পশ্চিমবঙ্গ

west bengal

ETV Bharat / bharat

সাকটেং : ভুটানের সঙ্গে কূটনৈতিক চুক্তি করার জন্য চিনের প্রয়াস

চিন-ভারত-নেপাল-ভুটান ৷ এই মূহূর্তে কূটনৈতিক আলোচনার অন্যতম বিষয় এই দেশগুলির মধ্যেকার সম্পর্ক ৷ কোন পথে এখন পরিস্থিতি ৷ আলোচনায় অরুণিম ভুইয়াঁ ৷

bhutan
bhutan

By

Published : Jul 24, 2020, 4:47 AM IST

দিল্লি, 24 জুলাই : চিনের নতুন সম্প্রসারণবাদী নকশা হল পূর্ব ভুটানের সাকটেং বণ্যপ্রাণ অভয়ারণ্যের উপর দাবি তৈরি করা৷ যা ভারতের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের সীমান্তের কাছে অবস্থিত ৷ এর মাধ্যমে থিম্পুর সঙ্গে বেজিং কূটনৈতিক চুক্তি করতে চাইছে ৷ আর হিমালয় পর্বতমালার এই দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক পরীক্ষা করতে চাইছে ৷ বিশেষজ্ঞরা অন্তত এমনটাই বিশ্বাস করছেন ৷ চিনের বিদেশমন্ত্রকের মুখপাত্র ওয়াং ওয়েনবিন মঙ্গলবার একটি সাংবাদিক বৈঠকে জানিয়েছেন যে দক্ষিণ এশিয়ার এই ছোট্ট দেশের সঙ্গে সীমান্তে যে বিতর্ক রয়েছে, তা নিয়ে চিন ওই দেশকে একটি প্যাকজের প্রস্তাব দিয়েছে ৷

ওয়াং বলেন, "চিনের অবস্থান ধারাবাহিক এবং স্পষ্ট৷ ভুটান ও চিনের মধ্যে থাকা সীমান্ত এখনও নির্ধারিত করা হয়নি ৷ মধ্য, পূর্ব এবং পশ্চিম অংশের সীমান্ত বিতর্কিত ৷" তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, "এই বিবাদ মেটাতে চিন একটি প্যাকেজকে সমাধানের আকারে প্রস্তাব করেছে ৷ এই বিবাদকে বহুপাক্ষিক মঞ্চে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে চিন বিরোধিতা করেছে ৷ এই বিষয় নিয়ে চিন সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলির সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে চলছে ৷"

গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটি (GEF)-এর মাধ্যমে সাকটেং বণ্যপ্রাণ অভয়ারণ্যকে উন্নত করার কাজের বিষয় নিয়েই আপত্তি জানিয়েছিল চিন ৷ তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় প্রতিক্রিয়া দিলেন ওয়াং ৷ GEF একটি তহবিল যা 183টি দেশের অংশীদারিত্বকে ঐক্যবদ্ধ করে আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান, নাগরিক সমাজের সংগঠন এবং বেসরকারি ক্ষেত্রকে নিয়ে ৷ এর উদ্দেশ্য বিশ্বব্যাপী পরিবেশ সংক্রান্ত বিষয়গুলিকে খতিয়ে দেখা ৷ পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের দীর্ঘস্থায়ী উন্নয়নমূলক পদক্ষেপকে সমর্থন করা৷ যে বিষয়টি পর্যবেক্ষকদের সবচেয়ে বেশি বিস্মিত করেছে, তা হল চিন এমন একটি এলাকার দাবি করছে, যা তাদের আন্তর্জাতিক সীমানা সংলগ্নই নয় ৷ আর যা অবস্থিত ভারত-ভুটান সীমান্তে৷

এটা এমন সময় হল যখন 3 হাজার 488 কিলোমিটার লম্বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখার (LAC) লাদাখ অঞ্চলে রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ের পর ভারত ও চিন উত্তেজনা প্রশমন নিয়ে আলোচনা চালাচ্ছিল ৷ গত মাসের ওই রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে দুই পক্ষের বেশ কয়েকজন জওয়ান হতাহত হয়েছে ৷ যা এশিয়ার দুই বড় শক্তির মধ্যে 45 বছর পর ঘটে ৷ সাকটেং বণ্যপ্রাণ অভয়ারণ্য ভারতের রাজ্য অরুণাচল প্রদেশের সীমান্ত বরাবর পূর্ব ভুটানে অবস্থিত ৷ যে জায়গাকে "দক্ষিণ তিব্বত"-এর অংশ বলে উল্লেখ করে চিন এখন সেখানকার দাবি জানাচ্ছে ৷ ভুটান ও চিনের মধ্যে কোনও সরকারি কূটনৈতিক চুক্তি নেই ৷ 1951 সালে বেজিং তিব্বত দখল করার পর ভুটান ও চিন পরষ্পরের প্রতিবেশী রাষ্ট্র হয় ৷ সীমান্ত বিবাদ মেটাতে দুই দেশের মধ্যে 1984 সাল থেকে 24 রাউন্ড আলোচনা হয়েছে ৷ অন্যদিকে ভারত ও ভুটানের মধ্যে শক্তিশালী কূটনৈতিক চুক্তি হয়েছে ৷ ভূটানের উন্নয়নে সবচে য়ে গুরুত্বপূর্ণ সহযোগী হল দিল্লি ৷ এছাড়াও ভারত ভুটানের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য সহযোগী ৷

