পুরী, 15 জুন : রথযাত্রা ৷ বছরের এই একটা দিন পুরী পরিণত হয় জনসমুদ্রে ৷ হাজার হাজার মানুষ ভিড় করেন জগন্নাথ দেবের মন্দিরের সামনে ৷ মনে শুধু একটাই কামনা থাকে এই ভক্তদের ৷ রথের দড়ি ধরে টান দেওয়া ৷ আর সেই মনস্কামনা পূরণ হলেই নিজেদের ভাগ্যবান মনে করেন ভক্তরা ৷
পুরীর রথের এই দড়ির কী এমন মাহাত্ম্য রয়েছে ? যার জন্য ওই একটা দিন দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভক্তরা ছুটে যান পুরীতে ৷
মন্দিরের সেবাইতদের মতে, পুরীর রথের ওই দড়ি স্পর্শ করতে পারলেই সমস্ত পাপ ধুয়ে যাবে ৷ দ্বিতীয় বার আর জন্ম নিতে হবে না ওই পাপের প্রায়শ্চিত করার জন্য ৷ আর এই কথাই মনে প্রাণে বিশ্বাস করেন ভক্তরা ৷ তাই নিজেদের পাপের খণ্ডন করতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই একটা দিন পুরীতে ভিড় করেন ভক্তরা ৷
রথযাত্রার দিনে তিনটি আলাদা আলাদা রথে সওয়ার হন জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রা ৷ এই তিনটি রথের আলাদা আলাদা বিশেষত্ব রয়েছে ৷ বিশেষত্ব রয়েছে সেই দড়িগুলিরও যেগুলির সাহায্যে এই তিনটি রথ টানা হয় ৷
বলভদ্র দেবের রথের নাম তালাধ্বজা ৷ এই রথকে যে দড়ি দিয়ে টানা হয় তার নাম বাসুকী নাগ ৷ দড়িটির দৈর্ঘ্য 220 ফুট ৷ আর 8 ইঞ্চি চওড়া হয় এই দড়ি ৷ এই দড়ি টানার পর ভক্ত যত বড়ই পাপী হোক তাঁকে আর এই পাপের প্রায়শ্চিত্তের জন্য পুনর্জন্ম নিতে হয় না ৷ এই রথের 16 টা চাকা থাকে ৷ এই চাকাগুলির উচ্চতা 6 ফুট 6 ইঞ্চি ৷ এই রথের দর্শনে 16 প্রকারের পাপ খণ্ডন হয় ৷
জগন্নাথ দেবের রথের নাম নন্দী ঘোষ ৷ 8 ইঞ্চি চওড়া এই রথের দড়ির দৈর্ঘ্যও 220 ফুট ৷ এই দড়িটির নাম শঙ্খচূড় ৷ জগন্নাথ দেবের রথে 14 টা চাকা থাকে ৷ আর এই চাকাগুলির উচ্চতা 7 ফুট ৷
পুরীর রথের দড়ি স্পর্শ করলেই হয় পাপ খণ্ডন সুভদ্রা দেবীর রথের নাম দর্পাদলন ৷ এই রথে 12 টা চাকা থাকে ৷ 12 টা রাশিফলের বিধি এই রথের দর্শনে খণ্ডন হয় ৷ এই চাকাগুলির উচ্চতা 6 ফুট ৷ এই রথের দড়ির দৈর্ঘ্যও 220 ফুট ও প্রস্থ 8 ইঞ্চি ৷ এই দড়ির নাম স্বর্ণচূড়া নাগ ৷ যে দড়ির স্পর্শে সমস্ত পাপ ধুয়ে যেতে পারে। কোথায়, কীভাবে তৈরি হয় সেই দড়ি ৷ কারাই বা তৈরি করে এই দড়িগুলি ?
পুরী থেকে 25 কিলোমিটার দূরে সাথি গোপাল নামে একটি গ্রামে তৈরি হয় রথের দড়িগুলি ৷ এই সাথি গোপাল গ্রামের একটি মন্দিরের ভিতর তৈরি হয় এই দড়িগুলি ৷ নারকেলের ফাইবার থেকে এই দড়িগুলি তৈরি হয় ৷ তবে, এবছর ওড়িশা কয়ের করপোরেশনের তরফে এই দড়িগুলি পাঠানো হয়েছে ৷
এই বছর 23 জুন রথযাত্রা ৷ প্রতিবছরের মতো এবারও পুরীতে রথযাত্রা পালিত হবে ৷ তবে, এবছর কোরোনার জেরে ভক্তদের উপস্থিতিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে ৷ শুধুমাত্র পুরীর মন্দিরের সেবাইতদের উপস্থিতিতেই পালিত হবে রথযাত্রা ৷