নোবেল সম্মান দিয়ে পুরস্কৃত করা হয় তাঁদের ।

Last Updated : Apr 27, 2020, 8:52 AM IST

For All Latest Updates

TAGGED:

Y banerjee

ABOUT THE AUTHOR

...view details