পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

By

Published : May 7, 2020, 5:19 PM IST

Updated : May 7, 2020, 8:17 PM IST

ETV Bharat / bharat

কী এই স্টাইরিন, যা লিক করেই দুর্ঘটনা বিশাখাপটনমে

বিশাখাপটনমের ভেঙ্কটাপুরামের এল জি পলিমার কারখানার কেমিকেল প্ল্যান্টে গ্যাস লিকের জেরে ইতিমধ্যেই শিশু সহ 10 জনের মৃত্যু হয়েছে । অসুস্থ 5 হাজার মানুষ । স্টাইরিন লিক করেই এই দুর্ঘটনা বলে জানা গেছে ।

ছবি
ছবি

বিশাখাপটনম, 7 মে : 1984 সালের 3 ডিসেম্বর । সেদিন ভোরে ভোপালের ইউনিয়ন কার্বাইডের কারখানা থেকে বিষাক্ত মিথাইল আইসোসায়ানাইট ছড়িয়ে পড়ে । এর জেরে তিন হাজারেরও বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছিল । 35 বছর পেরিয়ে আজও যার অল্পবিস্তর প্রভাব রয়েছে । আজ বিশাখাপটনমের দুর্ঘটনা ফের সেই ভয়ানক স্মৃতিকে উসকে দিল । বিশাখাপটনমের ভেঙ্কটাপুরামের এল জি পলিমার কারখানার কেমিকেল প্ল্যান্টে গ্যাস লিকের জেরে ইতিমধ্যেই এক শিশু সহ 10 জনের মৃত্যু হয়েছে । অসুস্থ পাঁচ হাজার মানুষ । প্রায় 200 জন হাসপাতালে ভরতি । বলা হচ্ছে স্টাইরিন লিক করেই এই দুর্ঘটনা । আসলে কী এই স্টাইরিন ? দেখে নেওয়া যাক এর গঠন, উৎস ও মানুষের উপর এর ক্ষতিকারক প্রভাব ।

কী এই স্টাইরিন ?

এর রাসায়নিক নাম ইথাইলবেঞ্জিন । প্লাস্টিকজাত দ্রব্য তৈরি করতে সাহায্য করে এই রাসায়নিক পদার্থ । এটি কঠিন, গ্যাস বা দাহ্য তরলের আকারেও থাকতে পারে । যেমন পলিস্টাইরিন দাহ্য তরল হিসেবে কাজ করে । এটি বর্ণহীন তরলের আকারেও থাকতে পারে ।

কী কাজে লাগে স্টাইরিন ?

স্টাইরিন থেকে তৈরি হয় একাধিক নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রী । যেমন পাইপ, গাড়ির যন্ত্রাংশ, কার্পেটের পিছনের অংশ, ব্যাগ, ব্রিফকেস, সুটকেস, জুতো, কপি মেশিনের টোনার, নানা ধরনের খেলনা, পাখার ব্লেড, কাপ, বাসনপত্র, রাবার, প্লাস্টিক, ফাইবারগ্লাস, ল্যাটেক্স তৈরিতে কাজে লাগে স্টাইরিন ।

কোথায় উপস্থিত থাকতে পারে স্টাইরিন ?

এটি কঠিন ও তরল অবস্থায় ফল, শাকসবজি, মাংসের সঙ্গেও মিশে থাকতে পারে । কিন্তু এর পরিমাণ খুবই কম । প্লাস্টিক প্রস্তুতকারক কারখানার ধোঁয়া, গাড়ির ধোঁয়ায় থাকে স্টাইরিন । তা ছাড়া সিগারেটের ধোঁয়াতেও অল্প পরিমাণে স্টাইরিন থাকে ।

বিশাখাপটনমের গ্যাস দুর্ঘটনায় ইতিমধ্যেই অসুস্থ 5 হাজার মানুষ

কীভাবে লিক হতে পারে ?

প্লাস্টিক উৎপাদক কারখানার স্টোরেজ ট্যাঙ্কের ভিতরে তাপমাত্রা বৃদ্ধির জেরে সাধারণত পলিমারাইজ়েশন হয় । আর জেরে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে ।

স্টাইরিনের জেরে কী ক্ষতি হতে পারে ?

স্বল্প সময়ের জন্য এই গ্যাস ছড়িয়ে পড়লে শ্বাসকষ্ট, চোখে অস্বস্তি, মিউকাস মেমব্রেনে অসুবিধা এবং খাদ্যযন্ত্রের সমস্যা হতে পারে। যদি দীর্ঘ সময় ধরে এই গ্যাসের মধ্যে কেউ থাকে, তাহলে কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের উপর মারাত্মক প্রভাব পড়তে পারে। যার জেরে মাথাব্যথা, অবসাদ দেখা দিতে পারে । স্টাইরিনের জেরে লিউকোমিয়া বা লিম্ফোমিয়ার আশঙ্কা থাকে । অনেক ক্ষেত্রে শ্রবণ শক্তি হারানোর সম্ভাবনাও থাকে । ক্লান্তি, দুর্বলতার পাশাপাশি মনসংযোগে সমস্যা দেখা দিতে পারে । এছাড়াও লিভার, কিডনিতে সমস্যা হতে পারে ।

স্টাইরিনের পাশাপাশি অনেকে আবার PVC লিকের প্রসঙ্গ তুলে আনছেন । PVC-র পুরো নাম পলিভিনাইল ক্লোরাইড । 1926 সালে ওয়াল্ডো সাইমন নামে এক বিজ্ঞানী PVC থেকে প্লাস্টিক উৎপাদনের প্রক্রিয়া শুরু করেন । এই মুহূর্তে বিশ্বে তৃতীয় নির্ভরযোগ্য প্লাস্টিক উৎপাদক এটি । এর আগে রয়েছে পলি ইথালিন ও পলি প্রোপাইলিন । এই PVC-র জেরে মানবশরীরে নানা ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে ।

ইতিমধ্য়েই আজ স্টাইরিনের জেরে অনেকেই রাস্তায় অচৈতন্য হয়ে পড়েন । অনেকের চোখে জ্বালা করতে থাকে । কয়েকজনের শ্বাসকষ্টের সমস্যাও দেখা দেয় । শতাধিক মানুষ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন । কারখানা সংলগ্ন এলাকার বাসিন্দাদের দূরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে । আপাতত পুলিশ-প্রশাসন, দমকল ও স্বাস্থ্য বিভাগ সবাই একযোগে এই পরিস্থিতির মোকাবিলা করছে ।

Last Updated : May 7, 2020, 8:17 PM IST

ABOUT THE AUTHOR

...view details