পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

ক্ষতির মুখে দক্ষিণের রাজ্যগুলি, সৌজন্য : বাজেট 2020 - বাজেট 2020

কেন্দ্র অর্থ কমিশন তৈরি করে জনগণের উপকারী নীতি নির্ধারণের জন্য৷ কিন্তু এবার সেই নীতিকেই নষ্ট করছে অর্থ কমিশন ৷ এটা আর্থিক মন্দার থেকেও ভয়ঙ্কর ৷

Budget 2020
বাজেট 2020

By

Published : Mar 15, 2020, 10:40 PM IST

অর্থ এবং কর্পোরেট বিষয়ক মন্ত্রী নির্মলা সীতারমন তাঁর সর্বশেষ বাজেট বক্তৃতায় জানিয়েছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকার 15তম অর্থ কমিশনের প্রস্তাবগুলি গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ৷ ওই প্রস্তাবের সংক্ষিপ্তসারের প্রথম আভাস মিলেছিল 2019 সালের ডিসেম্বরে ৷ 2011 সালের জনগণনা নিয়ে দক্ষিণের রাজ্যগুলি যে আশঙ্কা করেছিল, তা সত্যি হতে চলেছে ৷ 15তম অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান এন কে সিং জানিয়েছেন যে, তাঁদের লক্ষ্য এগিয়ে থাকা রাজ্যগুলির অগ্রগতি বজায় রাখা এবং যারা এগোতে পারছে না, তাদের অগ্রগতির জাতীয় গড় পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া ৷ কিন্তু সাম্প্রতিক বাজেটে যে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, তাতে দক্ষিণের রাজ্যগুলির ক্ষতিই হচ্ছে ৷ 15তম অর্থ কমিশনের দেওয়া নতুন কর ভাগাভাগির হিসাব অনুযায়ী, 20 টি রাজ্যের তহবিলের পরিমাণ বাড়বে ৷ আর 8 টি রাজ্যের তহবিল কাটছাঁট করা হবে ৷ ওই সৌভাগ্যশালী 20 টি রাজ্যের রাজস্ব বৃদ্ধির পরিমাণ হবে 33 হাজার কোটি টাকা ৷ অন্যদিকে ওই মন্দভাগ্য 8 রাজ্যের রাজস্বে হ্রাস পাবে 18 হাজার 389 কোটি টাকা ৷ তামিলনাড়ু সৌভাগ্যশালী 20 টি রাজ্যের মধ্যে জায়গা পেয়েছে ৷ কিন্তু দক্ষিণের বাকি রাজ্যগুলির সব মিলিয়ে 16 হাজার 640 কোটি টাকার ক্ষতি হবে ৷ যদি একটি আর্থিক বছরে ক্ষতির পরিমাণ এত বেশি হয়, তাহলে আগামী পাঁচ বছরে এই ক্ষতির পরিমাণ কল্পনাতীত হবে ৷ অন্যদিকে এন কে সিংয়ের নেতৃত্বাধীন অর্থ কমিশন রাজ্যগুলির রাজস্ব অংশীদারিত্ব কমিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে ৷ 14তম অর্থ কমিশনের প্রস্তাবে এর পরিমাণ ছিল 42 শতাংশ৷ বর্তমান অর্থ কমিশন এটাকে 41 শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে ৷ অর্থ কমিশন জানিয়েছে যে, জম্মু ও কাশ্মীর তাদের কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মর্যাদা হারিয়েছে এবং দু’টো রাজ্যে ভাগ হয়ে গিয়েছে ৷ তাই যে এক শতাংশ কমানো হচ্ছে, সেটা ওই দুই রাজ্যের নিরাপত্তা খাতে খরচ করা হোক ৷ যে সমস্ত রাজ্যগুলির রাজ্যস্ব আদায় কম, তারা উন্নয়নসূচকে পিছিয়ে পড়লে, তার দায় কে নেবে ?

