ভারত ও পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর রক্তাক্ত একটি দিন হিসেবে চিহ্নিত হয়ে রইল ২০ অক্টোবর। সেনা জওয়ান এবং গ্রামবাসী মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ৯। যদিও নিয়ন্ত্রণরেখার দু'পার থেকেই দাবি করা হয়েছে প্রতিপক্ষের অনেক বেশি ক্ষয়ক্ষতি করেছে তারা। পাকিস্তানি পোস্ট, জঙ্গিদের লঞ্চ প্যাড গুঁড়িয়ে দিয়েছে ভারতীয় সেনার গোলন্দাজ বাহিনী। জেনেরাল বিপিন রাওয়াত বলেছেন, ভারতের প্রত্যাঘাতে "ছয় থেকে দশজন পাকিস্তানি জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে এবং ধ্বংস করা হয়েছে তিনটি জঙ্গিঘাঁটি।" স্বভাবসিদ্ধ প্রত্যুত্তরে পাকিস্তান অবশ্য এই বিবৃতিকে নস্যাৎ করেছে । উলটে তাদের দাবি, নয়জন ভারতীয় জওয়ানকে মেরেছে তারা।
প্রতিবার সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটার সঙ্গে সঙ্গেই বাগযুদ্ধে অবতীর্ণ হয় ভারত ও পাকিস্তান। ধ্বংস হওয়া সেনাঘাঁটি এবং হতাশাগ্রস্ত সেনাজওয়ানদের ভুয়ো ভিডিও নিয়ে মাঠে নেমে পড়ে উভয়পারের টুইটার যোদ্ধারা। এই মুহূর্তে সত্যিকারের যে মারণ-দ্বন্দ্বে ফুঁসছে নিয়ন্ত্রণরেখা, এতে করে সেই বাস্তবতা অস্পষ্ট হওয়ার দিকে ঝুঁকে পড়ে।
প্রায় এক দশকেরও বেশি সময় ধরে গোলাগুলির পরে ২০০৩ সালে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর সংঘর্ষবিরতি চুক্তিতে সম্মত হয় ভারত ও পাকিস্তান। এর জেরে এর পরের দশবছর শান্তি আসে। সীমান্তে বসবাসকারী সাধারণ মানুষ স্বস্তির শ্বাস নেয়। আমি সাধারণ মানুষের কথা বলছি তার কারণ যে কোনও সংঘর্ষবিরতিতে সবথেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তারা এবং সবথেকে কম সুরক্ষিত থাকে। ২০১৮ সালের মে মাসে পাকিস্তান থেকে গোলাগুলি বর্ষণের জেরে আর্নিয়া সেক্টরে ৭৬ হাজারেরও বেশি গ্রামবাসীকে তাদের ভিটেমাটি ছাড়তে হয়েছিল। একই ছবি দেখা গিয়েছিল সীমাপারের এলাকাগুলিতে।
আমার মতে, ২০১৩ সালটাতেই সবকিছু পালটে যায়। তার কারণ কাশ্মীরে নিরাপত্তাজনিত পরিস্থিতির উন্নতিতে অস্বস্তিতে ছিল পাকিস্তানি সেনা। পাশাপাশি আর একটা কারণ নওয়াজ় শরিফের জয়, যাঁকে ভারতের প্রতি নরম মনোভাবাপন্ন হিসেবে দেখা গিয়েছিল। এই সময়ই সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের সংখ্যা বাড়িয়ে; হীরানগর, সাম্বা এবং জ্য়াংলোটে নিরাপত্তাবাহিনীর উপর হামলা চালিয়ে পরিস্থিতির ভয়াবহতাকে আরও ঘোরালো করে তোলে পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ কোনও শক্তি।
২০১৪ সালে এমন একটি সরকার কেন্দ্রে ক্ষমতায় এসেছে, যাদের মনোভাব পাকিস্তান মদতপুষ্ট সন্ত্রাসবাদের প্রতি দৃঢ় ও অনমনীয় ছিল। দু'দেশের মধ্যে উত্তেজনা আরও বেড়ে যায়। একইসঙ্গে লাফিয়ে বাড়ে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন। ২০১২ সালে যা ছিল প্রায় শ'খানেক, ২০১৮ সালে তা দাঁড়ায় দু'হাজারেরও বেশিতে। আর গতবছর সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘনের সংখ্যা যা ছিল, তা ছাপিয়ে গেছে ২০১৯ সালের প্রথম দশ মাসেই ।