2017 সালে ভারত-ভুটান-চিনের মধ্যে থাকা আন্তর্জাতিক সংযোগস্থান ডোকলাম অঞ্চলে ভারতীয় এবং চিনা সেনার মধ্যে টানা 73 দিনের অচলাবস্থার জেরে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল ৷ তার পর ভুটানে বেজিংয়ের তরফে এই সর্বশেষ দাবিটি করা হয়েছে ৷ চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি (PLA) সেখানে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করার পর এটা হল ৷ ডোকলামের ঘটনার পর সীমান্ত সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে চিনের সঙ্গে কোনও রকম আলোচনা করেনি ভুটান ৷ বরং তারা ভারতের পাশে দাঁড়ায় ৷ বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, চিন যে প্যাকেজের প্রস্তাব ভুটানের কাছে পাঠাছে, তার মাধ্যমে বেজিং থিম্পুকে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাধ্য করতে চাইছে ৷ আর এর পর তারা ডোকলাম অঞ্চলের দাবি জানাবে ৷

জওহরলাল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ়ের এমারিটাস অধ্যাপক ড. এস ডি মুনি ETV ভারত-কে জানিয়েছেন যে এই চুক্তির মাধ্যমে চিন সম্ভবত মধ্য ও পূর্ব ভুটানে তাদের দাবি থেকে সরে আসবে ৷ আর তার পর ডোকলামে তাদের অধিকারের দাবি জানাবে ৷ মুনি বলেন, "ভুটানের পশ্চিমে ডোকলামের দাবি জানাতে চায় চিন ৷ কারণ, চুম্বি উপত্যকা সংলগ্ন এলাকায় এর অবস্থানের কৌশলগত গুরুত্ব রয়েছে ৷" কেন এই বিষয়টি দিল্লির জন্য ভয়ের, তার কারণ চিনে উচ্চ হিমালয়ের দক্ষিণে ভুটান ও ভারতের রাজ্য সিকিমের মধ্যবর্তী অংশে অবস্থিত চুম্বি উপত্যকা ৷ যা রয়েছে ভারতের শিলিগুড়ি করিডরের দিকে ৷ যাকে বলা হয় "চিকেনস নেক" ৷ তা মাত্র পাঁচ কিলোমিটার অংশের মাধ্যমে দেশের বাকি অংশের সঙ্গে উত্তর পূর্ব ভারতকে সংযুক্ত করে ৷মুনি বলেন, "তাদের (চিনের) চিন্তাভাবনা হল তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য ভূটানের উপর চাপ সৃষ্টি করা ৷ আর দিল্লির সঙ্গে থিম্পুর সম্পর্ককে যাচাই করে দেখা ৷ ভূটান হল একমাত্র দক্ষিণ এশিয় দেশ যাদের সঙ্গে চিনের কোনও কূটনৈতিক চুক্তি নেই ৷"

একই সঙ্গে মুনি জানিয়েছেন যে ভূটানিরা চিনের সঙ্গে তাদের সীমান্ত বিবাদ মিটিয়ে নিতে চায় ৷ কিন্তু তারা ভারত ও চিনের বিবাদের মধ্যে পড়তে চায় না ৷ ডিপ্লোম্যাট রিস্ক ইন্টালিজেন্সে ডিরেক্টর অফ রিসার্চ অঙ্কিত পান্ডার কথাতেও মুনির পর্যবেক্ষণ পরিলক্ষিত হল ৷ তিনিও জানিয়েছেন যে চিনের উদ্দেশ্য হল ভূটানের সার্বভৌম অংশের মধ্য থেকে 10 শতাংশের দাবি করা ৷ এর কারণ হয়তো থিম্পুকে প্রাথমিক ভাবে বাধ্য করা অন্য এলাকাগুলি নিয়ে সহমতে আসতে ৷ যেমন ডোকলাম৷ যা বেজিংয়ের কাছে বেশ অনুকূল ৷

ভুটানের অংশে চিনের দাবি এই অঞ্চলে তাদের সম্প্রসারণবাদ নীতির সাম্প্রতিক সংযোজন ৷ এর মধ্যে রয়েছে ভারতের সঙ্গে সীমান্তে অধিকার দাবি, দক্ষিণ চিন সাগর এবং জাপানের সীমান্তের সঙ্গে থাকা পূর্ব চিন সাগরে সেনকাকু দ্বীপপুঞ্জের উপর দাবি করা ৷ যদিও বিশ্বের বড় শক্তিগুলি, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিনের এই পরিকল্পনাকে সমালোচনার চোখেই দেখছেন ৷ মুনির মতে, ভারত এটাই চাইবে যে ভুটান চিনের সঙ্গে কারও সাহায্য ছাড়াই সমস্যা মিটিয়ে নিক ৷

ABOUT THE AUTHOR

...view details