দুর্গাপুর, ২ ফেব্রুয়ারি : কেটেছে ৩৩টা বছর। এর মাঝে শিল্প নগরী দুর্গাপুরে পা পড়েনি কোনও প্রধানমন্ত্রীর। প্রকল্প উদ্বোধন তো দূরের কথা কেউ প্রচারেও আসেননি। তিন দশক পর এলেন নরেন্দ্র মোদি। তাই, উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিলই। ছিল হুমকি, হুঁশিয়ারিও। তবে, সেসব তোয়াক্কা না করে সকাল থেকে কানায় কানায় পরিপূর্ণ নেহরু স্টেডিয়াম। মাঠের বাইরেও মানুষের ঢল। যা দেখে আবেগতাড়িত হয়ে উঠলেন স্বয়ং মোদি। বললেন, "এত মানুষ। আমি অভিভূত। এবার বুঝতে পারছি দিদি কেন আমায় ভয় পান। এত মানুষের আশীর্বাদ পাই যে।"
শেষবার জনসভা করতে এসেছিলেন ইন্দিরা গান্ধি। তাও ১৯৮২ সালে। বিধানসভা নির্বাচনের আগে দুর্গাপুরের গান্ধি মোড়ে জনসভা করেন তিনি। সেই সভা দেখেছিল ইন্দিরার জনভিত্তি। ঠিক চার বছর পর দুর্গাপুরের মাটিতে পা পড়েছিল রাজীব গান্ধির। কিন্তু, সভা করেননি। মাঝে কেটেছে ৩৩টা বছর। শিল্প নগরী আজ অনেকটাই স্তব্ধ। রাষ্ট্রায়ত্ত কারখানাগুলোর হাল নৈব নৈব চ। এর মাঝেই খবর এল মোদি আসছেন। আশার আলো দেখছিল দুর্গাপুর। তবে, শিল্প-কারখানা নিয়ে কোনও ঘোষণা না হওয়ায় আশাহত অনেকেই।
এই সংক্রান্ত আরও খবর :
ঠাকুরনগরে প্রধানমন্ত্রীর সভায় হুড়োহুড়ি, আহত ২৫
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে পাশের জেলা আসানসোলে এসেছিলেন মোদি। চেয়েছিলেন বাবুলকে (বাবুল সুপ্রিয়)। দুর্গাপুরে ঠিক সেই মাপের প্রচার করেননি। বরং শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তৃণমূলকে ঠেকাতেই ব্যস্ত ছিলেন। ঠিক যেমনটা মমতা করে থাকেন (পড়ুন BJP-কে আক্রমণ)। কথায় কথায় তুলে আনলেন CPI(M)-এর প্রসঙ্গও। তাদের অত্যাচার, কংগ্রেসের দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার কাহিনিও বললেন। সভা শেষে ফেরত যাওয়ার পথে BJP কর্মীরা জোশের সঙ্গে বলছিলেন, "সত্যি মোদি-মোদিই। আলাদা একটা জোশ এনে দিলেন।"
এই সংক্রান্ত আরও খবর :
"শনি ও রবিবার কাজ থাকে না, ওই ২ দিন মমতা প্রধানমন্ত্রী হবেন"
একটু আগেই ঠাকুরনগরে সভা করেছিলেন। সেখানে ভিড়ের জেরে হুড়োহুড়িতে আহত হন বেশ কয়েকজন। দুর্গাপুরে এসে এই পরিস্থিতিতে আর পড়তে চাননি মোদি। আগে থেকে সতর্ক ছিলেন BJP কার্যকর্তারাও। পরিবেশ পরিস্থিতি সুশৃঙ্খল রাখতে স্বেচ্ছাসেবকদের কাজে লাগানো হয়েছিল। ঠিক দুপুর ২টো ২০-তে মঞ্চে উঠলেন নরেন্দ্র মোদি। পরিষ্কার বাংলায় বললেন, "দুর্গাপুরের পরিশ্রমী মানুষকে আমার নমস্কার।"
এই সংক্রান্ত আরও খবর :
মোদির ভাষণে ঠাকুরবাড়ি নিয়ে উন্নয়নের ইঙ্গিত নেই: মমতাবালা ঠাকুর
এরপর মমতার বিরুদ্ধে একের পর এক তোপ। বললেন, "গণতন্ত্র স্তব্ধ করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে বাংলায়। এত মানুষের ভিড় দেখে বুঝতে পারছি, কেন দিদি আমায় ভয় পান। এত মানুষ আমায় আশীর্বাদ করে তো। তবে, একটা কথা বলে রাখি, বাংলায় পরিবর্তন আসবেই। মমতা ব্যানার্জিকে ছুড়ে ফেলবে বাংলার মানুষ।" তুলে ধরেন CPI(M) প্রসঙ্গও। বলেন, "আমি ভাবতাম, দিদি হয়তো CPI(M)-এর মতো শাসন করবেন না। উনি নিজে অত্যাচারিত হয়েছেন। গণতন্ত্রের গলা টিপে ধরার চেষ্টা কীভাবে চলত তা উনি ভালো বোঝেন। আমার ভাবনা ভুল ছিল। CPI(M)-এর হিংসা বাংলার মানুষকে থামাতে পারেনি। তৃণমূলের হিংসাও পারবে না। গণতন্ত্রের কথা না ভাবলে ক্ষমতা থেকে যেতেই হবে। মানুষ পরিবর্তন করবেই। তৃণমূলের বিনাশ হবেই।"