2019 সালের 14 ফেব্রুয়ারি, বিস্ফোরক-বোঝাই গাড়ি চালিয়ে আসা এক আত্মঘাতী জঙ্গি কাশ্মীরের কাছে পুলওয়ামায় সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্সের একটি কনভয়ের উপর আক্রমণ চালায়, এই ঘটনায় 40 জনের মৃত্যু হয় । এই হামলার পাল্টা জবাবে 26 ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বায়ু সেনা বালাকোটের জইশ-ই-মহম্মদের জঙ্গি শিবিরে আঘাত হানে । বালাকোট পাকিস্তানের খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে অবস্থিত এবং 1971 সালের পর এই প্রথম পাকিস্তানের মাটিতে বিমান হানা চালায় ভারত ।
পরের দিন, পাকিস্তানী বায়ু সেনা পাল্টা অভিযান চালায় কিন্তু তা কোনও আঘাত হানতে ব্যর্থ হয় । যদিও সেই বিমানযুদ্ধে একদিকে যেমন ভারত পাকিস্তানের একটি F-16 বিমানকে গুলি করে নামিয়েছিল, অন্যদিকে ভারতও তাদের একটি MIG-21 বিমান হারায় এবং পাকিস্তানের ভূখণ্ডে বিমান থেকে বেরোতে বাধ্য হওয়া সেই বিমানের চালককে পাকিস্তানী সেনা আটক করে ৷ পরবর্তী কয়েক ঘণ্টায় পরিস্থিতি এতটাই অশান্ত হয়ে উঠেছিল যে মনে হয়েছিল দ্বৈরথ অবশ্যম্ভাবী । কিন্তু আন্তর্জাতিক মহলের চাপের জেরে ভারত, পাকিস্তান দুইপক্ষই সেনা অভিযানের সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটে এবং আটক বিমানচালককে ভারতের হাতে ফিরিয়ে দেয় পাকিস্তান ।
ভারতীয় রাজনীতির চিরাচরিত ধারা মেনেই এরপর দেশের ক্ষমতাসীন এবং বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে বচসা শুরু হয়ে যায় বালাকোটে নিহত জঙ্গির প্রকৃত সংখ্যা নিয়ে । বিদেশি সংবাদমাধ্যমগুলিও এই বিতর্কে ঝাঁপিয়ে পড়ে এবং এর কিছু সময়ের মধে্যই বালাকোট অভিযানের স্যাটেলাইট ছবি ইন্টারনেটে ঘুরে বেড়াতে শুরু করে, যার সূত্র ধরে কেউ অভিযানের পক্ষে জোরদার সওয়াল করেন, কেউ আবার অভিযানের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন ।
এক বছর পর, বর্তমান সময়ে যখন বিতর্কের কুয়াশা অনেকটাই কেটে গিয়েছে, তখন বালাকোটে বায়ুসেনার অভিযান থেকে প্রাপ্তির ঝুলি কতটা ভরল বা কী শিক্ষা পেলাম, তা নিয়ে নিরপেক্ষ আলোচনার চেষ্টা করাই যেতে পারে ।
সংকটের মুহূর্তে, কোনও দেশের বিশ্বাসযোগ্যতা শুধুমাত্র তার সেনাবাহিনীর আকার দেখে বিচার করা যায় না, বরং তার সঙ্গে এটাও দেখা হয় যে, সেই ক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহারের সদিচ্ছা সেই দেশের কতখানি রয়েছে । দীর্ঘ সময় ধরে সন্ত্রাসবাদ নিয়ে ভারতের অবস্থান ছিল রক্ষণাত্মক, তার ফলে পাকিস্তান কাশ্মীরে নিত্য ছায়াযুদ্ধ চালিয়ে গেলেও শাস্তি পাওয়ার হাত থেকে বরাবর অব্যাহতি পেয়ে এসেছে । সেই চিত্র এখন অনেকটাই বদলে গিয়েছে ভারতীয় রাজনীতিতে বর্তমান শাসক দলের সেনাবাহিনীর কার্যক্ষমতাকে সম্পূর্ণভাবে ব্যবহারের সদিচ্ছা এবং সংকল্প, দুই–ই দেখানোর মাধ্যমে । তাই ভারতে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে মদত দিয়ে যাওয়ার ধারা আগামী দিনেও বজায় রাখলে পাকিস্তানকে তার ফল ভুগতে হবে ।
কোনও জঙ্গি হামলার জবাবে আকাশপথে আক্রমণ চালানোর ঘটনা ঘটেছিল এই প্রথম । একটি সাক্ষাৎকারে বায়ুসেনা প্রধান ভাদুরিয়া বলেছিলেন, ‘‘বালাকোটের বিমান অভিযান জাতীয় লক্ষ্যপূরণের জন্য আকাশপথের ব্যবহারকে নতুন পরিচতি দিয়েছে এবং উপমহাদেশে প্রচলিত প্রতিক্রিয়া এবং কার্যকলাপের গতানুগতিক ছবিকেও বদলে দিয়েছে ।” এ কথা অনস্বীকার্য, যে কোনও সন্ত্রাসী হানার জবাবেই আকাশপথে বায়ুসেনার পালটা অভিযান হবে না কিন্তু পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতে ভারতের জবাব দেওয়ার বিকল্প হিসাবে আকাশপথ ব্যবহারের সুযোগ আগের তুলনায় তাৎপর্যপূর্ণভাবে বেড়ে গিয়েছে ।