কর্তৃপক্ষের একাংশের নজরদারির অভাবে ওষুধের ব্যবসায় যুক্ত লোভী ডিলারদের কাছে কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে অন্যতম জীবনদায়ী ওষুধটি অর্থ উপার্জনের রাস্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ আপৎকালীন ব্যবহারের জন্য ওই ওষুধ ছাড়পত্র পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে ৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোরোনা আক্রান্ত এক রোগীর আত্মীয় ETV ভারতকে জানিয়েছেন যে, আমাদের হাসপাতাল থেকে রেমডেসিভিরের দু'টি বোতল জোগাড় করতে বলা হয় ৷ কিন্তু, দিল্লির দু'টি অনুমোদিত বিক্রেতার কাছে তা পাওয়া যায়নি ৷ বরং তা পাওয়া গিয়েছে কালোবাজারে ৷ আর এর দাম এতটাই বৃদ্ধি পেয়েছে যে মনে হচ্ছে যেন এটা সোনা ৷
এক কোরোনা আক্রান্ত আত্মীয়কে দিল্লির একটি শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি হাসপাতালে (দেশের রাজধানীতে অবস্থিত কোরোনা কেয়ার সেন্টার হিসেবে পরিচিত) চিকিৎসা করাতে গিয়ে এই ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়েছেন দিল্লির এক ব্যবসায়ী ৷ কোরোনা ভাইরাসের বিরুদ্ধে যে কঠিন লড়াই চলছে, তার মধ্যে এই ঘটনা কর্তৃপক্ষের কাছে অবশ্যই চোখ খুলে দেওয়ার মতো ৷
কোরোনা সংক্রমণের জেরে দেশে এখনও পর্যন্ত মারা গিয়েছেন 26 হাজার 273 জন এবং সারা দেশে সংক্রমিত হয়েছেন 10 লাখ 38 হাজার 716 জন ৷ বিশ্বে মৃত্যুর সংখ্যা 5 লাখ 47 হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে ৷ আর সংক্রমণ প্রায় 1.2 কোটিতে পৌঁছে গিয়েছে ৷
কোরোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে জরুরি প্রয়োজনে ব্যবহারের জন্য কেন্দ্রীয় সরকার গত মাসে কয়েকটি ওষুধ অনুমোদন করেছে ৷ সিপলা, হেটেরো এবং মিলান রেমডেসিভির উৎপাদন করার এবং বিক্রি করার ছাড়পত্র পেয়েছে গিলেড সায়েন্সের থেকে লাইসেন্স নিয়ে ৷ অন্যদিকে, গ্লেনমার্ক ফ্যাভিপিরাভির তৈরির ও বিক্রির অনুমতি পেয়েছে ৷ তারা এই ওষুধ ফ্যাবিফ্লু নামে বিক্রি করছে ৷
রেমডেসিভির ছাড়পত্র পাওয়ায় স্বস্তি পেয়েছেন রোগী ও তাঁদের আত্মীয়রা ৷ কারণ, এই ওষুধটিই এখনও পর্যন্ত SARS-Cov-2 ভাইরাসের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি কার্যকরী ভূমিকা নিয়েছে ৷ কিন্তু এর ছাড়পত্র লোভী ওষুধ ডিলারদের কাছে লাভ করার সুযোগও এনে দিয়েছে ৷
কোরোনা রোগীর এক আত্মীয় ETV ভারতকে বলেছেন, "আমাদের রোগী যে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন, সেই হাসপাতালের একজন চিকিৎসক এই মাসের শুরুতে ফোন করেন ৷ তিনি জানান যে রোগীকে রেমডেসিভির দেওয়া প্রয়োজন ৷ তাঁরা আমাদের জানান যে ইতিমধ্যেই তাঁরা রোগীকে ওই ওষুধ দিয়েছেন ৷ কিন্তু তাঁদের কাছে ওই ওষুধ ঠিক মতো সরবরাহ করা হচ্ছে না ৷ তাই তাঁরা চাইছেন, দু’টো বোতল ওষুধ যাতে বাইরে থেকে কিনে দেওয়া হয় ৷ কারণ, তাঁরা জোগাড় করতে পারছেন না ৷"
