আমাদের বাস স্টপের কাছের খবরের কাগজ বিক্রির স্ট্যান্ডটা বেশির ভাগ সময়ই বিক্রেতাহীন অবস্থায় থাকে । গ্রাহকরা নিজেদের প্রয়োজন অনুযায়ী খবরের কাগজ নিয়ে এক কোণে রাখা ট্রে-তে টাকা রেখে চলে যান । বিষয়টি নিয়ে আমার কৌতূহল হয় । আমি দোকানদারকে জিজ্ঞাসা করায় তিনি বলেন, সারা দিন তিনি অন্য ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকেন । তিনি জলের জারের ব্যবসা করেন । এবং এর ফলে তিনি বেশির ভাগ সময় ওই স্ট্যান্ডে থাকতে পারেন না । কিন্তু এর ফলে কখনও তাঁকে খবরের কাগজের দাম নিয়ে ভাবতে হয়নি । সব সময় তিনি সঠিক মূল্যই পেয়েছেন ।
বিশ্বের যে কোনও প্রান্তের বেশির ভাগ মানুষই মোটামুটি ভাবে সৎ । কিন্তু খুব আশ্চর্যজনকভাবে সততার বিশেষ কিছু নিদর্শন মাঝেমধ্যে আমাদের সামনে উদয় হয় । উদাহরণ হিসাবে বলা যায়, আইজ়ল থেকে 65 কিলোমিটার দূরে সেলিংয়ের হাইওয়ের পাশে স্থানীয় মানুষ এক ধরনের ব্যবসা করেন । একেবারেই তৃণমূলস্তরে হওয়া এই ব্যবসার স্থানীয় নাম, ‘এনগা লোউ দর কালচার’ । এই ব্যবসার মূল ভিত্তি হল সততা । বিক্রেতাহীন ছোটো ছোটো বাঁশের ঘরে ঝোলানো থাকে সাইনবোর্ড । তাতে কয়লা বা চক দিয়ে লেখা থাকে সেখানে কী ধরনের সামগ্রী পাওয়া যায় এবং সেগুলির দাম কত । সে সব দোকানে সবজি থেকে ফল, ফুল তো বটেই, মাঝেমধ্যে মেলে বোতলে ভরা ফলের রস, ছোটো শুকনো মাছ এমনকী তাজা শামুকও । ক্রেতারা সে সব সামগ্রী নিয়ে বোর্ডে লেখা অনুযায়ী দাম দিয়ে দেন । যদি প্রয়োজন হয়, ক্রেতারা টাকা ভাঙিয়ে ফেরতও নিয়ে নিতে পারেন । সততার নীতি এই ক্ষেত্রে 100 শতাংশ সফল । ঝুম চাষের সময় বিক্রেতারা সবাই তাঁদের ছোটো খামার বা বাগানে চাষের কাজে ব্যস্ত থাকেন । তাঁরা ওই সময় বাড়ির কাউকেই দোকানে রাখতে পারেন না । মিজ়োরামের এই এনগা লোউ দর-এর খবর সম্প্রতি খবরে আসে যখন এইটি নিয়ে ‘মাই হোম ইন্ডিয়া’ নামে একটি NGO এবং মিজ়োরামের মুখ্যমন্ত্রী জোরামথাঙ্গা টুইট করেন । টুইটে লেখা হয়, নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার একটা ভালো উপায় ।
এই ধরনের দোকানি ছাড়া দোকানের উদাহরণ আরও বেশ কিছু রয়েছে । নাগা্যান্ডের লেশেমি গ্রামের বেশ কিছু কৃষক ও গ্রামবাসীর মধ্যে এর চল রয়েছে । বেঙ্গালুরুর ‘ট্রাস্ট শপ’ চেন গ্রাহকদের জন্য প্যাকেটে ইডলি দোসা ব্যাটার, গমের চাপাটি এবং মালাবার পরোটার মতো তাজা দক্ষিণ ভারতীয় খাবার ২৪x৭ সরবরাহ করে । তাদের আয় হয় কখনও 90 শতাংশ, আবার কখনও 100 শতাংশ ! এমনই একটি বিক্রেতাহীন দোকান তামিলনাড়ুর পাপানাসমে গান্ধি জয়ন্তির দিন গত 20 বছর ধরে চলে আসছে । পাপানাসমের রোটারি ক্লাবের উদ্যোগে প্রতি বছর ওই দিন সেখানকার বাস স্ট্যান্ডকে অস্থায়ী একটি দোকানে পরিণত করা হয় । সেই দোকানে গৃহস্থের টুকিটাকি জিনিস থেকে লেখাপড়ার সামগ্রী, খাবারদাবারও মেলে । প্রতিটা জিনিসের সঙ্গে দামের ট্যাগ লাগানো থাকে । সেখানেই একটি টেবিলে ক্যাশবাক্স রাখা থাকে । সেখানে টাকা দিয়ে খুচরো টাকা ফেরতও নেওয়া যায় । বিশেষভাবে সক্ষমদের নিয়ে কাজ করা জনশক্তি চ্যারিটেবল ট্রাস্ট নামে একটি NGO কেরলের সমুদ্র সৈকতের গ্রাম আঝিকোড়ের ভাঙ্কুলাথুভায়ালে এমনই একটি সেল্ফ সার্ভিস দোকান খোলে । সেখানে অবশ্য কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে CCTV ক্যামেরা লাগানো রয়েছে । চণ্ডীগড়ের ধানাসের গভর্নমেন্ট মডেল সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুলে অবশ্য কোনও CCTV লাগানো নেই । সেখানে রয়েছে শুধু একটি সাইনবোর্ড । তাতে লেখা রয়েছে, ‘নিজেকে নিজে সাহায্য করো এবং সৎভাবে মূল্য দাও’ । এই দোকানে নোটবুক, পেন, পেনসিল, প্রভৃতি পাওয়া যায় ।