হায়দরাবাদ, 5 জুন : "আমার ছেলে গত কয়েক দিন ধরে বিশেষ কোনও কিছু খাচ্ছে এবং প্রতিদিন 10 ঘণ্টারও বেশি ঘুমোচ্ছে । বিষয়টা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে ও কিছু না জানার ভান করে । ওর এই রকম অভ্যাস কোনও দিনই ছিল না।"- রাচাকোন্দা স্পেশাল ব্র্যাঞ্চে গিয়ে এমনই অভিযোগ করেন এক কিশোরের বাবা ।
অন্য একটি ঘটনায়, হাইস্কুলে পড়া মেয়ের ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে হঠাৎ করেই চোখ চলে গিয়েছিল মায়ের । যা দেখে রীতিমতো আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি । দেখেন, মেয়ে ইনস্টাগ্রামে অচেনা লোকেদের সঙ্গে গল্প করছে । তিনি জানতে পারেন, তাঁর মেয়ে গাঁজার নেশায় আসক্ত । মেয়েকে এই নিয়ে প্রশ্ন করলে সে খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয় ।
আর একটি ঘটনায়, লকডাউনের প্রথম দিকে একেবারেই স্বাভাবিক ছিল 18 বছরের কিশোর । কিন্তু দিন যত এগোতে থাকল, ততই পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করতে শুরু করে সে । যখন তার এই ব্যবহারের কারণ জানতে চেয়ে তার মা প্রশ্ন করেন তখন পরিবারের সদস্যদের সামনে ভেঙে পড়ে ওই কিশোর । স্বীকার করে যে সে গাঁজায় আসক্ত ।
একটি বা দু’টি ঘটনা নয়, লকডাউনের সৌজন্যে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যবহার লক্ষ্য করেছেন বাবা-মায়েরা । অভিভাবকরা বিশ্বাস করতেন তাঁদের ছেলে-মেয়েরা ভুল কিছু করতেই পারে না । কিন্তু ভুল প্রমাণিত হয়েছেন তাঁরা । সন্তানদের অন্যায় কাজের সম্পর্কে জানতে পেরে উদ্বিগ্ন অভিভাবকেরা । যেহেতু লকডাউনের জেরে সবাই ঘরবন্দী থাকতে বাধ্য হয়েছেন সেহেতু অভিভাবকরা তাঁদের সন্তানদের ভালো ও খারাপ দিকগুলির সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন । সন্তানদের এই খারাপ ব্যবহারের জন্য বেশির ভাগ অভিভাবকই লকডাউনকে দায়ি করেছেন । অনেকেই শরণাপন্ন হয়েছেন মনোবিদদের ।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সব পরিবর্তন তথা ব্যবহার পালটে যাওয়ার মতো ঘটনা খুবই সাধারণ । বিশেষত, 17 থেকে 21 বছর বয়সিদের ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিবর্তন বেশি লক্ষণীয় । বিশেষজ্ঞরা মনে করেন সন্তানদের মানসিক সমস্যার সমাধানের জন্য লকডাউনই অভিভাবকদের আদর্শ সময় ।
যদিও লকডাউনের প্রথম এক সপ্তাহ পর্যন্ত বাচ্চাদের মধ্যে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন লক্ষ্য় করা যায়নি । কিন্তু দিন যত পেরোতে থাকে, সমস্যা বাড়তে থাকে । যে সমস্ত কিশোর-কিশোরী সিগারেট ও গাঁজায় আসক্ত ছিল, তারা আর কোনও উপায় না দেখে বাড়িতেই নেশা করা শুরু করে । যে সমস্ত কিশোর-কিশোরী পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত, তারা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করা শুরু করে । তাদের প্রধান অভিযোগ ছিল, ব্যক্তিগত পরিসর নিয়ে । দেখা গিয়েছে, লকডাউনের জেরে মাত্র 20 শতাংশ কিশোর-কিশোরী প্রথম বারের জন্য মাদক বা পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়েছে । বাকি 80 শতাংশের ক্ষেত্রে এই অভ্যাস আগে থেকেই ছিল ।
মনোবিদ কল্যাণ চক্রবর্তীর মতে, এই সময়টাই সেই সব অল্পবয়সিদের সঠিক পথে ফেরানোর জন্য আদর্শ । সন্তানদের সঙ্গে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অভিভাবকদের যথেষ্ট সতর্ক হতে হবে। বেশি জোর করলে হিতে বিপরীত হতে পারে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি । তিনি জানান, কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে চরিত্রগত পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক । তবে বিষয়টি যদি হাতের বাইরে বেরিয়ে যায় তখন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই উচিত ।
বিশেষজ্ঞদের মতে, আজকের পৃথিবীতে নিজেদের ব্যক্তিগত ও পেশাগত সমস্যা নিয়ে মানুষ এতটাই ব্যস্ত থাকেন যে, তাঁদের সন্তানদের ভালো বা খারাপে সে ভাবে নজর দিতে পারেন না । এর সঙ্গে যুক্ত হয় খারাপ প্রভাব ও মারাত্মক চাপ যা তাদের বিক্ষিপ্ত মনকে আরও দোলাচলে ফেলে দেয়। অভিভাবকদের অনুপস্থিতিতে বহু কিশোর বাড়িতে একা থাকতে অভ্যস্ত। তাই এখন অভিভাবকরা লকডাউনে সন্তানদের সঙ্গে বেশি করে সময় কাটাতে চাইলেও তারা স্মার্টফোন ও গ্যাজেট নিয়েই বেশি ব্যস্ত ।