তিনি জানান, হাসপাতাল থেকে ফোন পাওয়ার পর ওষুধের খোঁজ শুরু হয় ৷ দিল্লির দু’টো অনুমোদিত ডিলারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ তাঁকে জানানো হয় যে রেমডেসিভির পেতে হলে রোগীর আধার কার্ড, চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন এবং কোরোনা পজ়িটিভ রিপোর্ট দিতে হবে ৷ প্রতিটি বোতলের দাম পড়বে চার হাজার 500 টাকা করে ৷
রোগীর ওই আত্মীয় নিজের ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার কথা বর্ণণা করতে গিয়ে বলেন, "দুর্ভাগ্যজনকভাবে ওই দুইটি জায়গা থেকে জানানো হয় যে, তাদের কাছে ওষুধ নেই ৷ তারা ওষুধের সরবরাহের সমস্যায় ভুগছে ৷" ওই ব্যক্তির আত্মীয় তখন হাসপাতালের ভেন্টিলেটরে চিকিৎসাধীন ৷ তিনি বলেন, "যেহেতু এটা জীবন ও মৃত্যুর বিষয় ছিল, তাই আমরা আরও চেষ্টা করতে শুরু করি ৷ আমরা অন্য কয়েকটি ওষুধ বিক্রেতাকে অন্য রাস্তা বের করার অনুরোধ করি ৷ আমাদের কথা ছড়িয়ে দেওয়ার পর কয়েকজন এগিয়ে আসেন ৷ আর জানায় যে এই ওষুধ কালো বাজারে পাওয়া যাবে ৷"
তিনি ETV ভারতকে বলেন, "আমাদের বলা হয় যে, ওই ওষুধের দাম বোতল প্রতি 15 হাজার টাকা করে পড়বে ৷ যেদিন আমরা এটা কিনব বলে ঠিক করলাম, সেদিন ওষুধের দাম চাওয়া হল 35 হাজার টাকা প্রতি বোতল ৷ এর ঠিক আগের দিন ওই ওষুধের দাম বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল 27 হাজার টাকা প্রতি বোতল ৷ কালো বাজারে রেমডেসিভির দাম যেভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে যে এটা সোনা ৷"
ওই আত্মীয় সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের নাম উল্লেখ করতে চাননি ৷ কারণ, তাঁর রোগী এখনও ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ৷ তিনি ঠিক করেন যে, এই বিষয়টি জানানোর জন্য সোশাল নেটওয়ার্কিং সাইট-লোকাল সার্কেলকে ব্যবহার করবেন বলে তিনি ETV ভারতকে জানান ৷ কারণ, নিজের পরিচয় গোপন করে সেখানে অভিজ্ঞতা জানানোর ব্যবস্থা রয়েছে ৷ তিনি আরও জানান যে, NCR অঞ্চলে জীবনদায়ী ওষুধের কালো বাজারির রমরমার বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ৷ যা যথেষ্ট উদ্বেগজনক ৷
ওই আত্মীয় বলেন, "আমরা দক্ষিণ দিল্লি, পূর্ব দিল্লি ও গুরুগ্রামে খুঁজে দেখি ৷ তিনটি জায়গার কালো বাজারেই এই ওষুধ পাওয়া যাচ্ছে ৷ অথচ দিল্লির দুই জন অনুমোদিত ডিলারের কাছে তা পাওয়া যাচ্ছে না ৷ এর থেকে তখন আমরা কালোবাজারির রমরমার বিষয়টি বুঝতে পারি ৷" দিল্লি-NCR-এ কালোবাজারির রমরমার বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, "ওষুধের ব্যবসায়ী আমাদের বলেন, অন্তত দুই ঘণ্টা আগে তাঁদের জানাতে হবে ৷ তাহলে তারা ওষুধ সরবরাহ করে দেবে ৷"