আত্মনির্ভরশীল ভারত গড়ার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘আত্মনির্ভর ভারত অভিযান’ শুরু করেন । ভারত ‘বিশ্বের ঔষধালয়’ হিসেবে পরিচিত হতে চাইছে । কিন্তু আমরা এখনও ‘ইন্টারমিডিয়েটস’ এবং সক্রিয় ওষুধ প্রস্তুতকারক উপাদানের (API) অন্তত ৮৪ শতাংশই বিদেশ থেকে আমদানি করছি । এর মধ্যে ৬০ শতাংশেরও বেশি উপাদান আসছে কেবল চিন থেকেই । দু’দশক আগেও ভারতেই API প্রস্তুত হত । কিন্তু যে দিন থেকে চিন এই উপাদানগুলির যথেচ্ছ হারে উৎপাদন শুরু করেছে, স্থানীয় প্রস্তুতকারকরা সস্তায় তা পাওয়ার জন্য আমদানি করতে শুরু করে । এমনকী, ওষুধের দোকানে সহজলভ্য অ্যাসপিরিন এবং ক্রোসিনের জন্যও দেশীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থাগুলি চিনের উপর নির্ভরশীল ।
একটি সংসদীয় রিপোর্ট অনুসারে, চিনের ফার্মা সেক্টরের উপর ভারতের নির্ভরশীলতার হার ২৩ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে । জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল যদিও ইতিমধ্যেই ওষুধ এবং ওষুধের কাঁচামালের জন্য চিনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতার জন্য সরকারকে সতর্ক করেছেন । সীমান্ত সমস্যার নিষ্পত্তি সক্রিয়ভাবে করার পর ভারত এবার চিনা পণ্যের উপরও লাগাম শক্ত করেছে । কিন্তু জীবনদায়ী API—র উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা খেলনার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করার মতো অত সহজ নয় ।
সংসদীয় একটি প্যানেল ইতিমধ্যেই এই সেক্টরে উদ্ভূত চ্যালেঞ্জগুলি পরীক্ষা করে দেখেছে এবং সামগ্রিক স্তরে কী করণীয়, তা নিয়ে সুপারিশ করে একটি রিপোর্ট জমা দিয়েছে । ওই রিপোর্টে API উৎপাদনের উপর আত্মনির্ভরতার গুরুত্বের কথা তুলে ধরা হয়েছে । তাছাড়াও ওই প্যানেলে কড়াভাবে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেনেরিক ওষুধ মজুদ করে রাখা এবং ওষুধের প্রকৃত অন্তঃশুল্ক হ্রাস করার উপরে । সরকারের উচিত দেশীয়ভাবে আরও বেশি ওষুধ প্রস্তুতির সম্ভাবনাকে পুনরুজ্জীবিত করে তোলা এবং আরও বেশি ওষুধ প্রস্তুতকারক কারখানা তৈরি করা ।
দু’বছর আগে দূষণের অভিযোগে বেজিংয়ের বেশ কিছু ফার্মে ধরপাকড় হয় । এবং সেই ঘটনায় ফাঁপড়ে পড়ে যায় ভারত কারণ এই দেশে ভিটামিন সি ক্যাপসুলের ঘাটতি দেখা যায় । কেন্দ্রীয় রাসায়নিক ও সার মন্ত্রকের তরফে ২০১৫ সালকে API—এর বছর হিসেবে অভিহিত করা হয়েছিল । এর কারণ ছিল API সেক্টরে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’—র লক্ষ্যকে আরও বেশি সুসংহত এবং জোরালোভাবে প্রচার করা এবং তার সুফল পাওয়া । ২০১৩ সালে তৎকালীন UPA সরকার VM Katoch-এর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছিল । এর উদ্দেশ্য ছিল প্রচুর পরিমাণের ওষুধ তৈরির গুরুত্ব অনুধাবন করা এবং চিনের উপর ভারতীয় ওষুধ প্রস্তুতকারক বাজারের অতিরিক্ত নির্ভরশীল হওয়ার কারণ সতর্কভাবে অন্বেষণ করা । কমিটি সব খতিয়ে দেখে সমষ্টিগতভাবে ওষুধ তৈরির ক্ষেত্র গড়ে তোলার প্রস্তাব দেয় এবং চিনের উপর ভারতের অতি—নির্ভরশীলতা হ্রাস করতে ছাড়ের প্যাকেজের খসড়া পেশ করে । তবে এই ছাড়াও সরকার যাতে দূষণ—প্রতিরোধী কারখানা গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করে, তা নিয়ে নজরদারি চালায় এবং আরও বেশি গবেষণার উপর জোর দেয়, সেই সুপারিশও সেখানে করা হয়েছিল । দুর্ভাগ্যবশত, ভারতই একমাত্র সেই দেশ, যেখানে গবেষণার জন্যও অনুমতি লাগে । ওষুধ শিল্প মহলের দাবি, অতীতে দেশে ছ’টি পেনিসিলিন জি উৎপাদনকারী কারখানা ছিল । কিন্তু সরকারি সহযোগিতার অভাবে, সবক’টিই চিনে চলে যায় । অতীতের এই অগৌরবময় ইতিহাস না ঘেঁটে কেন্দ্রীয় সরকার মার্চে দেশে প্রচুর পরিমাণে ওষুধ, চিকিৎসার সরঞ্জাম তৈরি এবং রপ্তানির হার বাড়ানোর জন্য ১৩ হাজার ৭৬০ কোটি টাকার প্যাকেজে অনুমোদন দিয়েছে । চিনের উপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা কমাতে কৌশলগত পদক্ষেপ করার পাশাপাশি আত্মনির্ভরশীল হওয়াও ভারতের জন্য বিচক্ষণ উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হবে ।