দিল্লি, 23 জুলাই : বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও সোমবার লোকসভায় পাশ হয়ে গেল তথ্য জানার অধিকার আইন সংশোধনী বিল । এই আইনে সংশোধনী এনে RTI-র ক্ষমতা লঘু করে দেওয়া হবে বলে অভিযোগ তুলে আপত্তি জানায় বিরোধীরা ।
বিলটিকে “RTI নির্মূল বিল” বলে মন্তব্য করেছে তারা । এই বিলটিকে নিয়ে আরও চিন্তাভাবনার জন্য সিলেক্ট কমিটিতে পাঠানোরও দাবি তুলেছে বিরোধীবেঞ্চ । তবে রাজ্যসভায় বিলটি পাশে সরকার প্রয়োজনীয় সমর্থন পাবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে । কারণ, সেখানে সরকার সংখ্যালঘু । প্রস্তাবিত সংশোধনীর মধ্যে রয়েছে রাজ্য ও কেন্দ্রের তথ্য কমিশনারের বেতন ও মেয়াদ ।
তথ্যের অধিকার আইন বলছে, তথ্য কমিশনারদের কাজের মেয়াদ পাঁচ বছর ৷ বয়সের ঊর্ধ্বসীমা 65 । অর্থাৎ বয়স 65 না পেরোলে, অথবা পাঁচ বছরের মেয়াদ সম্পূর্ণ না হলে, তথ্য কমিশনারকে সরানো যাবে না । আইনে আরও বলা হয়েছে, কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের ক্ষেত্রে মুখ্য তথ্য কমিশনারের বেতন হবে মুখ্য নির্বাচনী কমিশনারের সমান, অন্য তথ্য কমিশনারদের বেতন নির্বাচনী কমিশনারদের সমান । রাজ্য তথ্য কমিশনের ক্ষেত্রে মুখ্য কমিশনারের বেতন হবে কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনারদের সমান । অন্য কমিশনারদের বেতন রাজ্যের মুখ্যসচিবের সমান । কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার যাতে অপছন্দের ব্যক্তিকে সরিয়ে দিতে বা বঞ্চিত করতে না পারে, যাতে কমিশনাররা নির্ভয়ে কাজ করতে পারেন, তার জন্যই আইনে এই ব্যবস্থা ।
বিরোধীরা বলছে, কেন্দ্র এই রক্ষাকবচ উপড়ে ফেলতে চায় । কারণ নয়া সংশোধনী প্রস্তাবে বলা হচ্ছে, তথ্য কমিশনাররা ‘নিয়োগের দিন থেকে পাঁচ বছর পদে বহাল থাকবেন’— আইনের এ অংশটি বদলে করা হবে, ‘তত দিন থাকবেন যত দিন কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট করবে (ফর সাচ টার্ম অ্যাজ় মে বি প্রেসক্রাইবড বাই দা সেন্ট্রাল গভর্নমেন্ট) ।’ একই ভাবে, তথ্য কমিশনারদের বেতন ও ভাতা নির্বাচন কমিশনারদের সমান করার আইনি নির্দেশ বাতিল করে প্রস্তাবে বলা হয়েছে, ‘‘মুখ্য তথ্য কমিশনার এবং অন্য তথ্য কমিশনারদের বেতন ও ভাতা, এবং তাঁদের কাজের অন্যান্য শর্ত হবে তা-ই যা কেন্দ্রীয় সরকার নির্দিষ্ট করে দেবে ।’’ কেবল কেন্দ্রীয় তথ্য কমিশনের সদস্যদের কাজের শর্তাবলি, মেয়াদ ও পারিশ্রমিক যে কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারণ করবে, তা-ই নয় । রাজ্য তথ্য কমিশনারদের ক্ষেত্রেও কেন্দ্রের সিদ্ধান্তই কাজ করবে ।
বর্তমানে তথ্য জানার অধিকার আইনে কোনও নির্দিষ্ট আইন নেই । RTI আন্দোলনকারীদের দাবি, কেন্দ্রের এই পদক্ষেপের ফলে, স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে, তাঁদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হবে । যদিও সরকারের তরফে বলা হচ্ছে, তথ্য কমিশনারের কোনও ক্ষমতা কমানো হচ্ছে না, শুধুমাত্র কতগুলি অনিয়ম ঠিক করা হচ্ছে । কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিং বলেন, “আমরা হস্তক্ষেপ করছি না, এবং প্রতিষ্ঠানের স্বশাসনে প্রভাব পড়ার মতো কিছু করা হবে না ৷ ”
এ বিষয়ে সমাজকর্মী অঞ্জলি ভরদ্বাজ বলেন, '' কমিশনারের বেতন ও কার্যকালের মেয়াদ কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে নির্ধারণ করার ক্ষমতা দিয়ে তাদের খাঁচার পাখিতে পরিণত করতে চাইছে, যাতে শেখানো বুলি আওড়াতে পারে ৷ '' অপর এক আন্দোলনকারী নিখিল দে'র মত, ''তথ্য কমিশনারের ক্ষমতা কমিয়ে, বেতন ঠিক করে, তাদের কেন্দ্রীয় সরকারের আজ্ঞাবহ করে তোলাটা ভয়াবহ ৷ আইনটার কোনও মানেই নেই ৷ ''