ভারত সবেমাত্র কোরোনা সম্পর্কিত লকডাউনের একটি 14দিনের সম্প্রসারণ ঘোষণা করেছে । এই অশুভ ভাইরাসকে কতটা বিচ্ছিন্ন এবং নিয়ন্ত্রণ করা গেল, তা নিয়ে একটি পর্যালোচনাও করা হবে । বিশেষজ্ঞরা আশা করছেন, যে নাগরিকদের সহযোগিতায় পর্যাপ্ত ‘হার্ড ইমিউনিটি’ অর্জন করা যাবে, যাতে বিধিনিষেধের মাত্রা কমিয়ে দেশে কিছুটা স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরানো যায় ।
পাশাপাশি, দেশের রাজনৈতিক সত্ত্বায় আরও একটা ক্ষতিকর ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে । সেটা হল একটা সাম্প্রদায়িক বিরোধ, যার একটা নির্দিষ্ট মুসলিম-বিরোধী লক্ষ্য রয়েছে । এই সামাজিক ভাইরাসের সংক্রমণের বিপদ অনুধাবন করে যদি সক্রিয়ভাবে কোয়ারান্টাইন না করা যায় – তাহলে খুবই সম্ভাবনা আছে যে তা ভবিষ্যতে ভারতের সার্বিক নিরাপত্তা এবং তার 130 কোটি নাগরিকের ভালো থাকাকে দুর্বল করে দেবে ।
এই মুসলিম-বিরোধী আবেগে অনুঘটকের কাজ করেছে এপ্রিলের মাঝামাঝি নয়াদিল্লিতে নিজ়ামুদ্দিনের তবলিঘি জমায়েত, যেখানে কোভিড প্রোটোকল মানা হয়নি এবং আক্রান্তের সংখ্যায় বৃদ্ধিও লক্ষ্য করা গেছে । এটা এড়ানো যেত, এবং আইনি ব্যবস্থাও নেওয়া হচ্ছে । কিন্তু এই বিষয়টিকে সংবাদমাধ্যমের একাংশ এমন ছলনাপূর্ণভাবে তুলে ধরেছে, যার বিকৃত সারমর্ম এই দাঁড়ায়, যে ভারতের বিরুদ্ধে একটা কোরোনা জেহাদ ঘোষণা করা হয়েছে । মুসলিম নাগরিক, বিশেষ করে রাস্তার ধারের ছোট বিক্রেতা এবং সব্জিব্যবসায়ীদের ওপর হামলা ও ভয় দেখানোর ঘটনা সামনে এসেছে । কয়েকটি ঘটনায় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিও (বিধায়ক) এই মুসলিম-বিরোধী জিগিরে ইন্ধন দেওয়ার ঘটনায় যুক্ত ছিলেন।
দেশে সাম্প্রদায়িক ভাবনার বৃদ্ধি হচ্ছিল, যার জেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং RSS প্রধান মোহন ভাগবত দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করেছেন । গত রবিবার (26 এপ্রিল) মোহন ভাগবত টিভিতে তাঁর বক্তব্যে সতর্ক করেন এই বলে, যখন দেশ কোরোনা সংক্রমণ আটকানোটাই বৃহত্তর জাতীয় চ্যালেঞ্জ, তখন কয়েকজন ব্যক্তির জন্য একটা সম্প্রদায়কে খারাপ চিহ্নিত করা মোটেও কাঙ্খিত নয় । ভাগবত বলেন, “যদি একজন রাগে বা ভয়ে কোনও ভুল করে, তার জন্য আমরা গোটা সম্প্রদায়কে দোষ দিয়ে দূরে ঠেলে দিতে পারি না ।”
এরও এক সপ্তাহ আগে (19 এপ্রিল) প্রধানমন্ত্রী মোদিও এগিয়ে আসেন এবং বিপর্যস্ত নাগরিকদের পরামর্শ দেন, যে এই সময় কোরোনার মোকাবিলা করতে সংহতি ও ভ্রাতৃত্বের প্রয়োজন । একটি টুইটে তিনি লেখেন, “আঘাত করার আগে কোভিড-19 কোনও জাতি, ধর্ম, বর্ণ, শ্রেণি, ভাষা, সীমান্ত দেখে না । আমাদের প্রতিক্রিয়া এবং আচরণে তাই সংহতি ও ভ্রাতৃত্বকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে । আমরা একসঙ্গেই এর মধ্যে রয়েছি ।” আরও জোর দিয়ে মোদি বলেন, যে ভারতের জন্য “ভবিষ্যৎ হতে চলেছে ঐক্য ও সহনশীলতার ।”
কিন্তু মোদি এবং ভাগবতের এই পরামর্শ BJP কর্মীদের ওপর কোনও লক্ষণীয় প্রভাব ফেলেছে বলে মনে হচ্ছে না এবং এপ্রিলের শেষের দিকে উত্তর প্রদেশের দুই বিধায়ককে দেখা গেছে স্থানীয়দের বলতে, যাতে তারা মুসলিম বিক্রেতাদের থেকে সব্জি না কেনেন । বসতি এলাকাগুলোতে তাঁদের ঢোকাও বন্ধ করে দেওয়া হয় । বলা হয়, যে এই বিক্রেতাদের কোভিডে সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, এবং সেক্ষেত্রে তাঁরা ভাইরাসকে ছড়িয়ে দিতে পারেন ।