COVID-19-এর ভয়ে আতঙ্কিত গোটা বিশ্ব ৷ এই পরিস্থিতিতে যোগ-অভ্যাস কতটা প্রয়োজনীয় ও কার্যকর সে বিষয়ে ETV ভারত সুখীভব'র তরফে কথা বলা হয় প্রখ্যাত চিকিৎসক ডাঃ সতীশ ডি পাঠকের সঙ্গে ৷ ডাঃ সতীশ ডি পাঠক বর্তমানে কৈবল্যধাম যোগা ইনস্টিটিউটের বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান বিভাগের সহকারি ডিরেক্টর
ডাঃ পাঠকের মতে যোগ শ্বাসক্রিয়া ঠিক রাখতে সাহায্য করে ৷ এছাড়া বাতাসের যাতাযাতের পথ সুগম করে, ফুসফুসের শক্তি বৃদ্ধি করে, হজম শক্তি ও রক্ত সংবহন প্রক্রিয়াকে উন্নত করে ৷ তিনি আরও জানান,
যোগ অভ্যাসের সঠিক সময় কী ?
সকাল 4.30 থেকে 6.30 যোগের আদর্শ সময় । যখন পাকস্থলী 4-5 ঘণ্টার জন্য খালি থাকে ও দৈহিক শক্তি পর্যাপ্ত থাকে তখন যোগ করলে সবথেকে বেশি লাভ পাওয়া যায় ৷ সন্ধ্যায় অফিস থেকে বাড়ি ফিরে কিছু খাওয়ার আগেও যোগ করা যেতে পারে ৷
যারা একেবারেই সময় পান না তাঁরা অনুলোম ভিলোম, গায়ত্রী ও ওমকার শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারেন ৷ শাস্ত্রে যেমন উল্লেখ আছে, ঠিক তেমনই "গায়ত্রী মন্ত্র" জপ করাও জরুরি । কারণ এই জপ সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ।
মানসিক ও শারীরিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখে যোগ-অভ্যাস কপালভাতি কতক্ষণ করা উচিত ? কাদের কপালাভাতি করা উচিত নয় ?
কপালভাতি প্রত্যেকে করতে পারে । তবে সামর্থ্য অনুযায়ী । 100 থেকে 120-র বেশি করা উচিত নয় ৷
যাদের বাইপাস সার্জারি হয়েছে, পেটে অস্ত্রোপচার হয়েছে, উচ্চ রক্তচাপ, হারনিয়া, পিঠের সমস্যা, হৃদযন্ত্রের সমস্যা আছে তাদের করা উচিত নয় । গর্ভবতী মহিলাদেরও কপালভাতি করা উচিত নয় ৷
মনে রাখবেন যোগ হল অনুশীলন, ব্যায়াম নয় ৷ নিজের নিজের সামর্থ অনুযায়ী দীর্ঘ সময় ধরে এটাকে তৈরি করতে হবে ৷ যোগ-কে ওয়ার্ক আউটের মতো ভাবলে হবে না ৷
যোগ / আসন করার কোনও বিশেষ ক্রম রয়েছে কী ?
কখনই বাড়িতে দৌড়ে এসে বা পরিশ্রমের পর হঠাৎ করে যোগাসন শুরু করবেন না ৷ আপনার শরীরকে শান্ত হতে দিন, পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নিন, তারপর পিঠের উপর শুয়ে 5 মিনিট আসন করতে পারেন ৷
নিয়মিত যোগ-অভ্যাস রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে যোগ এবং COVID : - " অনাক্রম্যতা বজায় রাখুন এবং আমাদের শ্বাসক্রিয়ার স্বাস্থ্য মজবুত করুন ।’’
কোরোনা ভাইরাস আমাদের নাকের মধ্য দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে ৷ আমাদের শ্বাস-গ্রহণ প্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে ৷ প্রাথমিক সংকেত হিসেবে নাক দিয়ে জল গড়াতে থাকে, নাকে কোনও গন্ধ পাওয়া যায় না, গলা খুসখুস করতে থাকে, কাশি হয় । আমাদের শ্বাস নিতেও সমস্যা হয় ৷ তারপর ফুসফুসে প্রবেশ করে নিমোনিয়া তৈরি করে ৷ তাই আমাদের নাক এবং শ্বাসযন্ত্রের ক্ষমতা আরও বাড়ানো দরকার ৷ নিয়মিত জল নেতি, ভাস্ত্রিকা, কপালভাতি ইত্যাদি করলে সুফল পাওয়া যাবে ৷ এই আসনগুলি নাক থেকে ফুসফুস পর্যন্ত সমস্ত অঙ্গের শক্তিবৃদ্ধি করে ৷ এভাবেই অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পায় ৷
এর পর আসা যাক মানসিকভাবে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধির দিকে । লকডাউন উঠে যাওয়ার পরই, আমরা বাইরে বেরোতে শুরু করব ৷ তখন আমাদের মনে ভয় বাসা বাঁধবে । মনে হবে, পাশের মানুষটা কোরোনায় আক্রান্ত নয় তো? এর ফলে চাপ বাড়বে ৷ এর থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে নিয়মিত ক্রিয়া যোগাসন করতে হবে ৷ এটা আপনার আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধিতে সাহায্য় করবে ও আপনার মনের ভয় কাটাবে ৷
যদি নিবিড়ভাবে দেখি, তাহলে বুঝতে পারব, আমরা প্রকৃতির নিয়মের বিরুদ্ধে যাচ্ছিলাম ৷ এবং এইভাবেই প্রকৃতি আমাদের প্রকৃতির রাস্তায় ফিরিয়ে আনছে ৷ এই লকডাউন আমাদের বাড়ির মধ্যে থাকতে বাধ্য করেছে ৷ বাড়িতে রান্না করতে বাধ্য করেছে ৷ পরিবারের সদস্যদের সময় দিতে বাধ্য করেছে, পারিবারিক গঠনটাকে মজবুত করেছে ৷ দ্বিতীয়ত, এটা আমাদের হবিগুলিকে নিয়ে মেতে থাকার সময় করে দিয়েছে ৷ যেগুলি করার সময় আমরা পেতাম না ৷
পশ্চিমী বিশ্বের লোকেরা করমর্দনের পরিবর্তে হাতজোড় করে নমস্তে করছে ৷ যদি বিশ্বের সঙ্গে তুলনা করি তাহলে দেখা যাবে, ভারতে কোরোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে ঠিকই, কিন্তু মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম ৷ কারণ, আমাদের অনাক্রম্যতা ভালো । আমরা আমাদের সংস্কার ও সংস্কৃতিকে মান্যতা দিই, সেকারণে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি ৷ তাই মনে রাখতে হবে, COVID -এর মতো ভাইরাসও যাতে আমাদের উপর কোনও প্রভাব ফেলতে না পারে, তার জন্য প্রকৃতির নিয়মকে মেনে চলা প্রয়োজন ৷