পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে মন্দির, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বিকল্প জমি : সুপ্রিম কোর্ট - অযোধ্যা মামলা

শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, বিতর্কিত 2.77 একর জমিতে তৈরি হবে রামমন্দির ৷ জমির ভিতর ও বাইরের চত্বরের মালিকানা থাকবে ট্রাস্টের হাতে ৷ কিন্তু বিতর্কিত জমির মালিকানা থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে

ছবি

By

Published : Nov 9, 2019, 10:42 AM IST

Updated : Nov 9, 2019, 8:29 PM IST

দিল্লি, 9 নভেম্বর : 490 বছরের বিতর্কের অবসান । আজ এক ঐতিহাসিক রায়ে এই বিতর্কের সমাধান করার চেষ্টা করল সুপ্রিম কোর্ট । শীর্ষ আদালত রায় দিয়েছে অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে মন্দির হবে । আর বিকল্প হিসেবে মসজিদ তৈরির জন্য পাঁচ একর জমি পাবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড ।

বিতর্ক শুরু হয়েছিল মুঘল আমলে । সম্রাট বাবরের নির্দেশে অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন তাঁর সেনাপতি মীর বাকি । পরবর্তীতে মহন্ত রঘুবীর দাস ফৈজাবাদ জেলা আদালতে মামলা করে মসজিদ লাগোয়া জমিতে রামমন্দির নির্মাণের আবেদন জানান । তখন দেশে ব্রিটিশ শাসন চলছে । মহন্তের সেই আবেদন খারিজ করে দিয়েছিল ব্রিটিশ আদালত । বিতর্ক জোরদার গত শতাব্দীর নয়ের দশকে । অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতে রামমন্দির নির্মাণ নিয়ে আন্দোলন জোরদার হয় । 1992 সালের 6 ডিসেম্বর বাবরি মসজিদ ভেঙে দেন করসেবকদের একাংশ ।

বাবরি মসজিদ ধ্বংসের সময় কেন্দ্রে ক্ষমতায় ছিল কংগ্রেস । প্রধানমন্ত্রী ছিলেন নরসিমা রাও । তাঁর সরকার বিতর্কিত 2.77 একর জমি-সহ সংলগ্ন 67 একর জমি অধিগ্রহণ করে । 2002 সালে এলাহাবাদ হাইকোর্টে বিতর্কিত জমির মালিকানা নিয়ে শুনানি শুরু হয় । 2003 সালের মার্চ একটি মামলার রায়ে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দেয় সরকারের অধিগৃহীত জমিতে কোনও ধর্মীয় কাজ করা যাবে না ।

এর পর বিতর্ক একাধিক বাঁকে মোড় নেয় । 2010 সালের 30 সেপ্টেম্বর বিতর্কিত জমির মালিকানা নিয়ে মামলার রায় দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট । বিরোধ মেটানোর জন্য 2.77 একর বিতর্কিত জমিকে মামলাকারী তিন পক্ষের মধ্যে ভাগ করার নির্দেশ দেয় আদালত । রামলালা বিরাজমান, সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড এবং নির্মোহী আখড়ার মধ্যে জমি ভাগ করে দেওয়ার নির্দেশ দেয় আদালত ।

কিন্তু, কোনও পক্ষই এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় মানতে চায়নি । তারা সুপ্রিম কোর্টে মামলা করে । হাইকোর্টের রায়ের উপর স্থগিতাদেশ জারি করে সুপ্রিম কোর্ট । 2017 - তে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি কে এস কেহর পরামর্শ দেন আদালতের বাইরে আলোচনা করে বিরোধ মীমাংসা করা হোক । কিন্তু তা হয়নি । তারপর সে বছরের অগাস্টে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র-র নেতৃত্বে তিন বিচারপতির বেঞ্চে মামলার শুনানি শুরু হয় । পরের বছর মামলাটির নতুন করে শুনানি শুরু হয় শীর্ষ আদালতের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বে পাঁচ বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে । এই বেঞ্চেই টানা 40 দিন মামলার শুনানি চলে । গত মাসে শুনানি শেষে রায় দান স্থগিত রাখে শীর্ষ আদালত । এরপর আজ রায় দেয় আদালত ।

শীর্ষ আদালত জানিয়ে দিল, বিতর্কিত 2.77 একর জমিতে তৈরি হবে রামমন্দির ৷ জমির ভিতর ও বাইরের চত্বরের মালিকানা থাকবে ট্রাস্টের হাতে ৷ কিন্তু বিতর্কিত জমির মালিকানা থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে ৷ বেঞ্চ নির্দেশ দেয়, তিন মাসের মধ্যে কেন্দ্রকে একটি ট্রাস্ট বোর্ড গঠন করতে হবে ৷ পাশাপাশি অযোধ্যাতেই বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে পাঁচ একর জমি দেবে কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার ৷

আজ রায় ঘোষণার সময় প্রধান বিচারপতি বলেন, "মুসলিম সম্প্রদায় বিতর্কিত জমির উপর নিজেদের মালিকানার দাবি প্রমাণ করতে পারেনি ৷ বিতর্কিত জমিকে সম্পূর্ণ একটি কাঠামো হিসেবে গণ্য করা হবে ৷ বাবরি মসজিদ ফাঁকা জমিতে তৈরি হয়নি ৷" সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ, "বিশ্বাসের উপর নির্ভর করে আইন হয় না । বিতর্কিত এলাকায় প্রার্থনা করতেন মুসলিমরা । সেই অধিকার কেড়ে নিতে পারি না ।"

পাঁচ বিচারপতির বেঞ্চ জানায়, মসজিদের নিচের স্থাপত্য ইসালামিক নয় ৷ পাশাপাশি, পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের রিপোর্টকে স্বীকৃতিও দেন বিচারপতিরা । পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চের সর্বসম্মত রায় যদিও সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে খুশি করতে পারেনি । তারা বিষয়টি নিয়ে আইনজীবীদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ করবে বলে জানিয়েছে । যদিও রায় নিয়ে কংগ্রেস, BJP সকলেই সতর্ক মন্তব্য করেছে । শান্তি বজায় রাখার আবেদন জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি । দেশের বিভিন্ন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতির দিকে নজর রাখার পরামর্শ দিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ।

উল্লেখ্য, 1989 সালের 9 নভেম্বর পতন হয়েছিল বার্লিন প্রাচীরের । আর তার 30 বছর পর 9 নভেম্বর ঘোষণা হল অযোধ্যা মামলার রায় । তারিখের এই মেলবন্ধনের কথা উল্লেখ করেই প্রধানমন্ত্রী আজ নতুন ভারতের স্বপ্ন ফেরি করলেন ।

Last Updated : Nov 9, 2019, 8:29 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details