2015 সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রধানমন্ত্রী মোদি দাবি করেছিলেন যে, তাদের উদ্দেশ্যে হল প্রতিটি রাজ্যকে স্বনির্ভর করে গড়ে তোলা, যাতে উন্নয়নমূলক প্রকল্পগুলি তারা নিজেরাই তৈরি করতে পারে এবং বাস্তবায়িত করতে পারে ৷ 14তম অর্থ কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী, NDA সরকার নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীদের লেখা প্রধানমন্ত্রীর চিঠি অপ্রসাঙ্গিক হয়ে পড়ে 15 তম অর্থ কমিশন গঠনের সঙ্গে সঙ্গেই ৷ 1976 সালে গঠিত সপ্তম অর্থ কমিশন থেকে 14 তম অর্থ কমিশন পর্যন্ত 1971 সালের জনগণনার ভিত্তিতে কর ভাগাভাগির বিষয়টি নির্ধারিত হত ৷ 14 তম অর্থ কমিশন যখন 1971 সালের জগণনাকে 17.5 শতাংশ গুরুত্ব এবং 2011 সালের জগণনাকে 10 শতাংশ গুরুত্ব দিয়েছিল তা নিয়ে কোনও আপত্তি ওঠেনি ৷ বর্তমানে 2011 সালের জনগণনাকে 15 শতাংশ, আয়ের ঘাটতিকে 45 শতাংশ, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থাকে 12.5 শতাংশ এবং 2.5 শতাংশ গুরুত্ব কর আদায়ের প্রচেষ্টার উপর দেওয়াতে অনেক রাজ্যের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে ৷ অন্ধ্রপ্রদেশে এর ফলে প্রচুর পরিমাণ রাজস্ব ক্ষতি হতে চলেছে ৷ এই বছর যার পরিমাণ 1521 কোটি টাকা ৷ তেলাঙ্গানায় এই ক্ষতির পরিমাণ 2400 কোটি টাকা ৷ জনগণনা নিয়ন্ত্রণে কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়ার ভিত্তিতে যদি অর্থ কমিশন রাজ্যগুলির অংশ কমিয়ে দেয়, আর কেন্দ্র যদি সেটাকেই রাজ্যগুলির কাজের মান হিসেবে নির্ধারণ করে এবং সেই মতো তহবিল বরাদ্দ করে, তাহলে এই প্রস্তাবমতো দক্ষিণের রাজ্যগুলির পরিস্থিতি আগামী পাঁচ বছরে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে ৷

15 তম অর্থ কমিশনের সুপারিশ কার্যকর করে কেন্দ্রীয় সরকার আগামী পাঁচ বছরে 175 লাখ কোটি টাকার রাজস্ব আদায় করতে পারবে বলে আশা করছে ৷ কিন্তু এখন তো মন্দার জেরে অর্থনীতিতে ক্ষতি হচ্ছে ৷ রাজ্যগুলির উপর শুল্ক আরোপ করে NDA একাধিপত্য কায়েম করতে চাইছে । রাজস্বকে কেন্দ্রের দিকে টেনে নিতে চাইছে ৷ ওই সুপারিশ অনুযায়ী, জাতীয় সুরক্ষার ক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলিকে সমান দায়িত্ব নিতে হবে ৷ কেন্দ্রীয় সরকার ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা নিধির জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ রেখে দেওয়ার কাজ শুরু করেছে এবং বাকি তহবিল রাজ্যগুলির উন্নয়নের দিকে ভাগ করে দেওয়া হচ্ছে ৷ যদি এটা হয়, তাহলে রাজ্যগুলিকে দেওয়া কেন্দ্রের অর্থের পরিমাণ তো কমবেই ৷ একইসঙ্গে রাজ্যগুলির রাজস্ব হ্রাসও হবে ৷ কৃষি মকুব, বিদ্যুৎ বিভাগের পুনর্গঠনের বোঝা এখনই রাজ্যগুলির মাথায় চেপে রয়েছে ৷ গত অক্টোবরে RBI-এর একটি রিপোর্ট বলছে, বিনিয়োগ সংক্রান্ত খরচ 2017-19-এ কমে গিয়েছে ৷ সাম্প্রতিকতম অর্থ রিপোর্ট বলছে যে, রাজ্যগুলির ঋণ সংগ্রহের পরিমাণ কেন্দ্রের থেকে অর্থের হস্তান্তরের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে ৷ এর ফলে করযোগ্য এবং করযোগ্য নয়, এমন রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি পড়ছে ৷ কেন্দ্র অর্থ কমিশন তৈরি করে জনগণের উপকারী নীতি নির্ধারণের জন্য৷ কিন্তু এবার সেই নীতিকেই নষ্ট করছে অর্থ কমিশন ৷ এটা আর্থিক মন্দার থেকেও ভয়ঙ্কর ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details