দেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী, পণ্ডিত নেহেরু বলেছিলেন যে আমাদের সামরিক প্রয়োজনে অন্য দেশের ওপর নির্ভরতা সাময়িক হওয়া উচিত, এবং ভবিষ্যতে আমাদের প্রতিরক্ষা উপকরণ নিজেদেরই তৈরি করতে হবে এবং আত্মনির্ভর হতে হবে । প্রতিরক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে ভারতের পরনির্ভরশীলতা বছরের পর বছর ধরে চলছে, সেই শাসকের দূরদর্শিতার অভাবের জন্য, যাঁরা ‘সাময়িক’ এবং ‘আত্মনির্ভর’ শব্দদুটির গুরুত্ব, এবং লাগাতার আমদানির ফলে দেশের নিরাপত্তায় বিপদের কথা উপলব্ধি করেননি। গত দুদশকে আটটি কমিটি এবং টাস্ক ফোর্স বহু রিপোর্ট দিয়েছে এবং প্রতিরক্ষা উপকরণ দেশেই তৈরি করে আত্মনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে বেশ কিছু সুপারিশও করেছে। কিন্তু সফলভাবে প্রয়োগের পরিকল্পনার অভাবে পরিস্থিতি যেখানে ছিল সেখানেই রয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রীর জারি করা একটি স্ট্র্যাটেজি পেপার, যার শিরোনাম ‘আত্মনির্ভর ভারত’(স্বাবলম্বন ভারতবাণী), সেখানে প্রতিরক্ষায় ভারতের আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে নীতিগত বক্তব্য রাখা হয়েছে। ডিফেন্স প্রোডাক্টস এক্সপোর্ট ডেভেলপমেন্ট পলিসি ফ্রেমওয়ার্ক, যার লক্ষ্য 2025 সালের মধ্যে দেশে টার্নওভার 75 লক্ষ কোটি টাকা এবং 35 লক্ষ কোটি টাকার রফতানি। দেশীয় প্রতিরক্ষা পণ্যের বর্তমান টার্নওভার 80 হাজার কোটি টাকা, এবং সরকারি সংস্থা এবং সরকারি অস্ত্র কারখানাগুলোর শেয়ার হল 63 হাজার কোটি। যদিও আমরা বলি যে বেসরকারি সংস্থাগুলোকে 2001 সাল থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম উৎপাদনে উৎসাহিত করতে লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের টার্নওভার 17 হাজার কোটি টাকাতেই সীমাবদ্ধ। প্রতিরক্ষামন্ত্রী ঘোষণা করেছেন যে দেশীয় উপকরণ কিনতে 52 হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে যাতে দেশের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম শিল্প চাঙ্গা হয়ে ওঠে । 101টি প্রতিরক্ষা সরঞ্জামের আমদানি বন্ধ করা হবে এবং আগামী 6 বছরে দেশীয় শিল্পকে 4 লক্ষ কোটি টাকার বরাত দেওয়া হবে।
আত্মনির্ভরতা – দেশের নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই প্রয়োজন
প্রতিরক্ষার যন্ত্রাংশের জন্য কয়েক দশক ধরে রাশিয়ার নির্ভরতা ভারত । এর ফলে বিভিন্ন সময়ে নানা সঙ্কটে পড়তে হয়েছে ভারতকে । সেই সঙ্কট কাটাতে ভারতের কাছে একমাত্র উপায় প্রতিরক্ষার ক্ষেত্রে আত্মনির্ভর হওয়া ।
আত্মনির্ভরতার লক্ষ্যে এধরণের উৎসাহ প্রয়োজনীয়!
ভারত, যাদের বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সশস্ত্র বাহিনী রয়েছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে তারাই অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জামের দ্বিতীয় বৃহত্তম আমদানিকারী । দশকের পর দশক ধরে প্রতিরক্ষা যন্ত্রাংশের জন্য রাশিয়ার ওপর নির্ভরতা ভারতে বিভিন্ন সময়ে সমস্যায় ফেলেছে । এটা এমন এক সময় যখন নতুন সহস্রাব্দের যুদ্ধে স্থলবাহিনীর গুরুত্ব কমছে এবং আকাশ, নৌ, মহাকাশ এবং সাইবার ক্ষেত্রে গবেষণা যে কোনও দেশের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে । প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আত্মনির্ভরতা মরিচিকাই হয়ে থাকবে, যদি বেসরকারি ক্ষেত্রকে উপেক্ষা করে যথারীতি 9টি সরকারি সংস্থা এবং 41টি অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরির ওপর নির্ভর করা হয়। ভারত বিভিন্ন প্রতিরক্ষা পণ্য কিনতে 1.3 লক্ষ কোটি টাকা ব্যয় করে, যার মধ্য 77 হাজার কোটি টাকা সরকারি ক্ষেত্রে যায়, আর বেসরকারি ক্ষেত্র, যেখানে সাড়ে তিন হাজার মাইক্রো ও ক্ষুদ্র শিল্প রয়েছে, পায় মাত্র 14 হাজার কোটি। কেন্দ্র প্রতিরক্ষায় প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ 74 শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়েছে, কিন্তু আত্মনির্ভরতার লক্ষ্য ছুঁতে পারবে তখনই, যদি বেসরকারি ক্ষেত্রের দিকেও সাহায্যের হাত বাড়ানো হয়, যারা এখন শুরুর ভারসাম্যহীনতা কাটিয়ে উঠতে পারেনি । বিশ্বের সেরা 100টি প্রতিরক্ষা সংস্থার মধ্যে হিন্দুস্তান এয়ারোনেটিক্স লিমিটেড 35 নম্বরে । কেন্দ্রের সমস্ত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত, যাতে ভারতীয় প্রতিরক্ষা নির্মাণ ক্ষেত্র টিকে থাকে, সময়ে সময়ে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি পায় এবং গবেষণা করে অস্ত্র তৈরি করে । প্রতিরক্ষায় আত্মনির্ভরতা তখনই আসতে পারে, যদি ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগকে স্বাধীনতা দেওয়া যায়, এবং এটাও দেখা হয়, যাতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগের মাধ্যমে দেশীয় নির্মাণ শিল্পগুলির শক্তি ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়।