ঔরঙ্গাবাদ, 8 মে : তখনও ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে শুকনো রুটিগুলো । আধ খাওয়া । কয়েকটা রক্তে ভেজা । তরকারির দাগ মুছেছে রক্তে ।
পড়ে রয়েছে ছিন্নভিন্ন দেহগুলি । কোথাও মাথা । কোথাও আবার মাথা কাটা শরীরটা । একটু দূরে জনা কয়েক কাতরাচ্ছেন । গলগল করে ঝরছে রক্ত । উঠে দাঁড়ানোর ক্ষমতাটুকুও নেই ।
মালগাড়ির চাকায় ছিন্নভিন্ন হয়ে গিয়েছে দেহগুলো । অকুস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন 16 জন পরিযায়ী শ্রমিক । মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন আরও পাঁচ জন । ঘটনাটি মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের । কারমাদ স্টেশনের কাছে । মুম্বই থেকে 360 কিলোমিটার দূরে ।
ঘড়ির কাঁটা তখন পাঁচটা বেজে পনেরো । অল্প স্বল্প ফুটছে দিনের আলো ।
লকডাউন । দীর্ঘদিন কাজ নেই । পকেটের টাকাও প্রায় শেষ । ভেবেছিলেন রেল লাইন ধরে সোজা হেঁটে গেলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে বাড়ি । আগের দিন গোটা সময়টা ধরে হাঁটা । সারাটা দিনের কান্তিতে শরীরটা আর সঙ্গ দিচ্ছিল না । অনেকে লাইনের উপরই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন ।
কিন্তু ঘুম থেকে আর ওঠা হল না ।
দুর্ঘটনার খবর নিশ্চিত করেছে ভারতীয় রেল । মালগাড়ির চালক খুব চেষ্টা করেছিলেন । কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রেন থামাতে পারেননি । কিছু বুঝে ওঠার আগেই সব শেষ ।
ওই 16 জন পরিযায়ী শ্রমিক মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা । বয়স সবারই বছর একুশের আশেপাশে ।
রেলমন্ত্রকের তরফে আজ সকালে একটি টুইটও করা হয়েছে । লেখা হয়েছে, 'আজ ভোরে পারভানি-মানমাদ শাখার বাদনাপুর ও কারমাদ স্টেশনের মাঝামাঝি একটি জায়গায় কিছু পরিযায়ী শ্রমিক রেল লাইনের উপর ঘুমোচ্ছিলেন । তাঁদের ঘুমোতে দেখে মালগাড়িটি থামানোর চেষ্টা করেছিলেন চালক । কিন্তু সম্ভব হয়নি । আহতদের ঔরঙ্গাবাদ সিভিল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে'।
মোট 21 জন পরিযায়ী শ্রমিক ছিলেন ওই দলে । বাকি কিছু শ্রমিক, যাঁরা রেললাইনের পাশে ঘুমোচ্ছিলেন, তাঁরা প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন বলে জানিয়েছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ।
দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রীও । লিখেছেন, 'মহারাষ্ট্রের ঔরঙ্গাবাদের রেল দুর্ঘটনায় গভীরভাবে শোকাহত । রেলমন্ত্রী পীযূষ গোয়েলের সঙ্গে কথা হয়েছে । তিনি বিষয়টির উপর নজর রাখছেন । যা যা সাহায্যের প্রয়োজন, তা করা হবে' ।
পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য দেশের একাধিক প্রান্ত থেকে বিশেষ শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্র । এরপরেও বহু পরিযায়ী শ্রমিক, পায়ে হেঁটে, সাইকেলে বাড়ি ফিরছেন দক্ষিণ-মধ্য রেলের জনসংযোগ আধিকারিক জানিয়েছেন, দুর্ঘটনাস্থানে RPF ও স্থানীয় পুলিশ আধিকারিকরা গিয়ে পৌঁছেছে ।