নয়া শিক্ষানীতিতে একাধিক নতুন উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ৷ যেমন বহুস্তরীয় দৃষ্টিভঙ্গীর উপর গুরুত্ব আরোপ, ডিগ্রি স্তরের চার বছরের পড়াশোনায় একের বেশি দফায় বেরিয়ে যাওয়ার সুযোগ, MPhil তুলে দেওয়া প্রভৃতি। কিন্তু এই শিক্ষা নীতিতে আইনি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব রয়েছে এবং এতে কোনও ইতিবাচক পদক্ষেপ করারও সংকেত নেই । এমনটাই মনে করেন হায়দরাবাদের NALSAR বিশ্ববিদ্যালয়েরড. ফয়জ়ান মুস্তাফা । ETV ভারতের কৃষ্ণানন্দ ত্রিপাঠীকে দেওয়া এক্সক্লুসিভ সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, নতুন শিক্ষা নীতি মার্কিন শিক্ষা ব্যবস্থার আদর্শে অনুপ্রাণিত কিন্তু এতে স্বশাসন নেই।
- নয়া শিক্ষানীতি 2020 নিয়ে প্রাথমিকভাবে আপনার মতামত কী ?
ওড়িশার আইন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছিলাম। তারও আগে আমি ছিলাম পূর্ব ভারতে স্বনামধন্য KIIT ল’স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা অধিকর্তা। সেই সময় বিজ্ঞান, কলা এবং সংগীতকে আলাদা আলাদা সত্ত্বা হিসেবে চিহ্নিত করা ব্যতিক্রমী বিষয় ছিল। যদিও এখনও এই দেশ সুংসহত শিক্ষাব্যবস্থার জন্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত নয় যার জন্য আমি দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে লড়ে যাচ্ছি। তবে পাঠ্যক্রম নিয়ে কাটাছেঁড়া হলেও এখনও মুখ্য উদ্দেশ্য জ্ঞানবণ্টনই। এই সুসংহত পদক্ষেপ গ্রহণে আমি খুশি এবং তার জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। কিন্তু এখনও মনে করি, জ্ঞানের যথাযথ সমন্বয় সাধন থেকে এই শিক্ষানীতি এক ধাপ দূরে আছে।
70 বছরেরও বেশি সময় পর গৃহীত এই শিক্ষানীতি দেশের তৃতীয়। এবং এতে স্পষ্ট, আগের সরকার শিক্ষাক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করেনি। যদিও এই নীতি আইন নয় এবং সরকারের তরফে বয়ানেও একে পরিকল্পনা হিসেবেই ব্যক্ত করা হয়েছে । আর নিজেদের কার্যকালের ঊর্ধ্বে উঠে দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্যপূরণের তাগিদেই মোদি সরকার এই পদক্ষেপ করেছে ।
- প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থায় যে বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্তিত্ব রয়েছে, এই শিক্ষানীতিতে তার অবলুপ্তি ঘটানো হয়েছে । এটা কি ভালো পদক্ষেপ ?
আমি মনে করি এটা নিয়ে একটু হলেও বিভ্রান্তি আছে। মোদি সরকার যখন গঠিত হয়, তখন তারা দেশের 150 টি "ডিমড" তথা "বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে বিবেচিত" উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে বলেছিল, এই "বিশ্ববিদ্যালয় হিসিবে বিবেচিত" শব্দবন্ধ তাদের চোখে ঠিক নয়। তাই তারা একটি অর্ডার পাশ করে যা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টও একমত হয়। আর এর মাধ্যমে দেশের সমস্ত "ডিমড ইউনিভার্সিটি"-র এই সংক্রান্ত লেখার কাগজ পুনরায় ছাপার কাজ শুরু হয়। দেশে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলার তিনটি উপায় আছে। কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয় কেন্দ্রীয় আইনে, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা হয় রাজ্যের আইনে। আর তিন নম্বর বিকল্প হল UGC-র সুপারিশে এগজ়িকিউটিভ অর্ডার মেনে বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা । UGC আইনের 3 নম্বর ধারা মেনে করা সুপারিশ অনুযায়ী, এই বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে "সেকশন থ্রি" তথা তৃতীয় শ্রেণির বিশ্ববিদ্যালয় বলা হয়। এই "ডিমড ইউনিভার্সিটি"-র আইনি পৃষ্ঠপোষকতা নেই ৷ তাই UPA সরকারের আমলে এগুলিকে "সেকশন থ্রি"-র অন্তর্গত বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে চিহ্নিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল । কিন্ত পরে সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলিকে "ডিমড" শ্রেণিতেই রাখা হয়। আমাদের বিভিন্ন ধরনের বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। আমি মনে করি না, সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়কে একই শ্রেণিভুক্ত করা যথাযথ হবে।
- এই শিক্ষানীতিতে কিছু কিছু কলেজকে স্বশাসিত ডিগ্রি অনুমোদনকারী প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এটা কি সঠিক পদক্ষেপ?
আমি মনে করি এই শিক্ষা নীতি অ্যামেরিকার শিক্ষা ব্যবস্থার দ্বারা গভীরভাবে অনুপ্রাণিত, যেখানে বিভিন্ন কলেজকে ডিগ্রি দান করার অনুমতি দেওয়া হয়েছে । কিছু ব্রিটিশ কলেজকেও এই অনুমতি দেওয়া হয়েছে । কাজেই এটা সদর্থক পদক্ষেপ । সমস্যা হল এই যে, আমাদের উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থা অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রিত অথচ তহবিলের জোগান স্বল্প । এই শিক্ষা নীতিতে সহজ অথচ কড়া নজরদারির কথা বলা হয়েছে । কিন্তু কোনও কিছু কড়া হলে তা সহজ হয় না । আপনি যদি সুদূরপ্রসারী নজরদারি আরোপ করতে না পেরে, সব কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারেন, তাহলে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য কোনও স্বশাসনের ব্যবস্থা থাকবে না । আমার মনে হয়, আমাদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির জন্য বিশ্বাসের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে এবং তাদের জন্য স্বশাসনের বন্দোবস্ত করতে হবে । আমরা যদি মার্কিন শিক্ষা ব্যবস্থা অনুসরণই করি তাহলে আমাদের তাদের মতো করে স্বশাসনের অধিকারও দিতে হবে।
- পড়ুয়াদের যে একাধিক স্তরে ড্রপ আউট করার সুবিধা দেওয়া হয়েছে তাকে কী চোখে দেখছেন ?